Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

বিদেশে পণ্যের চাহিদা বেড়েছে

দৃষ্টিনন্দন ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশের অন্যতম শিল্প প্রতিষ্ঠান এনোনটেক্স

| প্রকাশের সময় : ১৯ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী ও তৈরী পোশাক বিশ্বের প্রায় ৬০ টি দেশে রফতানি হচ্ছে
প্রতিমাসের ১ থেকে ৩ তারিখের মধ্যে শ্রমিক-কর্মচারীর বেতনাদি পরিশোধ করা হয়
স্টাফ রিপোর্টার : দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান খাত তৈরী পোশাক শিল্প। আর এই শিল্পের বিকাশ ও বিস্তার ঘটিয়ে উন্নয়ন খাতকে শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখে চলছে এনোনটেক্স গ্রæপভ‚ক্ত, সহযোগী ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহ । টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে নিশাতনগরে গড়ে তোলা হয়েছে পরিবেশবান্ধব, দৃষ্টিনন্দন ও স্বাস্থ্যসম্মত এই শিল্পপ্রতিষ্ঠানটি। এ প্রতিষ্ঠানের শতকরা পঞ্চান্ন ভাগই নারী শ্রমিক। তাদের জন্য রয়েছে প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরেই নিজস্ব উন্নতমানের আবাসন ব্যবস্থা। রয়েছে চিকিৎসারও সুব্যবস্থা। সেইসাথে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও সর্বাধুনিক অগ্নি নির্বাপন সুবিধাদি। বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর ন্যায় এই প্রতিষ্ঠানের রয়েছে নিজস্ব ফায়ার ট্রাক। প্রায় পঞ্চাশ হাজার গ্যালন ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন ফায়ার ট্রাকটি পরিচালনার জন্য রয়েছে একদল অভিজ্ঞ ও দক্ষ চৌকস অগ্নি নির্বাপক কর্মী। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির রয়েছে পরিবেশবান্ধব বায়োলজিক্যাল ইটিপি যা দ্বারা দৈনিক প্রায় দুই লক্ষ লিটার পানি পরিশোধন করা হচ্ছে, রয়েছে পরিশোধিত পানি সরবরাহ করার জন্য ছয় লক্ষ লিটার পানি প্রতি ঘন্টা ক্ষমতাসম্পন্ন ডবিøউটিপি। প্রতিষ্ঠানটিতে তিন শিফটে প্রায় ছাব্বিশ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন। তাদের জন্য রয়েছে বিনামূল্যে প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব আবাসন সুবিধা। ব্যবসায়ীদের কঠোর শ্রম, মেধা ও অভিজ্ঞতার আলোকে মাত্র দশ বছরে শতভাগ রফতানিমূখী এ শিল্পপ্রতিষ্ঠানটির উৎপাদিত পণ্যের ব্যাপক চাহিদা আর্ন্তজাতিক বাজারে সৃষ্টি হয়েছে এবং ক্রমাগত সেই চাহিদা বেড়েই চলছে। বিশ্বের প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থেকে নানা প্রতিক‚ল পরিবেশ ও পরিস্থিতি অতিক্রম করে এনোনটেক্স গ্রæপভ‚ক্ত, সহযোগী ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহ বিশ্ববাজারে সগর্বে মাথা উচুঁ করে দাড়িয়েছে। এটি দেশের অর্থনৈতিক খাত এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। শতভাগ রফতানিমূলক শিল্প কারখানাগুলোতে উৎপাদিত তৈরী পোশাক ও অন্যান্য পণ্যসমূহের গুণগতমান উন্নত হওয়ার কারনে এর বিদেশী ক্রেতার সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায় যে, টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে নিশাতনগরে প্রায় ৪৫০ বিঘা জমির উপর এনোনটেক্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক-১ গড়ে উঠেছে। ১১ টি বৃহৎ শেড ও ৫টি বহুতল ভবনে চলছে উৎপাদন কার্যক্রম। শ্রমিক-কর্মচারীদের বসবাসের জন্য রয়েছে দুইটি বহুতল আবাসিক ভবন।
এ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নারী শ্রমিক মোসাম্মৎ রোজিনা বেগম জানান যে, প্রতি মাসের ১ থেকে ৩ তারিখের মধ্যেই তারা নিয়মিত বেতন-ভাতাদি পেয়ে থাকেন। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব অভিজ্ঞ ও দক্ষ চিকিৎসক মন্ডলী দ্বারা বিনামূল্যে উন্নত চিকিৎসা সেবাও পেয়ে আসছেন। এছাড়াও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় অর্থমন্ত্রী জনাব আবুল মাল আব্দুল মুহিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীদের জন্য ”এনোনটেক্স হেলথ ক্লিনিক”-এর উদ্বোধন করে গেছেন, যার কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হলে প্রতিষ্ঠানের কর্মরত সকলে বিনামূল্যে অত্যাধুনিক চিকিৎসা সুবিধা ভোগ করবেন।
গতকাল সরেজমিনে পরিদর্শনকালে সেখানে কথা হয়,মেহনতী গার্মেন্টস এন্ড টেক্সটাইল ওয়ার্কার্স ফেডারেশন এর সভাপতি খাতুনে জান্নাত ফাতেমা খানমের সাথে। জান্নাত ফাতেমা বলেন, গতকাল কারখানাটি পরিদর্শন কালে মেহনতী গার্মেন্টস এন্ড টেক্সটাইল ওয়ার্কারর্স ফেডারেশনের সভাপতি খাতুনে জান্নাত ফাতেমার সাথে সেখানে কথা হয়। তিনি বলেন, আমরা শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের জন্য কাজ করছি। এনোনটেক্স গ্রæপের এ কারখানাটি আমরা পরিদর্শন করেছি। শ্রমিক কর্মচারীদের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছি তারা প্রতি মাসের ১ থেকে ৩ তারিখের মধ্যে বেতন পাচ্ছেন। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির পরিবেশও ভাল। এটি শ্রমিক বান্ধব একটি শিল্প প্রতিষ্টান। এখানে শ্রমিকদের বিনা খরছে উন্নত পরিবেশে থাকার আবাসন ব্যবস্থা রয়েছে। এটা একটি ভাল দিক।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায় যে,প্রতিষ্ঠানটির শুধু জমির বর্তমান বাজার মূল্য ৫হাজার৫০০ কোটি টাকা। এই শিল্প গ্রæপটির রয়েছে ২২ টি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত পণ্যসমূহ বিশ্বের প্রায় ৬০ টি দেশে নিয়মিত রফতানি হচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম ফেরদৌস জানান, আমাদের প্রতিষ্ঠানসমূহ শ্রমিক ও পরিবেশবান্ধব শিল্প গোষ্ঠি, যা সবসময়ই শ্রমিক ও পরিবেশের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। তিনি আরো জানান, স্থাপিত প্রকল্পসমূহ পরিচালনা করতে প্রতি ঘন্টায় প্রায় ১৫ শত কিলোওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। আমাদের নিজস্ব ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্ট হতে ৩৩ মেগাওয়াট ও ফার্নেস পাওয়ার প্ল্যান্ট হতে ৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে থাকে, যা প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব প্রয়োজন অনুসারে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করে।
প্রতিষ্ঠানটির ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্টে রয়েছে আমেরিকার বিশ্ববিখ্যাত ওয়াইউকিশা আই ক্যাটারপিলার গ্যাস জেনেরাটারসমুহ। এই বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য নিজস্ব পাওয়ার সাপ্লাই স্টেশন রয়েছে। বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সুরক্ষিত ও সম্ভাব্য অগ্নি দূর্ঘটনা এড়াতে ব্যবহার করা হয়েছে পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা সেরা জার্মানীর সিমেন্স কোম্পানীর বাসবার ট্রানকিং সিস্টেম।
পরিদর্শনকালে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়,নিটিং সেকশনে উৎপাদিত নীট গার্মেন্টস এবং সোয়েটার পণ্য রফতানি করা হয়। অন্যান্য প্রতিষ্ঠান সমুহের উৎপাদিত পণ্য নিজস্ব রফতানি কার্যক্রমে ব্যবহারসহ দেশীয় অন্যান্য প্রকল্পের উৎপাদিত পণ্য রফতানিতে স্থানীয় বিক্রয়ের মাধ্যমে ব্যাক-ওয়ার্ড লিংকেজ হিসাবে উল্লেখযোগ্য ভ‚মিকা পালন করে। উক্ত প্রক্রিয়াতে গ্রæপভূক্ত উপরোক্ত প্রতিষ্ঠানের বাৎসরিক বিক্রয়ের পরিমান প্রায় ৮৪২ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
স্পিনিং সেকশন ঃ এনোনটেক্স গ্রæপভুক্ত স্পিনিং মিলস্ সমুহের সর্বমোট স্পিন্ডেল সংখ্যা ৩ লাখ২০হাজার। প্রতিদিন কারখানা গুলোতে প্রায় ১৮০-২০০ মেঃ টন তুলা ব্যবহৃত হবে। বছরে প্রায় ১৩০০ কোটি টাকার কাচাঁমাল হিসাবে তুলা ব্যবহৃত হয়। এসব কারখানায় প্রতিদিন প্রায় ১৬০ মেঃ টন সুতা উৎপাদিত হয় যার বাৎসরিক বিক্রয় মূল্য প্রায় ২১ শত কোটি টাকা।
এছাড়া অত্যাধুনিক ইয়ার্ন ডাইং কোনেস এন্ড হ্যাঙ্কস দ্বারা প্রতি দিন ৪০ মেঃ টন সুতা ডাইং করার ক্ষমতা বিদ্যমান । এনোনটেক্স গ্রæপভূক্ত প্রতিষ্ঠান জারা লেবেল এন্ড প্যাকেজিং লিঃ একটি শতভাগ রপ্তানীমুখী পরিবেশ বান্ধব প্যাকেজিং যা , সুইজারল্যান্ড বিখ্যাত ”মুলার” মেশিন ও বিশ্বমানের যন্ত্রপাতি দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। এছাড়াও জুট মিলস এ প্রতিদিন প্রায় ২০ মেঃটন টুইন ও ২০ মেঃটন সেকিং ব্যাগ উৎপন্ন করা হয় যার বার্ষিক উৎপাদন মূল্য প্রায় ১০০ কোটি টাকারও বেশি।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ