Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘প্রধানমন্ত্রী হয়েও সুইচ বন্ধ করি, আপনারাও করুন’

বিএনপি দেশে খাম্বা দিয়েছিল বিদ্যুৎ নয় প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৩ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

উৎপাদন ব্যয়ের চেয়ে কম মূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় জানিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহŸান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এতে দেশের উপকারের পাশাপাশি উপকৃত হবেন যারা বিদ্যুৎ সাশ্রয় করছেন তারাও। কারণ, তাদের বিল কম আসবে। তিনি জানান, তিনি নিজেও কক্ষ থেকে বের হলে নিজের হাতে সুইচ বন্ধ করেন। নিজের কাজ নিজে করতে লজ্জার কিছু নেই। বিদ্যুৎখাতের উন্নয়নে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের ব্যর্থতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী জানান, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে বিদ্যুতের উৎপাদন ১৬০০ মেগাওয়াট থেকে ৪৩০০ মেগাওয়াট করেছিলালেন তিনি। কিন্তু ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে সেটি পেয়েছেন ৩২০০ মেগাওয়াট। আমার কাছে এটা ভাবতে অবাক লাগে যে মানুষ সামনের দিকে এগিয়ে যায়, কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোটে ক্ষমতায় এসে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ায়নি। তবে তারা দিয়েছিল, বিদ্যুৎ নাই কিন্তু রাস্তার পাশে খাম্বা পড়েছিল। তিনি আরও বলেন, আমরা জানতে পারলাম, তখনকার প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান খাম্বার ব্যবসা শুরু করেছিল। তাই দেশে খাম্বা দিয়েছিল, বিদ্যুৎ দেয়নি।
গতকাল বৃহস্পতিবার গণভবনে বসে ১২ জেলার ১৫টি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন এবং কুষ্টিয়ার ভেড়ামাড়ায় ৪১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধনের সময় এসব কথা বলেন তিনি। বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকারের উদ্যোগ এবং সাফল্য বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা শতভাগ বিদ্যুৎ বিভিন্ন এলাকায় দিতে পারছি, এখন উদ্বোধন করছি। আমরা চাই জনগণ এই বিদ্যুৎটা যেন জনগণ যথাযথভাবে ব্যবহার করুক। অনুরোধ করব জনগণকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে অনেক টাকা খরচ হয়। যে টাকা খরচ হয়, আমরা কিন্তু ওই টাকা গ্রহণ করি না, এখানে ভর্তুকি দেই। কম টাকাই নেয়া হয়। এক ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে যে খরচ, তার থেকে অনেক কম টাকাই কিন্তু আপনাদের কাছ থেকে নেয়া হয়।
তিনি বলেন, সে ক্ষেত্রে আমি প্রত্যেককে আমি বলব, বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। কীভাবে আপনি বিদ্যুৎ কম ব্যবহার করতে পারেন, কত স্বল্প বিদ্যুৎ ব্যবহার করে আপনার চাহিদা পূরণ করতে পারেন, সে বিষয়ে আপনাকে যতœবান হতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারি মাল দরিয়া মে ঢাল, এটা করলে কিন্তু চলবে না। প্রত্যেককে এ ব্যাপারে যথাযথভাবে আন্তরিক থাকতে হবে। ঘর থেকে বের হলে নিজ হাতে সুইটটা বন্ধ করা, স্কুল বা কলেজ বা অফিস আদালতে যারা আপনারা সরকারি কর্মচারী আছেন বা অফিসার আছেন নিজের হাতে সুইচটা বন্ধ করলে ফ্যানের, আপনার কোনো ক্ষতি হবে না। বরং আপনি আপনার দেশের সম্পদটা রক্ষা করলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি নিজে প্রধানমন্ত্রী হয়েও কিন্তু আমি যখন ঘর থেকে বের হই বা বাথরুম থেকে বের হয়ে নিজের হাতে কিন্তু সুইট বন্ধ করি। তাতে আমার কোনো সম্মান যায় না। নিজের কাজ নিজে করাতে কোনো লজ্জা থাকে না। যে সুবিধাটা আপনি পাবেন, সেটা হলো নিজে যদি সাশ্রয়ী হোন, তাহলে বিলটা কম হবে। বিদ্যুৎ বিল আপনাকে কম দিতে হবে।
বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের বেশ কিছু উপায় বাতলে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা যে মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ বা টেলিভিশন চালান, লাল বাতিটা যদি জ্বলে থাকে তাহলে কিন্তু বিদ্যুতের বিল উঠে। যদি সুইটচা অফ করে দেই আমার কিন্তু বিল উঠবে না। মোবাইল সেট চার্জ করে তারটা যদি সেভাবেই ফেলে রেখে দেই ওখানেও কিন্তু বিদ্যুতের বিল উঠবে। কিন্তু আমি যদি সুইট অফ করে দেই, তাহলে বিল উঠবে না।
তিনি বলেন, এই বিষয়গুলো কিন্তু বিশেষভাবে যেমন স্কুল কলেজ, সেখানে ফ্যান চলতেই থাকল, চলতেই থাকল সেটা যেন না হয়। সেখানে ছাত্র-ছাত্রী আছে, সেখানে কিন্তু তারা নিজেরাই বা শিক্ষকরা ছাত্র ছাত্রীদেরকে শেখাতে হবে, বিদ্যুৎটা নিজেদেরকেই সাশ্রয় করতে হবে। বিদ্যুৎ, পানি, এগুলো নিজেদেরই সব সময় সাশ্রয়ী হতে হবে। অপচয় যেন না হয়, সেদিকে দৃষ্টি দেবেন।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে যেসব উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুৎ উদ্বোধন করেন সেগুলো হলো: রংপুরের পীরগঞ্জ, কুষ্টিয়ার খোকসা, ঢাকার ধামরাই, কিশোরগঞ্জের নিকলী, চট্টগ্রামের রাউজান, সাতক্ষীরার দেবহাটা, খুলনার রূপসা, ফুলতলা এবং দীঘলিয়া, সিলেটের বিয়ানিবাজার, নাটোরের বাগাতিপাড়া, পাবনার বেড়ায়, চুয়াডাঙ্গা সদর এবং দিনাজপুর সদর ও বিরামপুর উপজেলায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি জেলায়, প্রতিটি উপজেলায়, প্রতিটি ইউনিয়নে যাতে বিদ্যুৎ পৌঁছায়, সেই ব্যবস্থাটা আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। তার ফলাফল এখন দেশের জনগণ পাচ্ছে। আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনের যেন আরও সক্ষমতা হয়, সে দিকে লক্ষ্য রেখে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা আমরা হাতে নিয়েছি।
২০২১ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৪ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা তখন ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিতে সক্ষম হবো। চাহিদা বাড়তে থাকবে, জীবনযাত্রার মান যত বাড়বে, চাহিদাও তত বাড়তে থাকবে। একশটা শিল্পাঞ্চল গড়ে তুলছি, সেখানে মানুষের কর্মসংস্থান হবে, সেখানেও বিদ্যুতের চাহিদা তত বাড়বে। যত বেশি উন্নয়ন হবে তত বেশি বাড়বে। এসব উদ্যোগের ফলে দেশের মানুষ স্বাবলম্বী হবে, দেশের মানুষ কাজ পাবে, এর মধ্য দিয়ে তাদের আর্থ সামাজিক উন্নতি হবে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।
তিনি বলেন, একটা মানুষও দরিদ্র থাকবে না, একটা মানুষও ক্ষুধার্ত থাকবে না, একটা মানুষও গৃহহারা থাকবে না। প্রতিটি মানুষই চিকিৎসা পাবে, আমাদের ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া শিখবে, দেশ উন্নত হবে, আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলব।
দক্ষিণ কোরিয়ার আরো বিনিয়োগ চান প্রধানমন্ত্রী
দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থে বাংলাদেশে আরো বিনিয়োগের জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতি আহŸান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সরকারি বাসভবন গণভবনে ঢাকায় নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার বিদায়ী রাষ্ট্রদূত আন সিওং-দো বিদায়ী সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ আহŸান জানান। বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
আইসিটি খাতের ঊল্লেখযোগ্য অগ্রগতির কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার ভারি শিল্পের পরিবর্তে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছে। তিনি ‘লার্নিং এন্ড আর্নিং প্রজেক্ট’ বিষয়টি তুলে ধরলে দক্ষিণ কোরিয়ার দূত তার প্রশংসা করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণ। থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম এবং লাওসসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে ভালো যোগাযোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সরকার এই দেশগুলোতে ব্যাবসা বাণিজ্য বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার দূত আশা প্রকাশ করেন, রফতানি প্রক্রিয়াকরণ জোন (ইপিজেড) এবং বিশেষ অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম শিল্প উৎপাদনকারী দেশে পরিণত হবে। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ কোরিয়া ইতোমধ্যেই যৌথ উদ্যোগে ইলেকট্রনিক পণ্য উৎপাদন শুরু করেছে। তার দেশ বাংলাদেশের গার্মেন্টস খাতের অন্যতম বিনিয়োগকারী। তিনি বলেন, বাংলাদেশ-কোরিয়া অর্থনৈতিক সহযোগিতার সম্পর্ক সফল। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতত্বে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অগ্রগতির প্রশংসা করেন। দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের সাত শতাংশর বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের উচ্চ প্রশংসা করেন এবং আরো অগ্রগতি কামনা করেন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশে তিনি সফলভাবে তার দায়িত্বকাল পার করেছেন এবং এ সময় আন্তরিক সহযোগিতা প্রদানের জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মো. নজিবুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রীর সচিব সাজ্জাদুল হাসান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।



 

Show all comments
  • গনতন্ত্র ১৩ এপ্রিল, ২০১৮, ২:৩৯ এএম says : 0
    জনগন বলছেন, “ মাসে পনর দিন ২৪ ঘন্টায় ৪ ঘন্টা করে বিদুৎ ,কিন্তু বিল কমেনা, সুইচ বন্ধেও বিল চলে ৷ “
    Total Reply(0) Reply
  • বিপ্লব ১৩ এপ্রিল, ২০১৮, ৫:৪১ এএম says : 0
    প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেশটি সবার গ্রহণ করা উচিত
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ