Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হুমকির মুখে সুন্দরবন

বার বার জাহাজডুবি, নেই কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ

| প্রকাশের সময় : ১৭ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

 আবু হেনা মুক্তি : একের পর এক সুন্দরবন সংলগ্ন নদীতে তেলবাহী ট্যাঙ্কার, মালবাহী কার্গো, কয়লা বোঝাই জাহাজ ডুবছে। যে কারণে সুন্দরবনের জীব বৈচিত্র রীতিমত এখন হুমকির সম্মুখীন। এতে সুন্দরবনের পরিবেশ, জীব ও বৈচিত্রের ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। পরিবেশবাদীদের অন্দোলন সংগ্রামের মুখে সুন্দরবনের কোল ঘেষে কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ আর ঘন ঘন সুন্দরবনের নদীতে জাহাজ ট্যাঙ্কার ডুবির ঘটনা একই সূত্রে গাথা কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি এটি নাশকতা কিনা তা নিয়েও সঙ্কয় প্রকাশ করেছেন পরিবেশবাদী মানবাধিকার সংগঠনগুলো। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়া সত্তে¡ও নেয় হয়নি তেমন কোন বাস্তবমুখী পদক্ষেপ। সর্বশেষ গত শনিবার দিনগত রাত ৩টার দিকে মংলা বন্দর থেকে প্রায় ৬০ নটিক্যাল মাইল দূরে হারবাড়িয়া ৫ নম্বর এ্যাঙ্করে ডুবোচরে আটকে ৭৭৫ মেট্রিকটন কয়লা বোঝাই লাইটার জাহাজটি ডুবে যায়। দু’দিন পার হলেও এখনো উদ্ধার কাজ শুরু হয়নি কয়লাবোঝাই ডুবে যাওয়া জাহাজের। সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মাহমুদুল হাসান জানান, সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের পশুর নদের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. শাহীন কবিরকে জাহাজডুবির কারণ ও কয়লায় পরিবেশের কী ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে তা পর্যবেক্ষণ করে যত দ্রæত সম্ভব প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া ডুবে যাওয়া কয়লা বোঝাই ওই জাহাজ ‘এমভি বিলাস’-এর নামে মোংলা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন চাঁদপাই রেঞ্জের স্টেশন কর্মকর্তা কামরুল হাসান। পরিবেশ অধিদপ্তরের বাগেরহাট কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (এডি) মো. এমদাদুল হক জানান, ডুবে যাওয়া জাহাজে থাকা কয়লার নমুনা সংগ্রহের জন্য আমাদের একটি টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। তবে জাহাজ ১০-১২ ফুট পানির নিচে থাকায় নমুনা সংগ্রহ সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে ৩০ ঘণ্টায়ও কয়লা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সাহারা এন্টারপ্রাইজের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি ঘটনাস্থলে পৌঁছায়নি। জাহাজ কাত হয়ে ডুবে গেছে।

সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, পশুর নদীতে কয়লা বোঝাই জাহাজ ডুবিতে সুন্দরবনের গাছের শ্বাসমূলসহ জীববৈচিত্র্য ও জলজ-প্রাণির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে। তিনি দ্রæত জাহাজটি উদ্ধারের দাবি জানান।
বাংলাদেশ পরিবেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সোসাইটির বিভাগীয় মহাসচিব আজগর হোসেন বলেন, বার বার সুন্দরবনের নদ নদীতে জাহাজ কার্গো ট্যাঙ্কার ডুবি হচ্ছে। অথচ নেয়া হচ্ছে না দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ। সুন্দরবন ধ্বংসে অন্য রাষ্ট্রের চক্রান্ত রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। কারণ সুন্দরবন বাংলাদেশের সম্পদ।
নাগরিক নেতা অ্যাডভোকেট সাইদুর রহমান মোল্লা বলেন, সুন্দরবনের নদ নদীতে কার্গো জাহাজ ডুবছে। আবার সুন্দরবন এলাকায় সুন্দরবনের ক্ষতি হবে এমন বিদ্যুৎ প্রকল্প চালু হচ্ছে। এসব বিষয় আমাদের কাছে সুন্দরবন ধ্বংসের জন্য বিদেশী কোন এজেন্ডা কিনা সেটি খানিকটা কাকতলীয়।
তদন্ত কমিটি গঠন মংলা বন্দরের হারবাড়িয়া এলাকায় ৭৭৫ মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে এমভি বিলাস নামে লাইটার জাহাজ ডুবির ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি সুন্দরবনে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা খতিয়ে দেখবে।
সুন্দরবন সার্কেলের বন সংরক্ষক চৌধুরী আমির হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, সুন্দরবনের মধ্যে পশুর নদীর হারবাড়িয়ার থেকে এক কিলোমিটার নিচে বঙ্গোপসাগরের দিকে কয়লা বোঝাই জাহাজ ডুবির ঘটনায় সুন্দরবনের কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা নিরূপণ করতে এক সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. শাহিন কবিরকে বিষয়টির তদন্ত করবেন। গত রোববার দুপুর থেকে তদন্ত কমিটি সরেজমিন তদন্ত শুরু করেছে বলে জানান তিনি। এর আগে শনিবার দিনগত রাত ৩টার দিকে মংলা বন্দর থেকে প্রায় ৬০ নটিক্যাল মাইল দূরে হারবাড়িয়া ৫ নম্বর এ্যাঙ্করে ডুবোচরে আটকে ৭৭৫ মেট্রিকটন কয়লা বোঝাই লাইটার জাহাজটি ডুবে যায়। ডুবে যাওয়া জাহাজটি দেখা যাচ্ছে। এতে হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
কয়লা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সাহারা এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপক (অপারেশন) মো. লালন হাওলাদার বলেন, গত ১৩ এপ্রিল লাইবেরিয়ার পতাকাবাহী এমভি অবজারভেটর জাহাজ সাড়ে ২৪ হাজার মেট্রিকটন কয়লা নিয়ে মংলা বন্দরের হারবাড়িয়ার ৬ নম্বর এ্যাঙ্করে নোঙ্গর করে। ওই জাহাজ থেকে ৭৭৫ মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে লাইটার জাহাজ এমভি বিলাস শনিবার দুপুর ১২টার দিকে ঢাকার মিরপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
তিনি বলেন, লাইটার জাহাজের মাস্টার ডুবোচর থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য মংলা বন্দরের সাহায্য চান। বন্দর কর্তৃপক্ষের উদ্ধারযান ঘটনাস্থলে পৌছেও তা রক্ষা করতে পারেনি। প্রবল জোয়ারের চাপে কয়লা বোঝাই
ডুবে যাওয়া লাইটার জাহাজের চালক আনিছুল হক জানান, মোংলা বন্দরের সুন্দরবনের হারবাড়িয়া এলাকায় ইন্দোনেশিয়ার পতাকাবাহী এমভি গøাস বাণিজ্যিক জাহাজ থেকে কয়লা নিয়ে গত রোববার ভোরে যশোরের নোয়াপাড়ার উদ্দেশে ছেড়ে আসে লাইটার জাহাজ নিলয়-২। কিছুদূর এগোলেই ডুবোচরে ধাক্কা লেগে জাহাজটি ডুবে যায়। এ সময় সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হন জাহাজে থাকা সবাই।
মংলা বন্দরের হারবার মাস্টার কমান্ডার মো. ওয়ালিউল্লাহ বলেন, বন্দর কার্যক্রম ও চ্যানেলে জাহাজ চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। এখনো জাহাজটি উদ্ধার অভিযান শুরু হয়নি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জাহাজের মালিক সেটি উদ্ধার করাবেন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জাহাজ উদ্ধার না করলে বন্দর কর্তৃপক্ষ জাহাজ উদ্ধার করবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ