পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের প্রশ্নে সকল রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য হওয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে সব বিরোধী দল একমত হয় বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু হবে না।
তখন বেগম খালেদা জিয়ার ডাকে সাড়া দিয়ে আওয়ামী জোট ছাড়া অন্য কোনো দল নির্বাচনে অংশ নেয়নি। তাহলে আজ কেনো আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারছি না? আমাদের সবাইকে আবার নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। মানুষের গণতান্ত্রিক, নাগরিক ও ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। গতকাল (বৃহস্পতিবার) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে এক প্রতিবাদ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচন যেভাবে হয়েছে, তা ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের নীল নকশার ফসল। এবারও পরিস্থিতি সেই একই রকম। তাহলে কেন এখন পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলো আবার ওই জায়গায় (নির্দলীয় সরকার) এসে এক হচ্ছেন না। এটা জনগণের সামনে বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, আজকে আমি এখানে দাঁড়িয়ে সকল রাজনৈতিক দল ও সকল গণতান্ত্রিকগামী মানুষের কাছে আহ্বান রাখতে চাই, আসুন আমরা একটা প্রশ্নে একমত হই। একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আমরা নির্বাচন চাই, গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধার চাই। এ বিষয়টাতে একটা জাতীয় ঐক্যমত্য সৃষ্টি করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল বলে সরকার দেশের মানুষের সাথে প্রতারণা করছে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশের সব আর্থিক খাত ধ্বংস হয়ে গেছে। ব্যাংকগুলো লুট হয়ে গেছে। এসব আমার কথা নয়, সিপিডি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, দেশের অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, সব আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকগুলো শেষ হয়ে গেছে, বিকলাঙ্গ একটা অবস্থা তৈরি হয়েছে। প্রকৃত আয় বলতে কিছু নাই মানুষের। কর্মসংস্থান নাই। আর বলছেন শনৈ শনৈ উন্নতি! দেশে উন্নয়নের জোয়ার বইছে, মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। আসলে এগুলো সবই জনগণের সাথে প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়। সরকারের কাছে প্রশ্ন করে বিএনপির এই নেতা বলেন, কিসের উন্নয়ন, কোথায় উন্নয়ন? জনগণের কথা বলার, ভোটের অধিকার নেই আর সরকার বলছে উন্নয়নের রোল মড়েল। আসলে উন্নয়ন নয় বাংলাদেশ হচ্ছে মিথ্যা ও প্রতারণার রোল মড়েল।
সরকারের অপশাসন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য গণবিস্ফোরণ ঘটাতে হবে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, এর কোনো বিকল্প নেই। আর সে জন্য মানুষের কাছে যেতে হবে, তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। কারণ এ সরকার গোটা দেশের সব কিছু শেষ করে দিয়েছে। দেশে অরাজক পরিস্থিতি চলছে।এজন্য ভোটারবিহীন সরকার ব্যবস্থা দায়ী। আর সে জন্য আমরা বার বার বলছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। কিন্তু সে ব্যবস্থা এখনও করার কোনো প্রক্রিয়া আমরা দেখছি না।
বিএনপি নেতা-কর্মীদের জনগণের কাছে যাওয়ার তাগিদ দিয়ে দলের মহাসচিব বলেন, এ অবস্থা থেকে অবশ্যই আমাদের মুক্তি পেতে হবে। এই মুক্তির পথ একমাত্র জনগণ। জনগণের কাছে যেতে হবে, তাদেরকে জাগিয়ে তুলতে হবে। জনগণকে নিয়ে গণঅভ্যুত্থান ঘটাতে হবে। গণতান্ত্রিক উপায়ে শান্তিপূর্ণ উপায়ে এদেরকে পরাজিত করতে হবে এবং জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। কেবল খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য নয়, দেশের মানুষের সত্যিকারের মুক্তির জন্য এই আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
কোটা বাতিল প্রসঙ্গ বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী রাগ করে বললেন, এই করছে, ওই করছে ঠিক আছে- এই কোটা পদ্ধতি তুলে দিলাম। এটা তিনি করতে পারেন না, তার সেই অধিকার নেই। তার এই ঘোষণা সংবিধানের বাইরে। শিক্ষার্থীরা তা চায়নি, তারা চেয়েছিল সংস্কার, অর্থাৎ পরিবর্তন করা। উেনি (প্রধানমন্ত্রী) জানেন যে, যেটা উনি করছেন তা আদালতে গেলে চ্যালেঞ্জে পড়বে। ফলে এখন পর্যন্ত গেজেট হয়নি, এখন পর্যন্ত অন্য কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
বিচ্ছিন্নভাবে আন্দোলন করে কোন লাভ হবে জানিয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, অধিকার আদায়ের জন্য একটা শ্রেণির বা ছাত্র-ছাত্রীদের যে আন্দোলন, তাতে কিন্তু কোনো লাভ হবে না, যদি না পুরো সিস্টেম নিয়ে আন্দোলন করা হয়, যদি না গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করা হয়, পুরো অধিকারের জন্য আন্দোলনটা করা হয়। জনগণের প্রতিনিধিত্ব থাকলেই তো সেই সরকার জনগণের কথা চিন্তা করবে। খালেদা জিয়াকে নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা দেশনেত্রীকে নিয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। এই একটি মানুষ আছেন, যাকে কেন্দ্র করে এদেশের গণতন্ত্রের মানুষরা বেঁচে আছেন। এই একটি মানুষ আছেন যাকে কেন্দ্র করে তার দিকে তাঁকিয়ে মানুষ বেঁচে আছেন। আজ তিনি অসুস্থ। অবিলম্বে যেটা তার পাওনা সেই মুক্তির জন্য জোর আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তাকে মুক্ত করে আনতে হবে।
অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের সভাপতি প্রকৌশলী মাহমুদুর রহমানের সভাপতিত্বে এ আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন, শওকত মাহমুদ, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের সভাপতি অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, সাংবাদিক নেতা সৈয়দ আবদাল আহমেদ, কাদের গনি চৌধুরী প্রমুখ।
বেগম খালেদা জিয়ার সাথে দেখা
হয়নি মির্জা ফখরুলসহ ৩ নেতার
কারাবন্দী বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে গতকাল বৃহস্পতিবারও দেখা করতে পারেননি বিএনপির শীর্ষ নেতারা। এ নিয়ে দুই দফা সময় দিয়ে তা বাতিল করল কারা কর্তৃপক্ষ। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে তিনটায় নাজিমউদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বেগম খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করতে যান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও নজরুল ইসলাম খান। প্রায় ২৫ মিনিট কারাফটকের অনুসন্ধান কক্ষের সামনে অবস্থান করেন তারা। এরপর দেখা করার সুযোগ না পেয়ে বিকেল ৪টার দিকে বিএনপি নেতারা কারাগারের সামনে থেকে চলে যান।
মির্জা ফখরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, গত মঙ্গলবার দেখা করার অনুমতি ছিলো। সেদিন দেখা না করে গতকাল বৃহস্পতিবার দেখা করার জন্য গিয়েছিলাম। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ দেখা করার অনুমতি দেয়নি। তারা বলেছে আইজি প্রিজন তার অফিসে উপস্থিত না থাকায় তাদের ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়নি। বিএনপির মহাসচিব আরো বলেন, আসার পরে আমাদের বলা হচ্ছে যে আজও সম্ভব হচ্ছে না। আগামী দু–এক দিনের মধ্যে হলে হতে পারে। কর্তৃপক্ষ আমাদের এটা জানিয়েছে। কী কারণে দেখা করতে পারেননি, এই প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, এটা আমরা বলতে পারব না। ওনারা বলেছেন আইজি সাহেব (কারা মহাপরিদর্শক) নেই। কাশিমপুরে গেছেন, এটাই বলেছেন।
বিএনপি নেতারা চলে যাওয়ার ১০ মিনিট পর কারা কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের জানান, আগামী রোববার দুইটার পরে বিএনপি নেতারা বেগম খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করতে পারবেন। নতুন করে অনুমতির প্রয়োজন হবে না। গত ৬ এপ্রিল মির্জা ফখরুল ইসলামস কারাগারে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছিলেন। এর পরদিনই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য নেয়া হয় বিএনপি প্রধানকে। গত ৮ ফের্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ে দন্ডিত হয়ে কারাগারে রয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।