পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মোট ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের আওতায় প্রথম পর্যায়ে ৯টি স্থানে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী ৯টি জেলা-উপজেলার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। প্রাথমিকভাবে- গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়া, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, সিলেট, ঝালকাঠি, খুলনা, বগুড়া, নোয়াখালী এবং রংপুরে এই মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টার নির্মাণ করা হবে।
৯ মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইসলামকে শান্তির ধর্ম উল্লেখ করে বলেন, ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা মানুষের কাছে তুলে ধরতেই সরকার কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম। এই শান্তি যেন বজায় থাকে সেইদিকে আমরা লক্ষ্য রাখছি।
দেশে সকল ধর্মের মানুষ বাস করে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেক ধর্মের মানুষই এদেশে স্বাধীনভাবে তার নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারবে। এটাই ছিল জাতির পিতার চেতনা এবং চিন্তা। তাই তিনি বলেছিলেন, ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয় বরং ধর্ম পালনের স্বাধীনতা। যেটা ইসলামেরও মূল কথা। কারণ ইসলাম সকল ধর্মকে সম্মান করে। বাংলাদেশ সেভাবেই একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনায় গড়ে উঠবে, আমরা সেটাই চাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসলাম প্রচার ও প্রসারের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ২২ মার্চ ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। এই ধর্মের প্রচার ও প্রসারে জাতির পিতা আরও অনেক কাজ করে দিয়েছিলেন উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসলামের নাম নিয়ে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করে ধর্মের মূল শিক্ষা থেকে মানুষকে সরিয়ে নেয়া এবং নিরীহ মানুষ হত্যা করে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ সৃষ্টির মাধ্যমে আমাদের এই পবিত্র ধর্মের সুনাম নষ্ট করা হচ্ছে। আমরা চাই- ধর্মের মর্যাদা সমুন্নত থাকবে। তিনি বলেন, আজকে জাতির পিতা আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু এই দেশটা তিনি আমাদের দিয়ে গেছেন। তিনি চেয়েছিলেন এই দেশকে উন্নত-সমৃদ্ধশালী করে গড়ে তুলতে এবং যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলে সে পথে যাত্রাও শুরু করেছিলেন। কিন্তু তা সম্পন্ন করতে পারেননি। কারণ ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। আর এরপরেই বাংলাদেশ পিছিয়ে গেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসলামের প্রকৃত শিক্ষাটা যেন মানুষ পায় এবং ইসলামী সংস্কৃৃতিটা মানুষ যেন ভালভাবে রপ্ত করতে পারে, চর্চা করতে পারে, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি। প্রতিটি জেলায়-উপজেলায় আমরা ৫৬০টি মডেল মসজিদ তৈরি করব। যেখানে সত্যিকারভাবে ইসলাম ধর্মের চর্চা হবে । সারাদেশে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের চাকরি রাজস্ব খাতে নিয়ে আসাতেও সরকারের পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন তিনি।
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে জাতির উদ্দেশ্যে বেতারে বঙ্গবন্ধু প্রদত্ত ভাষণের উদ্বৃতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ইনসাফের ইসলামে বিশ্বাসী। আমাদের ইসলাম হযরত নবী করিম (সা:) এর ইসলাম। যে ইসলাম জগৎবাসীকে শিক্ষা দিয়েছে- ন্যায় ও সুবিচারের অমোঘ মন্ত্র। আমরা সেটাই বিশ্বাস করি এবং আমাদের ধর্মের সেই মর্যাদাটা সমুন্নত থাকুক।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই বাংলাদেশে কোন সন্ত্রাস,জঙ্গিবাদ ও মাদক থাকবে না। প্রতিটি মানুষ শান্তিতে বসবাস করবে। তাদের আর্থসামাজিক উন্নতি হবে এবং বাংলাদেশ জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে উঠবে। দেশ যেন সব দিক থেকে উন্নত হয় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে সেই প্রার্থনা করে তিনি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সবসময় চেষ্টা করি আমাদের পবিত্র ধর্ম সম্পর্কে মানুষ যেন জানতে পারে এবং ধর্ম পালনে আরো উৎসাহিত হতে পারে। তারা ধর্ম চর্চাটা যেন করে এবং বাংলাদেশকে একটি শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে আমরা গড়ে তুলতে পারি। সরকারের উদ্যোগে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের জন্য ট্রাস্ট ফান্ড গঠনের উদ্যোগ তুলে ধরে তিনি বলেন, আগে তাঁদের জন্য (ইমাম-মুয়াজ্জিনদের) কোন ব্যবস্থা ছিল না। আমি প্রথমবার যখন প্রধানমন্ত্রী হই সেই সময় এই ইমাম-মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্ট ফান্ড করে দেই।
মসজিদ প্রকল্পের উদ্বোধনের পরে প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, সিলেট, ঝালকাঠি, খুলনা, বগুড়া, এবং নোয়াখালীর বিভিন্ন শ্রেনী-পেশার জনগণের সঙ্গে মত বিনিময় করেন। অনুষ্ঠানে ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান শুভেচ্ছা বক্তৃতা করেন এবং ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব আনিসুর রহমান প্রকল্পের ব্যাখ্যা দেন।
জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের নেত্রী রওশন এরশাদ ময়মনসিংহ প্রান্ত থেকে এবং বাংলাদেশ ইমাম সমিতির সভাপতি কাজী শাকের আহমেদ চট্টগ্রাম প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সে বক্তৃতা করেন। ভিডিও কনফারেন্সটি সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে
কুমিল্লায় ৪ প্রকল্প উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রীর
মুন্সী কামাল আতাতুর্ক মিসেল চান্দিনা থেকে
কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুর-হোমনা সেতু এবং কুমিল্লা শাসনগাছা রেলওয়ে ওভারপাস ও ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের পদুয়া বাজার রেলওয়ে ওভারপাস উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এই দেশটা আমাদের সকলের, সবাই মিলে দেশকে গড়ে তুলতে হবে। গণভবন থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সমাপ্ত এই প্রকল্পগুলো উদ্বোধন করেন তিনি। এসময় তিনি কুমিল্লার জনগণ, সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরসহ তিন প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। নির্মিত চারটি সেতুর মধ্যে গৌরীপুর-হোমনা সেতুটি উল্লেখযোগ্য। এতে গৌরীপুর থেকে হোমনা ও মুরাদনগর হয়ে কোম্পানীগঞ্জ পর্যন্ত সড়কটি বেইলি সেতুমুক্ত হয়েছে এবং যাত্রাপথ সহজ, নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত হয়েছে।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ৯৪ কোটি ছয় লাখ টাকা ব্যয়ে কুমিল্লা শহরের শাসনগাছায় ৬৩১ দশমিক ৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ওভারপাসটি নির্মাণ করেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চার লেইন প্রকল্পের আওতায় কুমিল্লার পদুয়া বাজারে ৩৪৪ দশমিক ১৭৫ মিটার দৈর্ঘ্যের এই ওভারপাসটি ৩০ কোটি ৪৬ লাখ ৭১ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। ২৬টি স্প্যান ও ২৪টি পিয়ারের এই ওভারপাসের কাজ ২০১৬ সালের মার্চ থেকে গত বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হয়েছে। কোম্পানীগঞ্জ-মুরাদনগর-হোমনা মহাসড়কে গৌরীপুর-হোমনা সেতুটি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তত্ত¡াবধানে নির্মিত হয়েছে।
১১২ দশমিক ৬১ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ দশমিক ২৫ মিটার প্রস্থের এই সেতুটি নির্মাণে ৭৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। গৌরীপুর-হোমনা সড়কটি কুমিল্লা-সিলেট হাইওয়ে পর্যন্ত স¤প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় চারটি ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি সেতুর স্থলে চারটি পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ এবং দেড় কিলোমিটার হোমনা বিকল্প সড়ক নির্মাণসহ মোট ২৩ দশমিক ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ কোম্পানীগঞ্জ-মুরাদনগর-হোমনা জেলা মহাসড়ক উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেডসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি। তাই দেশটাকে আমাদের সকলে মিলে গড়ে তুলতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, বিজয়ী জাতি হিসেবে আমরা বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবো। উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ে তুলে জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবো। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কুমিল্লার প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।