পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মুন্সী কামাল আতাতুর্ক মিসেল শ্রীমদ্দি থেকে ফিরে : বাংলার নববর্ষকে সামনে রেখে এখন ব্যস্ততম সময় পার করছেন কুমিল্লার হোমনা উপজেলার শ্রীমদ্দি গ্রামের অর্ধশতাধিক পরিবারের বাসিন্দার। ১লা বৈশাখী গ্রাম বাংলার মেলায় বাঁশি বিক্রির জন্য এখন বাঁশি তৈরীতে নিয়োজিত রয়েছেন। গ্রামের নাম শ্রীমদ্দি। শ্রীমদ্দি গ্রামের অর্ধশতাধিক পরিবারেরও বেশি বাঁশী শিল্পের সাথে জড়িত হয়ে পাল্টে দিয়েছেন গ্রামের দূশ্যপট। একমাত্র বাঁশী তৈরী করে এখানকার অনেকেই এখন স্বাবলম্বী। কুমিল্লার জেলার হোমনা উপজেলা সদর থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে শ্রীমদ্দি গ্রামটির অবস্থান। বাঁশী তৈরী করে এখন সচ্ছল জীবন যাপন করছে। শুধু তাই নয় এখান থেকে বছরে প্রায় কোটি টাকার বাঁশী বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। শ্রীমদ্দি পুরো গ্রামটি ঘুরে চোখে পড়েনি বেকার কোনো যুবক-যুবতীর দুঃখময় চেহারা। গ্রামের প্রায় সব বাড়ি দোচালা ঘরের। সারা গ্রামে দেখা যায়, প্রতিটি বাড়ির আঙিনা ও অলিগলিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে বিভিন্ন রকমের ডিজাইনের বাঁশী। নারী-পুরুষ-শিশুসহ সব বয়সের মানুষই বাঁশী শিল্পের বিভিন্ন ডিজাইন তৈরী করতে নিয়োজিত। গৃহকর্তা-গৃহকর্ত্রীর পাশাপাশি তাদের সন্তানেরাও পিছিয়ে নেই। প্রত্যেকে নিজ নিজ কাজের ফাঁকে সময় অনুযায়ী বাঁশী তৈরী করছে। এভাবে কাটছে শ্রীমদ্দি গ্রামের অধিকাংশ পরিবারের জীবনধারা। এখান থেকেই বিভিন্ন ডিজাইনের বাঁশী তৈরী পন্য চলে যায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বড় বড় মার্কেট গুলোতে।
শ্রীমদ্দি গ্রামে ডুকতেই চোখে পড়লো একজন , সে গাছের নিচে বসে বাঁশী তৈরীতে ব্যস্ত। তবে তার কাছেই এলাকার বাঁশী শিল্পের কাজ সর্ম্পকে পাওয়া গেলো নানান তথ্য। সে মানুষটি হলো হোমনা উপজেলার শ্রীমদ্দি গ্রামের লিটন চন্দ্র পাল। তিনি জানান, তাদের গ্রামে বাঁশী তৈরীর কাজ শুরু হয়েছে কবে তা তিনি সঠিক ভাবে না বলতে পারলেও তিনি জানান আমাদের দাদা-বড়দাদার আমল থেকে এ বাঁশী তৈরীর কাজ শুরু হয়েছে। সে থেকে এই বাঁশী শিল্পের সাথে জড়িত আমরাও। তা ছাড়া এই কাজ খুবই সহজ। ফালগুন মাস থেকে বৈশাখী মাস পর্যন্ত অধিক বাঁশী তৈরী ও বিক্রি হলেও শ্রীমদ্দি গ্রামের শিল্পীরা সারা বছরই বাঁশী তৈরী করে। শ্রীমদ্দি গ্রামের আরেক বাঁশী যতীন্দ্র বিশ্বাস জানালেন- আমরা চট্রগ্রাম, ফটিকছড়ি, সীতাকুন্ড মিরসরাই থেকে মুলি বাঁশ কিনে ট্রাক যোগে নিয়ে আসি শ্রীমদ্দি গ্রামে। পরে বিভিন্ন মাপ অনুযায়ী মুলি বাঁশ কেটে টুকরো টুকরো করা হয়। এরপর টুকরোগুলো রোদে শুকিয়ে ফিনিশ করে লোহা কয়লা ধারা গরম করে মাফ অনুযায়ী বাঁশে ছিদ্র করা হয়। এবং মান্দাল কাঠ দিয়ে কডি তৈরী করে বাঁশের মাথায় আটকিয়ে দেওয়া হয় । এবং বাঁশের কভারে রং ধারা বিভিন্ন ডিজাইন করে বাজার জাত করা হয়। বাঁশী শিল্পীদের তৈরী প্রতি পিছ -মোহন বাঁশী ৬ টাকা, আর বাঁশী ১০ টাকা , মুখ বাঁশী ৫ টাকা , নাগিনী বাঁশী ৩ টাকা, ক্যালেনের বাঁশী ৪ টাকা, পাখী বাঁশী ২ টাকা, মোহন বাশী আড়াই টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছে। তবে লম্বা, মোটা নিখুত কাজের ওপর বাশীঁর দাম নির্ভর করে। কিন্তু বাচ্চাদের মুখ বাঁশী তৈরী ও বিক্রি হয় বেশী।
শ্রীমদ্দি গ্রামের যতীন্দ্র বিশ্বাসের স্ত্রী রিনা বিশ্বাস নকসী করা বাঁশী তৈরী করেন। স্বামী স্ত্রী দুজনে মিলেই নকসী করা বাঁশী তৈরী করে বিভিন্ন এনজিও এক্সপোর্টের মাধ্যমে সিঙ্গাপুর, বৃটেন, জাপান, কানাডা, জার্মান, নেদারল্যান্ড, ফ্রান্স ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানী করেন বলে তারা জানায়। দশম শ্রেণীতে পাশ করার পর বিয়ে হয়ে যায় রিনা বিশ্বাসের আর স্বামীর বাড়ীতে এসেই শিখে নেয় বাঁশী তৈরীর কাজ। তারপর থেকেই শুরু করে নকশী করা বাঁশী তৈরী করা। রিনা বিশ্বাস ৩ সন্তানের জননী সারাক্ষণ গৃহ ও বাঁশী তৈরীর কাজে ব্যস্ত থাকেন। তবুও তার মুখে হাঁসী। বাংলাদেশের পহেলা বৈশাখের বৈশাখী মেলা ছাড়াও হোমনার মিরাশের মেলা, শ্রীমদ্দি কালী বাড়ীর মেলা, কচুয়ার সাচারের রথ মেলা, ধামরায়ের রথমেলা, মতলবের বেলতুলীর লেংটার মেলা, ব্রাক্ষণবাড়ীয়া খরমপুরের মেলা, চট্রগ্রামের জব্বারের বলী খেলা, নাঙ্গলবন্দের অষ্টমী øান, সাতক্ষীরার পূজার মেলা,কুষ্টিয়ার, গাজীপুরে মৌসুমী বাঁশী বিক্রি ছাড়াও প্রায় সাড়া বছরই দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, শহর, বন্দর, হাট-বাজারে তারা তাদের বাঁশী বিক্রয় করে থাকে। বাঁশী শিল্পী আবদুল খালেক জানায় পূর্বে ১ হাজার ২শ’৮০টি কাউন বাঁশের মূল্য ছিল ১ হাজার ৫ শ’ টাকা বর্তমানে ২ বছর যাবত ১ হাজার ২শ’ ৮০টি বাঁশের মূল্য ২ হাজার টাকা। এখন রং কয়লা ও ¯িপ্রটসহ বাঁশী তৈরীর সকল উপকরনের দামই বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু বাঁশী ২ বছর পূর্বে যে দাম ছিল চলতি বছরেও একই দাম। বৈশাখী মেলায় তাদের তৈরী প্রচুর বাঁশের বাঁশী তৈরী হয়েছে। তবুও যেন বাঁশী শিল্পেীদের মনে আনন্দ নেই। তাই বাঁশী শিল্পীদের সরকারের দাবি সরকার তাদেরকে সামান্য সহযোগীতা পেলে দেশের সুনাম বিদেশে বয়ে আনতে পারবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।