Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রক্ষণাবেক্ষণ ক্যাটারিং সেন্টার মার্কেটিং ও সেলস শাখায় বিমানের বেশি দুর্নীতি

দুদকের বার্ষিক প্রতিবেদন

| প্রকাশের সময় : ১১ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সেবার মান বাড়েনি। বেড়েছে সীমাহীন দুর্নীতি আর লুটপাট। সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয় রক্ষণাবেক্ষণ খাতে, বিমানের ফ্লাইট ক্যাটারিং সেন্টার, মার্কেটিং, সেলস এবং প্রকিউরমেন্ট খাতে। আর দুর্নীতির উৎস হিসাবে মার্কেটিং, সেলস এবং প্রকিউরমেন্ট শাখাকে চিহ্নত করা হয়েছে। বিমানের যাবতীয় কেনা-কাটা এই শাখা করে থাকে। এই শাখায় তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের বাইরে কর্মকর্তাদের পছন্দের প্রতিষ্ঠান হতে মালামালসহ স্পেয়ার পার্টাস ক্রয় করা হয়। সে ক্ষেত্রে অতিরিক্ত বিল-ভাউচার করে তা ভাগাভাগি করে প্রতিবছর শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করছে বিমানের দুর্নীতিবাজরা। সম্পূর্ণ বাংলাদেশ সরকারের মালিকানায় পরিচালিত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এসব দুর্নীতির প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দুদক।
গত রোববার দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকারের সম্পূর্ণ মালিকানায় পরিচালিত উড়োজাহাজ হচ্ছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। ১৯৭২ সালের ২৭ অক্টোবর যাত্রা শুরু করা জাতীয় পতাকাবাহী এ বাহন প্রবাসী শ্রমিকদের কাছে জনপ্রিয়। তবে বিশ্বমানের আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্স বিবেচনায় বিমানের সেবা এখনো পশ্চাৎপদ। দুদকের প্রতিবেদনে বিমানের তিনটি খাতে দুর্নীতির কথা বলা হয়েছে।
এর মধ্যে প্রথম হচ্ছে- রক্ষণাবেক্ষণ ও ওভারহেল্ডিং। এ খাত সম্পর্কে বলা হয়েছে, বিমানের সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয় রক্ষণাবেক্ষণ খাতে। এই খাতে বিমানের বিভিন্ন যন্ত্রাংশসহ প্রয়োজনীয় সরাঞ্জম কেনা-কাটা হয়। তাছাড়া মেরামতের জন্য বিমান বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়। এসব কেনা-কাটার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকমানের দরপত্রে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়। সাধারণত বিমানের বোর্ড পরিচালক ও কর্মকর্তারা নিজেরা লাভবান হওয়ার জন্য তাদের পছন্দসহ প্রতিষ্ঠানকে ঠিকাদার নিয়োগ করে কার্যাদেশ দেয়। আর বিমানের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ও সরঞ্জামাদি ক্রয়ের ক্ষেত্রে শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়।
এ ছাড়া নিন্মমানের যন্ত্রাংশ অতি উচ্চ মূল্যে ক্রয় দেখিয়ে ঠিকাদার ও নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগসাজশে টাকা আত্মসাৎ করা হয় বলে দুদকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। তাছাড়া বিমান মেরামতের জন্য তাদের পছন্দসহ বিদেশি প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে অতি উচ্চ মূল্যের বিল দেখিয়ে ভাগাভাগির মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ করা হয় মর্মে জনশ্রæতি রয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণ খাতের দুর্নীতি রোধে চারটি সুপারিশও করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
সুপারিশগুলো হচ্ছে- এক. বিমানের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ও সরঞ্জাম ক্রয়ের তালিকা, কবে, কখন ও কত দামে এবং কোন প্রতিষ্ঠান থেকে কেনা বা সেবা নেওয়া হয়েছে এসব রেকর্ডপত্র পর্যলোচনা করে বোর্ড সভায় উপস্থিত করা যেতে পারে।
দুই. দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা সমীচীন।
তৃতীয়. রক্ষাণাবেক্ষণ ও ওভারহেলিং খাতে কেনাকাটার সময় আন্তর্জাতিক দরপত্রের নিয়ম সঠিকভাবে পরিচালনা হচ্ছে কিনা, তা পর্যালোচনার জন্য বিশেষজ্ঞ টিম গঠন করা।
চতুর্থ. টেন্ডার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনয়নের লক্ষ্যে ই-জিপি বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে।
বিমানে দুর্নীতির অন্যতম উৎস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে বিমান ফ্লাইট ক্যাটারিং সেন্টার (বিএফসিসি) খাতকে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিএফসিসি কর্তৃক উড়োজাহাজসমূহে প্রতিদিন নিন্মমানের খাবার পরিবেশনের কারণে কয়েকটি দেশের উড়োজাহাজ খাবার না নেওয়ার ফলে প্রতিবার বাংলাদেশ বিমানকে কেবল বিএফসিসি খাতে কোটি কোটি টাকা লোকসান দিতে হচ্ছে। ফলে বিমানকে প্রতিবছর লোকসান গুণতে হচ্ছে। বিদেশি কোম্পানিগুলো কী কারণে বিএফসিসি থেকে খাবার গ্রহণ করে না তৎসংক্রান্ত রেকর্ডপত্র ও বিএফসিসির অনুকূলে বরাদ্দ করা অর্থ ও ব্যয়িত অর্থের বিল ভাউচার পর্যালোচনা করলে কথিত আত্মসাতের চিত্র ফুটে উঠবে। বিএফসিসি খাতে দুর্নীতিরোধে তিনটি সুপারিশ করা হয়েছে দুদকের প্রতিবেদনে।
এক. আন্তর্জাতিকমানের সেফ নিয়োগ দিয়ে খাবারের মান উন্নত করা।
দুই. বিএফসিসি শাখায় নজরদারি বৃদ্ধি করা, যাতে অর্থের সঠিক ব্যবহার হয়।
তিন. অন্যান্য উড়োজাহাজগুলো যাতে বিএফসিসি থেকে খাবার নেয়, সে বিষয়ে পর্যালোচনা করে দ্রæত ব্যবস্থা নেওয়া।
এদিকে মার্কেটিং, সেলস এবং প্রকিউরমেন্ট শাখায় দুর্নীতির উৎস প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, বিমানের যাবতীয় কেনা-কাটা এই শাখা করে থাকে। এই শাখায় তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের বাইরে কর্মকর্তাদের পছন্দের প্রতিষ্ঠান হতে মালামালসহ স্পেয়ার পার্টাস ক্রয় করা হয়। সে ক্ষেত্রে অতিরিক্ত বিল-ভাউচার করে তা ভাগাভাগি করে আত্মসাৎ করেন মর্মে জানা গেছে।
এ সমস্যা নিরসনে দুটি সুপারিশ করা হয়েছে। প্রথমত, ক্রয় ও রক্ষণাবেক্ষণ ক্ষেত্রে পিপিআর ও আন্তর্জাতিক নীতিমালা অনুসরণ নিশ্চিত করা। দ্বিতীয়ত, ক্রয় কমিটিতে নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেওয়া। ##

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ