Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফুলগাজীতে উপজেলা চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে রাতের আঁধারে প্রতিবন্ধী মহিলাকে নির্যাতন

| প্রকাশের সময় : ১১ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ফেনী জেলা সংবাদদাতা : ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার সদর ইউনিয়নের কিসমত ঘনিয়ামোড়া গ্রামে রাতের অন্ধকারে উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক আবদুল আলীম, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মঞ্জুরা আজিজ, সদর ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি হাজী জামাল, ইউপি মেম্বার আবুল হাশেমের নেতৃত্বে প্রতিবন্ধী মহিলার উপর হামলা চালিয়ে ছুরিকাঘাতে মারাত্বকভাবে রক্তাক্ত করেছে সন্ত্রাসীরা। এসময় মারাত্বক আহতাবস্থায় ২ সন্তানসহ তাকে ঘর থেকে বের করে বাহিরে ফেলে দেয়। 

প্রতিবন্ধী ফরিদা বাহার রিনা, তার স্বামী বেলাল হোসেন, প্রত্যক্ষদর্শী ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার রাত সাড়ে নয়টার সময় পূর্ব শত্রæতার জের ধরে উল্লিখিতদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহনে হাবিবুল্লাহ বাহার, মনোয়ারা বেগম, হুমায়ুন বাহার রুমন, আরিফুল বাহার সুজনসহ অজ্ঞাত ১০/১২ জন বহিরাগত সন্ত্রাসী প্রতিবন্ধী রিনার ঘরে হামলা চালায়। এসময় উপজেলা চেয়ারম্যান পরিচয় দিয়ে দরজা খুলতে বলে। দরজা না খুললে বাইরে থেকে ভেঙ্গে ফেলা হবে বলে হুমকি দিলে প্রতিবন্ধী রিনা দরজা খুলতে বাধ্য হয়। কিছু বুঝে উঠার আগেই সন্ত্রাসীরা তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।
একপর্যায়ে ধারালো ছুরি দিয়ে তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কুপিয়ে আহত করে। এছাড়া শরীরের জামা কাপড় খুলে বিবস্ত্র করে শ্লীলতাহানি করা হয়। উপজেলা চেয়ারম্যান আলিম নিজে রিনার হাত ধরে টেনে হিঁচড়ে তাকে ঘরের বাহিরে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়া হয় বলে রিনা অভিযোগ করেন। তার স্কুলপড়–য়া মেয়ে ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী ফারজানা আক্তারকে পাঠরত অবস্থায় বই পত্র ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে জামা কাপড় ছিঁড়ে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে সন্ত্রাসীরা। পরে আবদুল আলীম ফারজানাকেও টেনে হিঁচড়ে বাইরে ফেলে দেয় এবং তোদের পরিবারের সবাই যদি আজকে রাতের মধ্যে এখান থেকে না গেলে জানে মেরে ফেলা হবে বলে ফারজানা জানায়। তার একমাত্র ছেলে প্রাইমারি স্কুলের ২য় শ্রেণীর ছাত্র জোবায়ের হোসেনকে ঘুমন্ত অবস্থায় সন্ত্রাসীরা হত্যার উদ্দেশ্যে গলায় ছুরি বসায়। ঘরে থাকা বেলালের বোন খায়রুন নেসা লুকিয়ে নিজেকে রক্ষা করে। সন্ত্রাসীরা চলে যাবার পর সে বেলালকে ফোন দিলে মারাত্বক আহতাবস্থায় প্রতিবন্ধী রিনাকে ফুলগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় বেলাল ও খায়রুন নেসা। কর্তব্যরত ডাক্তার তার শরীরের বিভিন্ন অংশে কাটা জায়গায় ব্যান্ডেজ ও চিকিৎসা দেন। এছাড়া প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ায় তার বিশ্রাম ও উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন বলে জানান। রিনা একজন জন্মগত প্রতিবন্ধী বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে ফেনীর আদালতে মামলার প্রস্তুতি চলছে। প্রতিবন্ধী রিনার অভিযোগের ব্যাপারে জানতে ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল আলীমকে ফোন করা হলে, তিনি রাতে সেখানে শালিস করতে যান বলে নিশ্চিত করেন। এসময় প্রতিবন্ধীর উপর হামলার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মঞ্জুরা আজিজও রাতে প্রতিবন্ধীর বাড়িতে যাবার কথা স্বীকার করেন। দলবল নিয়ে ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে প্রতিবন্ধীর উপর হামলা করা হয়েছে এমন প্রশ্নে তিনি উক্ত প্রতিবেদককে উপজেলায় গিয়ে দেখা করতে বলেন। স্থানীয় কয়েক সংবাদ কর্মীকে পত্রিকায় প্রতিবেদন না করতে ম্যানেজের প্রস্তাব দেয়া হয় বলে জানা গেছে। এ হামলার বিষয়ে জানতে ওসি হুমায়ুন কবিরের কাছে বার বার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। প্রতিবন্ধী রিনার স্বামী বেলাল জানান, তার বাড়িতে হামলার বিষয়টি রাতেই ওসিকে জানানো হয়েছে, কিন্তু তিনি কোন ব্যবস্থা নেননি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ