Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

১৬৪ ধারায় জবানবন্দি, নৈপথ্যে নারী ও মাদক

সিলেটে মা-ছেলে খুন

| প্রকাশের সময় : ১১ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম


সিলেট ব্যুরো : সিলেটে মা-ছেলে খুনের ঘটনায় সন্দেহভাজন প্রধান আসামি তানিয়া ও তার স্বামী মামুন আদালতে ১৬৪ ধারা জবানবন্দি দিয়েছেন। এ সময় তাদের কিভাবে খুন করা হয়েছে তা বিস্তারিত তথ্য উঠে এসেছে।
জবানবন্দিতে তানিয়া জানান, রাতের খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করা হয় রোকেয়া ও তারছেলে রোকনকে। এরপর রাত আনুমানিক ২টার দিকে রোকেয়ার গলায় ছুরি চালায় মামুন। এরপর রোকেয়ার ছেলে রোকনকে ছুরিকাঘাত করে তানিয়া ও মামুন। পাঁচ বছর বয়সী মেয়ে রাইসাকে মৃত ভেবে বাসা ত্যাগ করে তানিয়া ও মামুন দম্পত্তি। আর তারা এসব করেছে নারী ও মাদক সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে।
গতকাল মঙ্গলবার সিলেট মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (প্রসিকিউশন) অমূল্য কুমার চৌধুরী জানান, গত সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে তানিয়া ও মামুন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হরিদাস কুমারের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিদেয়। এর আগে সোমবার ভোর রাতে তানিয়াকে গ্রেফতার করে পিবিআই। পরে সোমবার সন্ধ্যায় আসামীদের কোতোয়ালী থানায় হস্তাস্তর করে পিবিআই। পরে পুলিশ রাতে তাদেরকে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণের জন্য আদালতে নিয়ে যায়।
জবানবন্দিতে তারা আরো জানায়, রোকেয়া বেগম ও তার ছেলে রবিউল ইসলাম রোকনকে অচেতন করে হত্যা করে তানিয়া ও মামুন। এসময় তারা স্বামী-স্ত্রী মিলে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে মা ও ছেলেকে। তাদের হত্যার পরিকল্পনায় ছিলো রোকেয়ার পরিবারের সবাইকে মেরে ফেলা। ভাগ্যবশত বেঁচে যায় শিশু রাইসা।
পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ৩০ মার্চ বিকেলে ঝড়ের সময় তার স্বামী মামুনকে নিয়েরোকেয়ার বাসায় যায় তানিয়া। রাতের খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে। রাত আনুমানিক ২টার দিকে মামুন ছোরা মারে রোকেয়ার গলায়। মৃত্যু নিশ্চিত করতে রোকেয়ার শরীরে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে। এরপর তারারোকেয়ারছেলে রোকনকে ছুরিকাঘাত করে।
আসামিদের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, তানিয়া আক্তার দুই বছর আগে সিলেটে হজরত শাহজালাল (র.)-এর মাজারে আসেন। এখানেই পরিচয় হয় রোকেয়াবেগমের সাথে। পাশাপাশি দেখা হয় মামুনের সাথেও। পরে রোকেয়া বেগম কুমিল্লা থেকে আসা তানিয়াকে বোন বানিয়ে সিলেটে রেখেদেন। এদিকে, মামুনের সাথেও তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এর কয়েক দিন পরই মামুনের সাথে তানিয়ার বিয়ে হয়। বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রী আলাদা আলাদা বসবাস করতেন। এদিকে রোকেয়া তানিয়াকে নিষিদ্ধ পথে নামান। আর একথা স্বামী মামুনকে জানালে রোকেয়া বেগমকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তারা। এর অংশ হিসেবে গত ৩০ এপ্রিল রাত ৮টার দিকে তানিয়া ও মামুন রোকেয়ার বাসায় যান। পরে রাতের খাবারের সাথে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে পরিবারের সবাইকে অচেতন করা হয়। রাত ১টার দিকে স্বামী-স্ত্রী মিলে প্রথমে রোকেয়া বেগমের কক্ষে যান। ঘুমে অচেতন রোকেয়া বেগমের মুখে কম্বল দিয়ে শ্বাসরোধ করার জন্য চেপে ধরেন তানিয়া আর ছুরি দিয়ে গলাকেটে ও কুপিয়ে রোকেয়াকে হত্যা করেন মামুন। পরে পার্শ্ববর্তী রুমে ঘুমে অচেতন রোকেয়ার ছেলে রোকনকেও একই কায়দায় হত্যা করেন তারা। এদিকে জীবিত উদ্ধার হওয়া রোকেয়া বেগমের পাঁচ বছর বয়সীমেয়ে রাইসাকেও তারা হত্যার উদ্দেশে ঘুমের ঔষধ খাওয়ায় এবং গলাচেপে ধরে। রাইসাও মারাগেছে এমন ধারণায় তারা রাতেই এই বাসা ত্যাগ করে।
পুলিশ আরও জানায়,রোকেয়ার ইয়াবা ব্যবসা ও অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত থাকার বিষয়টি জবানবন্দিতে তুলে ধরা ছাড়াও বিশদ বর্ণনাদেয় তারা। জবানবন্দি গ্রহণশেষে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশদেন।
উল্লেখ্য, গত ১ এপ্রিল নগরীর মিরাবাজারের খারপাড়া মিতালী আবাসিক এলাকার ১৫/জে নম্বর বাসায়রোকেয়াবেগম (৪০), তারছেলে রবিউল ইসলামরোকনের (১৭) গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময়রোকেয়ার সাড়ে ৩ বছর বয়সীমেয়ে রাইসাকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায়রোকেয়ার ভাই জাকিরহোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাত পরিচয় ৪-৫ জনকে আসামি করেকোতোয়ালী থানায় মামলা করেন। মামলার পর গত বুধবার শহরতলীর বটেশ্বর এলাকাথেকে নাজমুলহোসেন নামে একজনকেগ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তাকে ৭ দিনের রিমান্ডে পাঠান আদালত।





 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ