Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ২৫ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

পর্যাপ্ত সচল ফেরির অভাবে যানবাহন পারপারে বিঘœ ঘটছে

| প্রকাশের সময় : ১৭ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম


চট্টগ্রাম-বরিশাল-খুলনা বিভাগ এবং বেনাপোল ও ভোমরা স্থল বন্দরের সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ নির্বিঘœ হচ্ছে না
নাছিম উল আলম : প্রয়োজনীয় ও সচল ফেরীর অভাব সহ ভাটি মেঘনা রহমতখালী চ্যানেলটি ক্রমশ ভরাট হয়ে যাবার কারণে দেশের তিনটি বিভাগের সরাসরি সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা চরমভাবে বিপর্যস্ত। চট্টগ্রাম-ল²ীপুর-ভোলা-বরিশাল-মোংলা-খুলনা মহাসড়কের ইলিশা-মজুচৌধুরীর হাট এবং ভেদুরিয়া-লাহারহাট সেক্টরে প্রয়োজনীয় ফেরির অভাব দীর্ঘদিনের। এমনকি এ দুটি সেক্টরের জন্য কোন নতুন ফেরি সংগ্রহেরও উদ্যোগ নেই। এসব সেক্টরে বাড়তি ফেরি দিতে গেলে দেশের অন্য সেক্টরগুলোতে যানবাহন পারপারে সংকট সৃষ্টি হয়। অথচ দেশের উপকূলীয় এলাকার এ মহাসড়কটির ওপরই গুরুত্বপূর্ণ ৩টি বিভাগ ছাড়াও সবগুলো সমুদ্র বন্দর ছাড়াও প্রধান দুটি স্থল বন্দরের সাথে বরিশাল ও চট্টগ্রামের সরাসরি ও সংক্ষিপ্ত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা নির্ভরশীল।
ফেরির অভাবে বর্তমানে ভোলা-ল²ীপুর সেক্টরের একটি ট্রাক পারাপারে দুই থেকে তিনদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এমনকি জ্বালানী গ্যাস সহ অনেক জরুরী পণ্যবাহী ট্রাকগুলো পারাপারে ৪৮ ঘন্টা থেকে ৭২ ঘন্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে। ভোলা থেকে ল²ীপুর ও বরিশাল হয়ে দেশের বিভিন্নস্থানমুখী তরমুজ সহ বিভিন্ন কৃষিপণ্যবাহী ট্রাকগুলোকেও দিনের পর দিন এসব ফেরি ঘাটে অপেক্ষা করতে গিয়ে পণ্যের গুনগত মান নষ্ট হচ্ছে। প্রায় একই অবস্থা ভোলা ও বরিশালের মধ্যবর্তী ভেদুরিয়া-লাহারহাট সেক্টরেও। এমনকি কোন ট্রাক চালক এ রুটে একবার আসার পরে দ্বিতীয়বার আর আসতে চাচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এর পাশাপাশি ঐ ফেরি সেক্টরের মজু চৌধুরীর হাট ঘাট থেকে মেঘনার মুখ পর্যন্ত ‘রহমতখালী চ্যানেল’টি ক্রমশ ভরাট হয়ে যাবার কারনেও ভাটার সময় ফেরি চলাচলে বিঘœ ঘটছে। বিআইডবিøউটিএ ইতোপূর্বে কয়েকবারই ড্রেজিং করে চ্যানেলটির গভীরতা বৃদ্ধি করলেও তা টেকসই হচ্ছেনা। আগামী তিন বছরে চ্যানেলটি থেকে পর্যায়ক্রমে আরো ব্যাপকভাবে পলি অপসারণ করার প্রকল্প গ্রহন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
২০০৮ সালের গোড়ার দিকে সরকারি নির্দেশের আলোকে নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয় ও যোগাযোগ মন্ত্রনালয়ের যৌথ সিদ্ধান্তে পরীক্ষামূলকভাবে ভোলা ও ল²ীপুরের মধ্যবর্তী ভাটি মেঘনার ইলিশা-মজু চৌধুরীর হাট সেক্টরে দুটি ‘কে-টাইপ’ ফেরির সাহায্যে যানবাহন পারাপার শুরু হয়। ভাটি মেঘনার দীর্ঘ ২৮ কিলোমিটার দুরত্বের এ ফেরি সেক্টরটিই দেশের দীর্ঘতম ফেরি রুট। এ ফেরি সার্ভিসটি চালুর ফলে চট্টগ্রাম ও সন্নিহিত এলাকার সাথে বরিশাল ও খুলনা বিভাগ ছাড়াও বেনাপোল ও ভোমরা স্থল বন্দরের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়। চট্টগ্রামের সাথে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সড়ক পথের দুরত্ব অর্ধেকেরও বেশী হ্রাস পায়। এমনকি চট্টগ্রাম-ঢাকা এবং ঢাকা-মানিকগঞ্জ-ফরিদপুর-যশোর-খুলনা মহাসড়কে যানবাহনের চাপ হ্রাস করাও ছিল ঐ মহাসড়কটি চালুর উদ্দেশ্য।
কিন্তু পরীক্ষামূলকভাবে ফেরি সার্ভিস চালুর পরে বিগত এক দশকেও ভোলা-ল²ীপুরের ঐ ফেরি সেক্টরের জন্য অদ্যাবদি কোন বিশেষ ধরনের ফেরি সংগ্রহ করা হয়নি। অথচ নৌ পরবহন অধিদপ্তর দেশের উপকূলীয় ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সমুদ্র উপকূলীয় ঐ ফেরি সেক্টরের জন্য ‘বিশেষ ধরনের’ ফেরি চালুর পরমর্শ দিয়ছিল। শুরুতে সে ধরনের সিদ্ধান্ত থাকলেও গত দশ বছরেও বিআইডবিøউটিসি অত্যন্ত সম্ভবনাময় ঐ ফেরি সেক্টরের জন্য পর্যাপ্ত ফেরি সংগ্রহ করতে পারেনি।
২০১২ সালের দিকে ‘কিষাণী’ নামের একটি কে-টাইপ ফেরি নির্মানের পরে ভোলা-ল²ীপুর রুটে চালু করা হলেও দীর্ঘদিন ধরে সুষ্ঠু মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেটিও চলছে খুড়িয়ে। ফেরিটির জেনারেটরের অবস্থা খুবই নাজুক। ফলে বর্তমানে কে-টাইপ ফেরি কিষাণী শুধুমাত্র দিনের আলোতেই যানবাহন পারপার করতে পারছে। অপর ‘কে-টাইপ ফেরি কস্তুরি’ও বিকল বিগত তিন দিন ধরে। ফলে বর্তমানে দেশের দীর্ঘতম এ ফেরি সেক্টরে দিনের বেলায় তিনটি এবং রাতে ২টি ফেরি চলাচল করছে।
গতকাল সকালের পূর্ববর্তি ২৪ঘন্টায় ভোলা ও ল²ীপুরের মধ্যবর্তী ইলিশা-মজুচৌধুরীর হাট সেক্টরে ১৭১টি যানবাহন পারপারের পরেও আরো শতাধিক যানবাহন অপেক্ষমান ছিল।
অপরদিকে ঐ একই মহাসড়কের ভোলা ও বরিশালের মধ্যবর্তী ভেদুরিয়া-লাহারহাট সেক্টরে ‘দালনচাঁপা’, ‘অপরাজিতা’ ও ‘কৃষ্ণচুড়া’ নামের ৩টি ‘ইউটিলিটি টাইপ-১’ ফেরি মোতায়েন থাকলেও অনেক সময়ই একটি বিকল থাকছে। উপরন্তু এ সেক্টরে রাতের বেশীরভাগ সময়ই ফেরি চলছে না। গতকাল সকালের পূর্ববর্তী ২৪ ঘন্টায় লাহারহাট-ভেদুরিয়া সেক্টরে ২৮৩টি যানবাহন পারাপার হলেও অপক্ষেমান ছিল আরো প্রায় ১শ’।
দক্ষিণাঞ্চলের অতি জনগুরুত্বপূর্ণ এ দুটি সেক্টরেই আরো অধিকসংখ্যক ফেরি মোতায়নের দাবী যাত্রী ছাড়া যানবাহন চালক ও মালিকদের। তবে এব্যপারে গতকাল বিআইডবিøউটিসি’র জিএম-বাণিজ্য এনএস শাহদাত আলী’র সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, ‘এ মুহুর্তে ঐ সব রুটে আর কোন ফেরি মোতায়েন সম্ভব নয়। তবে যেসব ফেরি ঐ দুটি সেক্টরে রয়েছে সেগুলোর চলাচল নির্বিঘœ করার চেষ্টা চলছে’ বলে জানান তিনি। তার মতে ‘ভোলা-ল²ীপুর সেক্টরে ইতোপূর্বে কখনোই ৪টি ফেরি ছিলনা। আমরা বর্তমান রবি মৌসুমে তরমুজ সহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য পরিবহনের বিষয়টি বিশেষ বিবেচনায় নিয়েই সাময়িকভাবে ৪টি ফেরি পরিচালন করছি। এতে করে মাওয়া ও আরিচা সেক্টরে যানবাহন পারপার ব্যাহত হচ্ছে’ বলে তিনি জানান।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ