Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এত নির্মমতার পরেও বেপরোয়া চালক : প্রশাসন নির্বিকার

| প্রকাশের সময় : ২৪ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম


পল্টনে দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে বাস চালক নিহত। বিমানবন্দর এলাকায় মোটরসাইকেলকে ফেলে দিয়ে ফুটপাতে বাস। বাস চাপায় পা হারানো রোজিনার অবস্থা সঙ্কটাপন্ন
সাখাওয়াত হোসেন : বাস চাপায় কলেজছাত্রের মৃত্যু, মহিলার পা হারানো, শিশুর হাত হারানো বা নির্মমভাবে মৃত্যুর ঘটনার পরেও নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব হচ্ছে না সড়ক দুর্ঘটনা। প্রশাসনের পক্ষ্য থেকেও কঠোর কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না বেপরোয়া চালকদের বিরুদ্ধে। ফলে রাজধানীসহ সারাদেশে যানবাহন চালকদের বেপরোয়া গাড়ি চালানো থামছে না। প্রতিদিনই সড়ক দুর্ঘটনায় নির্মমভাবে প্রান হারাচ্ছেন মানুষ। নিঃস্ব হচ্ছে পরিবার। খোদ রাজধানীর পল্টন এলাকায় দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে মিজান কাজী নামে (৪২) এক বাসের চালক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে আটজন। গতকাল সোমবার ভোরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। আহতদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদিকে রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকায় একটি মোটরসাইকেলকে ফেলে দিয়ে ফুটপাতে উঠে যায় প্রজাপতি পরিবহনের একটি বাস। এতে মোটরসাইকেলের দুই আরোহী ও বাসের বেশ কয়েকজন যাত্রী আহত হয়েছেন। গতকাল সোমবার বিকাল পৌনে চারটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। মোহাম্মদপুরের বসিলা থেকে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত যাতায়াত করে প্রজাপতি পরিবহন। ঘটনার পরপরই প্রজাপতি বাসের চালক পালিয়ে যায়। পুলিশ বাসটি আটক করেছে।
নারায়নগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার মঈনুল হক দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, দেশে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে যানবাহন চালকদের প্রশিক্ষিত করে তুলতে হবে। তাদের রাস্তা ও গাড়ি চালানো সম্পর্কে বাস্তব অভিজ্ঞতার অনেক অভাব রয়েছে। গাড়ি চালকদের জবাবদিহিতার মধ্যে আনা সম্ভব না হলে সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন। পুলিশ সুপার মঈনুল হক আরো বলেন, ট্টাফিক আইন সময়োপযোগী করে তৈরি করতে হবে। পুরাতন ট্টাফিক আইন দিয়ে সড়ক ও মহাসড়কের নিয়ন্ত্রন করা ট্টাফিক পুলিশের জন্য সম্ভব নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ভোর সাড়ে ৪টার দিকে পল্টন মোড় এলাকায় যাত্রাবাড়ী-গাবতলী রুটের চলাচলকারী ৮নং পরিবহন ও সদরঘাট-মিরপুর রুটে চলাচলকারী গণপরিবহন শিখর বাসের মুখোমুখি ধাক্কায় এ ঘটনা ঘটে। গুরুত্বর আহত অবস্থায় আটজনকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নেয়া হলে কাজী মিজান নামে একজনকে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। নিহত মিজানের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর সদরের তারাপুর কান্দি এলাকায়। বাবার নাম মৃত গফুর কাজী। এ ঘটনায় আহতরা হলেন মো. সালাউদ্দিন (২০), মো. শাকিব (২০), রিফাত (২২), জয়নাল (৫০) বাবু (২১), সুদীত চন্দ্র (২৫), মরণ চাঁদ (২৬)।
ঢামেক ক্যাম্প পুলিশের ইনচার্জ এসআই বাচ্চু মিয়া দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, আহতদেরকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তাদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। নিহত মিজানের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে।
গতকাল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আহত সালাউদ্দিন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, রাজধানীসহ সারাদেশেই প্রতিদিন নির্মমভাবে বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে সাধারন মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। এর পরেও ওই বেপরোয়া চালকদের বিরুদ্ধে প্রশাসন বা সংশ্লিষ্ট্র কর্তৃপক্ষ কঠোর কোন ব্যবস্থা গ্রহন করছেন না। ফলে চালকদের মধ্যে কোন প্রভাব পড়ছে না। তারা আগের মতোই রাজপথে বেপরোয়া গাড়ি চালাচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন্। রাজধানীর বনানীতে বাসের চাপায় পা হারানো রোজিনা আক্তারের অবস্থার অবনতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় অর্থপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (পঙ্গু হাসপাতাল) চিকিৎসকরা। ওই হাসপাতালের পরিচালক গণি মোল্লা বলেন, ওর অবস্থা সঙ্কটাপন্ন। গত রোববার আমরা দ্বিতীয় অপারেশন শেষ করেছি। এ অবস্থায় আসলে কিছুই বলা যাচ্ছে না। রিকভারি রুমে রয়েছেছ। গত ২০ এপ্রিল শুক্রবার রাতে বনানীতে রাস্তা পার হওয়ার সময় বিআরটিসির একটি বাসের চাপায় তার পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। দুর্ঘটনার পর পরই পুলিশসহ অনেকে ছিল জানিয়ে রোজিনা বলেন, দুইবার আমার উপর দিয়ে চাকা চলে গেছে। আমি শুধু বলছিলাম, আমাকে একটু হসপিটালে নিয়ে যান। এরপর আর কিছু জানি না। অনেক মানুষকে বলছি আমাকে একটু হসপিটালে নিয়ে যেতে। অনেক মানুষকে বলছি। সার্জেন্টও ছিল। কিন্তু ধরে নাই।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ