পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পঞ্চায়েত হাবিব : বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর দেশে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছিল ২০০৯ সালের ৬ জুন। সেই বিদ্যুতের পরিমাণ ছিল তিন হাজার ২৬৮ মেগাওয়াট। এরপর প্রতিবছরই দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে। সর্বশেষ গত মার্চ সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ১০ হাজার ৮৪ মেগাওয়াট। অর্থাৎ ৯ বছরের ব্যবধানে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের পার্থক্য ছয় হাজার ৮১৬ মেগাওয়াট। এছাড়া ৯ বছরে এক লাখ ৮০ হাজার কিলোমিটার নতুন বিতরণ লাইন নির্মাণ করা হয়েছে।সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের তুলনামূলক চিত্রই বলে দিচ্ছে বিদ্যুৎখাতের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া লোডশেডিংয়ের দুর্বিষহ যন্ত্রণা কিছুটা কমেছে। যদিও মাঝে মধ্যে বিতরণ ত্রুটিতে ভুগছেন গ্রাহক। রাজধানীর সব এলাকায় যেখানে প্রতিঘণ্টায় লোডশেডিং হতো, সেই অবস্থা অনেক এখন অনেক সহনীয় পর্যায়ে এসেছে। শিল্পের মারাত্মক সংকটও আর নেই। গত কয়েক বছর ধরে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক বলেই মত সংশ্লিষ্টদের। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দেশের প্রতিটি ঘরে পর্যায়ক্রমে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার কাজ শেষ করা হবে ২০২১ সাল নাগাদ। এ জন্য বিদ্যুৎতের উৎপাদন যা-ই হোক না কেন, প্রতিমাসেই নতুন তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে প্রতিমাসে নতুন গ্রাহক যুক্ত হওয়ায় সংকট সৃষ্টি হলেও তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ইনকিলাবকে বলেন, সবার ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার অঙ্গীকার নিয়ে সরকার কাজ করছে। উপজেলাভিত্তিক শতভাগ বিদ্যুতায়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রতিদিন চাহিদা বাড়ছে। শহরে বিদ্যুৎ চাহিদার গড় প্রবৃদ্ধি ২০ ভাগের কাছাকাছি। সরকার চাহিদা মাথায় রেখে নতুন নতুন প্রকল্প নেয়া হচ্ছে।
পিডিবির সদস্য (উৎপাদন) সাঈদ আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, চাহিদার ওপর নির্ভর করে আমরা উৎপাদন বৃদ্ধি করছি। এপ্রিলে ৮০০ মেগাওয়াটের তেল চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসবে। এছাড়া একই সময়ে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) এলে আরও ৪০০ থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। এপ্রিল ও মে মাসজুড়ে কমপক্ষে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। এতে গ্রীষ্মে সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে। পিডিবির ওয়েবসাইট বলা হয়, গত ১৫ মার্চ দেশে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯ হাজার ৭১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। এছাড়া গত বছরের ১৮ নভেম্বর বিদ্যুৎ উৎপাদন ওই বছরের সর্বোচ্চ ছিল ৯ হাজার ১১ মেগাওয়াট। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০১৬ সালের ৩০ জুন সাত হাজার ৪৮৫ মেগাওয়াট সর্বোচ্চ উৎপাদন হয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, বিগত নয় বছরে বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নের জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে নতুন ৮৮টি বিদ্যুৎৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। আর এ সময়ে অবসরে গেছে মাত্র তিনটি কেন্দ্র। ২০০৯ সালে দেশে বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ছিল মাত্র ২৭টি আর এখন বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ১১২টি। পাওয়ার সেলে হিসেবে , ২০০৯ সালে দেশে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা ছিল চার হাজার ৯২৪ মেগাওয়াট। এখন ক্যাপটিভসহ যা ১৬ হাজার ৪৬ মেগাওয়াটে দাঁড়িয়েছে। ওই সময় বিদ্যুতের সুবিধা পেতো ৪৭ ভাগ জনগণ। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৩ ভাগে। পিডিবি জানিয়েছে,২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রতি বছরই নতুন কেন্দ্র উৎপাদনে এসেছে। ২০০৯ সালে মোট ১২টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে, যেগুলোর মোট ক্ষমতা ৩৫৬ মেগাওয়াট। ২০১০ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে মোট ৯টি কেন্দ্র স্থাপন করা হয়, যেগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা ৭৭৫ মেগাওয়াট। ২০১১ সালে এক হাজার ৭৬৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার ২২টি, ২০১২ সালে ৯৫১ মেগাওয়াটের ১১টি, ২০১৩ সালে ৬৬৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার পাঁচটি,২০১৪ সালে ৬৩৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার সাতটি, ২০১৫ সালে এক হাজার ৩৫৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার সাতটি, ২০১৬ সালে এক হাজার ১৩২ মেগাওয়াট ক্ষমতার আটটি এবং গত বছর এক হাজার ১৮৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার সাতটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া ২০১৩ সালে ভারত থেকে ৫০০ মেগাওয়াট, ২০১৬ সালে ১০০ মেগাওয়াট এবং গত বছর আরও ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি শুরু করা হয়েছে। উৎপাদন বাড়ার পাশাপাশি গত ৯ বছরে বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইনও বেড়েছে। ২০০৯ সালে মোট বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন ছিল আট হাজার কিলোমিটার। এখন যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৬৮০ কিলোমিটারে। গ্রিড সাবস্টেশনের ক্ষমতা ছিল ২০০৯ সালে ১৫ হাজার ৮৭০ এমভিএ। এখন যার পরিমাণ ৩০ হাজার ৯৯৩ এমভিএ। নতুন নতুন এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরণ করায় ব্যাপকভাবে বিতরণ লাইন বৃদ্ধি করা হয়েছে। ৯ বছরে এক লাখ ৮০ হাজার কিলোমিটার নতুন বিতরণ লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। ২০০৯ সালে বিতরণ লাইন ছিল দুই লাখ ৬০ হাজার কিলোমিটার, এখন যা বেড়ে চার লাখ ৪০ হাজার কিলোমিটারে দাঁড়িয়েছে। মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ২২০ কিলোওয়াট ঘণ্টা থেকে বেড়ে ৪৩৩ কিলোওয়াট ঘণ্টায় দাঁড়িয়েছে। সাধারণ গ্রাহকের সংখ্যা এক কোটি আট লাখ থেকে বাড়িয়ে দুই কোটি ৮৭ লাখে দাঁড়িয়েছে। কৃষিকাজে বিদ্যুৎ ব্যবহারের পরিমাণও বেড়েছে। ২০০৯ সালে দুই লাখ ৩৪ হাজার সেচপাম্প বিদ্যুতে চলতো, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ৬১ হাজারে।
পিডিবির চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ ইনকিলাবকে বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতার আসার পর বিদ্যুতের যে মহাপরিকল্পনা গ্রহন করেছে। এতে ২০২১ সালের মধ্যে দেশের মানুষ শতভাগ বিদ্যুৎৎ পাবেন। বিদ্যুতের উৎপাদন যেমন বাড়ছে তেমনি বাড়ছে চাহিদাও। জনগনের চাহিদা পূরণে সরকারও বদ্ধপরিকর। মহাপরিকল্পনার স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়েছে। খালেদ মাহমুদ বলেন, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এ বছর বেশ কয়েকটি বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসবে। বর্তমানে মাতারাবাড়ি, রামপাল ও পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ দ্রæত এগিয়ে চলেছে। এগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট করে। এসব কেন্দ্রর ৪০ ভাগের মতো কাজ শেষ হয়েছে। ২০২১ সাল পর্যন্ত নতুন বিদ্যুৎ উৎপাদনে আনার পরিকল্পনা করেছে। সে অনুযায়ী এ বছর জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে চার হাজার ৬৭৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। একইভাবে ২০১৯ সালে চার হাজার ৮৩৩, ২০২০ সালে চার হাজার ৭২ এবং ২০২১ সালে তিন হাজার ৪৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার কথা। এ চার বছরে যুক্ত হওয়া বিদ্যুতের মধ্যে সরকারি খাত থেকে আসবে আট হাজার ২৯৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ এবং বেসরকারি খাত থেকে সাত হাজার ৪৯৫ মেগাওয়াট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।