Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রবাসীদের ভোটার করার ক্ষেত্রে দ্বৈত নাগরিকত্ব প্রধান সমস্যা : সিইসি

দ্বৈত নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র না দেওয়ার দাবি বিশিষ্টজনদের

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৯ এপ্রিল, ২০১৮, ১১:৫০ পিএম

দ্বৈত নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র না দেওয়া এবং তাদের ভোটাধিকারও না থাকার দাবি তুলেছেন বিশিষ্টজনরা। প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার করতে দ্বৈত নাগরিকত্বকে প্রধান সমস্যা হিসেবে দেখছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদেরকে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান ও ভোটাধিকার প্রয়োগ সংক্রান্ত সেমিনারে এই দাবি জানান তারা। নির্বাচন কমিশন আয়োজিত এ সেমিনারে সাবেক ও বর্তমান রাষ্ট্রদূতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নেন। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা। সেমিনারে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমান বলেন, দ্বৈত নাগরিকদের ভোট দেয়া সংবিধান অনুমতি দেয়নি। এজন্য এটা আলোচনা না করাই ভাল। প্রবাসীদের ভোট দেয়ার অধিকার, তাদের কীভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করা যায় সেটা আলোচনা করা দরকার। এ সময় পোস্টাল ভোট বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কতটুকু কার্যকর তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মশিউর। তিনি বলেন, এ পদ্ধতিতে কে ভোট দিয়েছে তা শনাক্তকরণ দুরূহ। পোস্টাল ভোট পদ্ধতিতে একজন প্রবাসী তার পছন্দমত যেকোনো জায়গা থেকে ভোট দিতে পারেন। আবেদন করলে ওই ঠিকানায় আগে থেকে ব্যালট পেপার সরবরাহ করা হয়। ভোট দেয়ার পর তা দেশে ডাকযোগে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এ পদ্ধতি প্রবাসীদের জন্য ২০০৮ সাল থেকে চালু আছে।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, প্রবাসীদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেন। সেমিনারে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারপারসন জি এম কাদের বলেন, দ্বৈত নাগরিকদের নির্বাচনে অংশ নিয়ে বাংলাদেশে পাবলিক অফিসের দায়িত্ব গ্রহণ করতে দেওয়া উচিত নয়। যারা পাবলিক অফিসের দায়িত্ব সামলাবেন তাদের শুধুমাত্র বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। তার বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেন সাবেক রাষ্ট্রদূত ওয়ালিউর রহমান বলেন, এর আগে দুই-একজন দ্বৈত নাগরিক মন্ত্রী হয়েছেন।এই বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে দেখা উচিত। আলোচনায় অংশ নিয়ে ইটালিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবদুস সোবহান শিকদার বলেন, প্রবাসী ও অভিবাসী (দ্বৈত নাগরিক) এক বিষয় নয়। ভোটাধিকার প্রবাসীরা পেতে পারেন। কারণ, তারা অন্য দেশের নাগরিক নন। তবে অভিবাসীরা দেশ ছাড়েন অন্য দেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার উদ্দেশ্যে। তারা যে দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন সেখানকার ভোটাধিকারসহ সব সুবিধাই ভোগ করেন। তবে, কে ভোটাধিকার পাবেন, সেটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এটা নিয়ে আরও আলোচনা হওয়া উচিত। আমি শুনেছি— যুক্তরাজ্যে থাকা বাংলাদেশিরা ভোটাধিকারের বিষয়ে সোচ্চার। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ মিশনের উপপ্রধান মাহবুব হাসান সালেহ বলেন, যারা বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করেছে তাদেরকে বাংলাদেশে ভোটাধিকার দেওয়া যায় না। সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ জানান, প্রবাসীদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার জন্য সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাস প্রস্তুত। তিনি বলেন, আমরা লাখ লাখ বাংলাদেশিকে মেশিন রিডেবল পাসপোর্টে দিয়েছি। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি আমরা সৌদি আরবে অবস্থিত বাংলাদেশিদের নির্বাচন কমিশনের সময় অনুযায়ী জাতীয় পরিচয়পত্র দিতে পারবো। উল্লেখ্য,প্রবাসীদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে। প্রকল্পটি সৌদি আরব দিয়ে শুরু হবে। তবে সৌদি আরব প্রবাসীদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। যে দেশে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংখ্যা কম সেখানে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন,এটি কোনও ছোট জায়গা, যেখানে বাংলাদেশি কম, সেখান শুরু করতে পারলে ভালো হয়। তাহলে আমরা সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে পারবো। এনআইডি (জাতীয় পরিচয় পত্র) উইং মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, প্রবাসীদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার জন্য কয়েকটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে জনবল ও যন্ত্রপাতি সংকট এবং বৈধ নাগরিক নিশ্চিতকরণ। সুপারিশমালায় তিনি বলেন, আমরা মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপ থেকে কাজটি শুরু করতে পারি। প্রবাসীদের ভোটাধিকার বিষয়ে তিনি বলেন, এটি আরেকটি চ্যালেঞ্জ। কারণ, বিদেশে প্রচুর বাংলাদেশি অবস্থান করছে। এছাড়া ভোটকেন্দ্রে নিরাপত্তা, রাজনৈতিক সহিংসতা থামানো ও বিপুল অর্থব্যয় অন্যতম চ্যালেঞ্জ।
সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা বলেন, তাদের এসব সুচিন্তিত পরামর্শ নিয়ে নির্বাচন কমিশন ভাববে। এছাড়াও আরপিও’র বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ধারা তুলে ধরে এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের অবস্থান তুলে ধরেন তিনি। সিইসি বলেন, বর্তমানে প্রক্সি ভোট ও পোস্টাল ভোটের নিয়ম আছে। এর মাধ্যমে প্রবাসীরা ভোট দিতে পারেন। আগামী নির্বাচনের আগে এসব পদ্ধতি নিয়ে প্রচার প্রচারণা হবে। বাংলাদেশের এক কোটিরও বেশি নাগরিক পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বসবাস করেন। তাদের ভোটাধিকার নিশ্চিতে দীর্ঘদিন ধরে দাবি আছে। ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়নের পর এটিএম শামসুল হুদার কমিশন ২০০৮ সালে এবং কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন কমিশন ২০১৪ সালে দুই দফাপ্রবাসীদের ভোটাধিকার দেওয়ার বিষয়ে উদ্যোগ নেয়। কিন্তু পরে আর তা বাস্তবায়িত হয়নি। কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশন প্রবাসী ভোটার করতে নতুন করে উদ্যোগ নিয়েছে। তারই ধারবাহিকতায় এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক সাইদুল ইসলাম আগামী নির্বাচনে পরীক্ষামূলকভাবে কিছু এলাকায় ভোটের সুপারিশ করেন। ওই পরীক্ষার আলোকে সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনা করে পরে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথাও বলেন তিনি। প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে বিশেষ করে যারা দীর্ঘদিন ধরে উন্নত বিশ্বে অবস্থান করছেন, তাদের একটি বড় অংশ সে দেশেরও নাগরিকত্ব নিয়েছেন। আবার তারা বাংলাদেশের নাগরিকত্বও বাদ দেননি। নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, চার নির্বাচন কমিশনার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব, কয়েকজন রাষ্ট্রদূত অংশ সেমিনারে বক্তব্য রাখেন।

 



 

Show all comments
  • এ এইচ ভূইয়া ২০ এপ্রিল, ২০১৮, ৪:৪৯ এএম says : 0
    যাদের বাংলাদেশের পাসপোর্ট আছে তারাই ভোট দেওয়ার অধিকার রাখে। দৈত নাগরিকদের সেই সুযোগ থাকা উচিত নয়।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সিইসি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ