পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
টরে টক্কার শব্দ এখন অতীত, পোস্টকার্ড বিলুপ্তপ্রায়, কিন্তু এখনও রমরমিয়ে চলছে হাতে লেখা খবরের কাগজ। নয় নয় করেও ৯১ বছর পার করে ফেলল বিশ্বের একমাত্র হাতে লেখা উর্দু দৈনিক ‘দ্য মুসলমান’। গত ১৭ এপ্রিল ‘দি মুসলমান’ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে কোলকাতার দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা। প্রতিবেদনে বলা হয়ঃ
কম্পিউটার বা কোনও রকম মুদ্রণযন্ত্র নয়। ১৯২৭ সালে হাতে লিখে যাত্রা শুরু হয় এই দৈনিকের। সৈয়দ আজমতউল্লাহর হাত ধরে ভারতের তামিলনাড়–র রাজধানী চেন্নাই শহর থেকে প্রথম প্রকাশিত হয় ‘দ্য মুসলমান’। সাবলীল উর্দু ভাষায় খবরের পিঠে খবর সাজিয়ে ৯১ বছর ধরে সমান জনপ্রিয় এই সংবাদপত্র। চেন্নাইয়ের আগের নাম মাদ্রাজ।
খবরের কাগজটির বর্তমান সম্পাদক সৈয়দ আরিফুল্লাহ জানিয়েছেন, তিন প্রজন্ম ধরে চলছে এই উর্দু দৈনিক। স‚চনাটা করেছিলেন তাঁর দাদু সৈয়দ আজমতউল্লাহ। তাঁর ইন্তেকালের পর ২০০৮ সালে ওই কাগজটির হাল ধরেন তাঁর বাবা সৈয়দ ফাজাউল্লাহ। বাবার পরে তাঁর কাঁধেই রয়েছে গোটা দায়িত্ব। তবে, সময় বদলালেও দৈনিকের ঐতিহ্য ও ধরনে কোনও পরিবর্তন হয়নি বলেই জানিয়েছেন তিনি।
‘দ্য মুসলমান’-এর ম‚ল আকর্ষণ এর অসাধারণ ক্যালিগ্রাফি। খবর সাজানোর পাশাপাশি রঙ, তুলির বৈচিত্র্যে নানা ক্যালিগ্রাফি ফুটিয়ে তোলার কাজ করেন তিন ‘কাতিব’। রং আর বিভিন্ন কলম ও তুলি দিয়ে লেখা হয় শিরোনাম ও ছবির ক্যাপশন। তবে এখানে কোনও খবরেরই বাইলাইন নেই ।
চেন্নাইয়ের ট্রিপলিকেন হাই রোডে দু’কামরার ছোট্ট দু’টি ঘরে প্রথম কাজ শুরু হয় এই দৈনিকের। চার পাতার কাগজটির সব খবর সাজিয়ে দেন আরিফুল্লাহ। এর পর রঙ, তুলি দিয়ে ক্যালিগ্রাফির কাজ শুরু করেন মুখ্য ‘কাতিব’ রহমান হোসেইনি। তাঁর মাসিক বেতন ২,৫০০ টাকা। খবর লেখার দায়িত্বে রয়েছেন শাবানা ও খুরশিদ বেগম। প্রতিটি পাতা সাজানোর জন্য দিনে ৬০ টাকা করে বেতন পান তাঁরা। দৈনিকের কাজ শুরু হয় সকাল ১০টা থেকে। দু’জন অনুবাদক খবরগুলি উর্দু ভাষায় লিখে দেন। ঘণ্টা দু’য়েক ধরে অনুবাদের কাজ চলে। তারপর ক্যালিগ্রাফি ও লেখার কাজ শুরু করেন তিন ‘কাতিব’। মূল কপি তৈরি হয়ে গেলে দুপুর ১টা নাগাদ প্রিন্টের মাধ্যমে বাকি কপিগুলি তৈরি হয়। সন্ধের মধ্যে খবরের কাগজ পৌঁছে যায় প্রায় ২১ হাজার পাঠকের হাতে। প্রতিটি কাগজের দাম মাত্র ৭৫ পয়সা।
চার পাতার কাগজের প্রথম পাতায় থাকে দেশ ও বিদেশের নানা খবর। দ্বিতীয় পাতা জুড়ে শুধু সম্পাদকীয়। পরের পাতা দু’টিতে স্থানীয় খবর ও বিজ্ঞাপন। সম্পাদক আরিফুল্লাহ জানিয়েছেন, ব্রেকিং নিউজ সাধারণত এই দৈনিকে থাকে না। কারণ সবিস্তার খবর ফের লিখতে গেলে অনেক সময়, পরিশ্রম ও লোকবলের প্রয়োজন। মূলত সমাজের নানা বিষয়ের উপরই জোর দেওয়া হয় এই দৈনিকে। ইসলাম ভিত্তিক খবর প্রথম পছন্দ হলেও সবরকম পাঠকের জন্যই খবর বাছা হয় এখানে।
চিফ রিপোর্টার চিন্নাস্বামী বালাসুব্রামোনিয়ামের কথায়, সোমবারের ‘দ্য মুসলমান’ একটু ভিন্ন ধরনের হয়। ওই দিন কুরআন এবং ইসলাম ইতিহাস নিয়ে নানা খবরই প্রাধান্য পায়। দিল্লি, কলকাতা ও হায়দরাবাদের নানা জায়গায় এই দৈনিকের গ্রাহক ছড়িয়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
দু’টি দেওয়াল পাখা, তিনটি বাল্ব ও একটি টিউব লাইট দিয়ে সাজানো ছোট্ট দু’টি ঘর থেকে গুটিকয়েক মানুষের নিরলস পরিশ্রমেই দিন দিন জনপ্রিয়তা বাড়ছে এই দৈনিকের। আরিফুল্লাহর কথায়, ‘দ্য মুসলমান কখনই থেমে থাকবে না। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই কাগজের ঐতিহ্য একই রকম থাকবে। দেশের সর্বস্তরের পাঠকের কাছে খবর পৌঁছে দেওয়াই এই দৈনিকের একমাত্র উদ্দেশ্য’।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।