Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

বালাগঞ্জ-ওসমানীনগরে ১৬ হাজার হেক্টর বোরো আবাদ

| প্রকাশের সময় : ১১ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

বালাগঞ্জ (সিলেট) উপজেলা সংবাদদাতা: সিলেটের ওসমানীনগর-বালাগঞ্জ উপজেলায় এবার প্রায় ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। দুই উপজেলার আবাদকৃত বোরো ধান পাকা শুরু করেছে। কোথাও কৃষকদের ধান কাটতে দেখা গেছে। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে পুরোদমে কাটা শুরু হবে বলে কৃষক ও উপজেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে। বøাষ্ট রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে বোরো চাষীদের মধ্যে বিরাজ করছে হতাশা। বিশেষ করে ব্রি ২৮ জাতের ধানের মধ্যে এ রোগ দেখা দিয়েছে। এজাতের ধান অধিকাংশ ফসল বøাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে মরে যাওয়ায় ধানের শীষে সারশূন্য ধানের সংখ্যাই বেশী।
জানা যায়, গত বছরের অকাল বন্যায় বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগরের দুই উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের বোরো ফসলের পুরোটাই ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এবার সেই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে কৃষকরা বোরো আবাদে পুরোটা সময় ব্যয় করেন। অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছর একটু আগেই বোরো আবাদ শুরু করেছিলেন কৃষকরা। ইতিমধ্যে বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগরের হাওরে পাকা ধান কাটা শুরু হয়েছে। এ দুই উপজেলায় চলতি মৌসুমে প্রায় ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। বছরজুড়ে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের প্রভাবে উপজেলা দু’টির হাওরসমুহে বাম্পার ফলনের আশা প্রকাশ করছেন কৃষকরা। আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে পুরোদমে ধান কাটা শুরু হয়ে যাবে বলে কৃষকরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন। কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টি ও রাতে ঠান্ডা দিনে গরম হওয়ার কারণে ২৮ জাতের বোরো ধানের মধ্যে বøাষ্ট রোগ দেখা দেয়। ২৮ জাতের অধিকাংশ ফসল বøাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে মরে যাওয়ায় ধানের শীষে সারশূন্য ধানের সংখ্যাই বেশী।
আরো জানা যায়, গত বছর অতিবৃষ্টি আর অকাল বন্যায় বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগর উপজেলার হাওরের প্রায় সকল ফসল পানিতে তলিয়ে যায়। এতে কৃষকদের মধ্যে মারাত্মক দুর্যোগ দেখা দেয়। কৃষকরা গতবারের ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চলতি বছর বোরো জমির পাশাপাশি আউশ, আমন ক্ষেতের জমিতেও ব্যাপক বোরো আবাদ করেছেন। এ কারণে উপজেলা কৃষি অফিসের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ১৫ হাজার ৯ শ ২৫হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। চলতি মৌসুমে ভাল ফলনের ব্যাপারে আশাবাদ প্রকাশ করেছে বালাগঞ্জ ও ও সমানীনগর উপজেলা কৃষি অফিস।
উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, চলতি বছর বালাগঞ্জের ৬ টি ও ওসমানীনগর উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ১৫ হাজার ৯ শ ২৫হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। আবাদকৃত বোরো জমির মধ্যে রয়েছে হাইব্রিড ২ হাজার ২ শ ৯৫হেক্টর, উফশী ১২ হাজার ৫ শ ৯০হেক্টর, এবং স্থানীয় জাতের ১ হাজার ৪০হেক্টর।
চলতি বছর বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৩হাজার, ৯শ ৭৫হেক্টর।সেই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে আবাদ হয়েছে ১৫হাজার, ৯শত ২৫হেক্টর চাষাবাদ হয়। এর মধ্যে বালাগঞ্জ উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ হাজার ৯ শ ৬৫হেক্টর। আবাদ হয়েছে ৭ হাজার ৯ শ ৩০হেক্টর। ওসমানীনগর উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ হাজার ১০হেক্টর। আবাদ হয়েছে ৭ হাজার ৯ শ ৯৫হেক্টর। কৃষি অফিস জানায়, গত বছরের বন্যায় পলি জমে যাওয়া, ফসল হারানো কৃষকের মনোযোগ ও উপসহকারী কৃষি অফিসারদের বিরামহীন সহযোগিতার কারণে এবার ভালো ফলন হয়েছে।
ওসমানীনগরের অধিকাংশ কৃষকই বর্গাচাষী। গতবছর দীর্ঘ মেয়াদী বন্যায় ফসল হারিয়ে একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়েন তারা। ফসল হারানো কষ্টভুলে চলতি মৌসুমে অতিরিক্ত বোরো আবাদ করেছিলেন। প্রতিবছরের মতো ব্রি-২৮, ২৯সহ বিভিন্ন জাতের ধান ভিবিন্ন উচ্চ ফলনশীল ধান চাষ করেন কৃষকরা। আগাম পাকে বলে প্রতিবছরের ন্যায় বেশিরভাগ জমিতে ব্রি-২৮ জাতের ধান চাষ করেছিলেন কৃষকরা। কিন্তু বøাষ্ট রোগের কারণে এজাতের ফসল ভালো হয়নি।
কালাসারা হাওরের কৃষক মোশাহিদ আলী জানান, ধান দেখতে সুন্দর কিন্তু ভিতরে সার শূণ্য। কৃষক বশির মিয়া বলেন, টাকার বিনিময়ে জমি নিয়ে প্রায় ৭ একর জমিতে ব্রি ২৮ জাতের ধান চাষ করেছিলাম। ধান পাকা শুরু হতেই মরা শুরু করে। চার ভাগের এক ভাগ ধান পাবো বলে মনে হয় না। শ্রমিকের অভাবে পাকা ধান গুলোও ঘরে তুলতে পারছিনা।
গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের সাবেক সেক্রেটারী সাইস্তা মিয়া বলেন, হাওরে যারা ব্রি-২৮ চাষ করেছেন সকলের একই অবস্থা। নিজের প্রায় ৫একর জমিতে ফসল ফলিয়ে ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন বলে জানান তিনি।
সাদীপুর, উমরপুর, বুরুঙ্গা, দয়ামীর ও উছমানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া, আবদুর রব, এমজি রাসুল খালেক, তাজ মোহাম্মদ ফখর ও ময়নুল আজাদ ফারুক বলেন, ব্রি-২৮ জাতের ধান বøাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে নষ্ট হয়ে গেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল মালেক ও ওসমানীনগর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা নাসিম হোসাইন জানান, চলতি মৌসুমে বোরো ফসল যথেষ্ট ভাল হয়েছে। বছরজুড়ে স্বাভাবিক বৃষ্টির প্রভাবে ফলন অনেক তাড়াতাড়ি পাকতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে প্রায় সকল হাওরে ধান পাকা শুরু করেছে। হঠাৎ বৃষ্টি এবং রাতে ঠান্ডা ও দিনে গরম হওয়ার কারণে বিক্ষিপ্তভাবে কিছু কিছু স্থানে বøাষ্ট রোগ দেখা দেয়। পূর্ব থেকে কৃষকদের সচেতন করে দেয়ার কারণে বোরো ধানের উপর তেমন কোন প্রভাব পড়েনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ধান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ