পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভক্স
(গত সংখ্যার পর)
যে সব বিশেষজ্ঞ ভারত-পাকিস্তান পারমাণবিক যুদ্ধ নিয়ে একটি মডেল তৈরি করেছেন তারা বলেন, একবার পারমাণবিক অস্ত্র নিক্ষিপ্ত হলে তা থেকে বিরত থাকা উভয়পক্ষের জন্যই প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। তার অর্থ হবে এই যে দু’পক্ষই তাদের ভান্ডারে থাকা একশ বা তার চেয়েও বেশি সংখ্যক অস্ত্র পরস্পরের জনবহুল কেন্দ্রগুলোতে নিক্ষেপ করবে। এর ফলে সৃষ্ট আগুনঝড় থেকে সৃষ্টি হবে তেজস্ক্রিয় ছাইয়ের মেঘ যা আকাশ অন্ধকার করে ফেলবে, তাপমাত্রা শীতল করবে এবং এক দশক বা তার বেশি সময়ের জন্য বিশ^ব্যাপী কৃষিকে বিপর্যস্ত করবে। লাখ লাখ মানুষ মারা যাবে, লাখ লাখ মানুষ স্থানচ্যুত ও খাদ্যাভাবের সম্মুখীন হবে। আমরা প্রবেশ করব বিজ্ঞানীদের ভাষায় পারমাণবিক শীতল যুগে।
ভারত বলেনি যে সে কিভাবে তার পারমাণবিক সাবমেরিনগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করবে। স্ট্যানফোর্ড বিশ^বিদ্যালয়ের বিশ্লেষক ও ভারতের সাবমেরিন কর্মসূচি বিষয়ে একটি গ্রন্থের রচয়িতা যোগেশ যোশি বলেন, এ ব্যাপারে প্রচুর সন্দেহ রয়েছে যে সবের যথেষ্ট ব্যাখ্যা নেই। তারা এমন আচরণ করছে যে এগুলো ভবিষ্যতের বিষয়, এ নিয়ে তারা পরে ভাবলেও চলবে।
পরস্থিতি আরো শংকাজনক হবে যদি পাকিস্তান তার হুমকি অনুযায়ী পানির উপরের যুদ্ধ জাহাজকে পারমাণবিক অস্ত্র সজ্জিত করতে শুরু করে। এটা হলে কিছু যুদ্ধজাহাজ পারমাণবিক অস্ত্র বহন করবে, কিছু জাহাজ করবে না। এই দু’ধরনের রীতি সকল ধরনের ভুল, ভুলবোঝাবুঝি, ভুল হিসাব ও দুষ্কর্মের সকল পথ খুলে দেবে। এ সব জাহাজ থেকে যদি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয় তখন ভারত কিভাবে জানবে যে এটি পারমাণবিক অস্ত্র বহন করছে কিনা।
সাবেক ভারতীয় নৌবাহিনী কর্মকর্তা ও বর্তমানে নয়াদিল্লীর দি অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেেেলা অভিজিত সিং হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, সর্বশেষ রণক্ষেত্রের দিকে ধাবিত করবে।
আরেকটি বড় শংকা, বিশেষ করে পাকিস্তানের ক্ষেত্রে যে পারমাণবিক অস্ত্র কোনো না কোনো ভাবে সন্ত্রাসীদের হাতে পড়বে। পাকিস্তানের বর্তমান স্থলভিত্তিক অস্ত্র ভান্ডার , যুদ্ধাস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র পৃথক স্থানে মজুদকৃত। সে গোপন স্থানগুলোতে রয়েছে কড়া পাহারা।
কিন্তু যুদ্ধ জাহাজ ও সাবমেরিনের ক্ষেত্রে তা সম্ভব নয়। পারমাণবিক অস্ত্র নাাড়াচাড়া ও মজুদ করতে হবে করাচিতে নৌবাহিনী ডক ইয়ার্ডে কিংবা বালুচিস্তানের নতুন কামরা স্থাপনায়। দু’ক্ষেত্রেই সন্ত্রাসীরা জানতে পারবে যে তারা যা চায় তা কোথায় পাওয়া যাবে।
আল কায়েদা ইতোমধ্যেই এসব স্থাপনায় হামলার আগ্রহ ও সক্ষমতা প্রদর্শন করেছে। করাচির বিস্তৃত নৌ ঘাঁটিতে পাকিস্তান নৌবাহিনীর বিমান শাখার সদর দফতর মেহরান নৌ স্টেশন পাকিস্তান বিমান বাহিনীর সুবিশাল ফয়সাল ঘাঁটির সংলগ্ন যা পারমাণবিক অস্ত্রের সম্ভাব্য মজুদস্থল।
২০১১ সালে ৫ থেকে ২০ জনের ভার অস্ত্রসজ্জিত একটি দল নিরাপত্তা বেষ্টনী পেরিয়ে ঘাঁটির মধ্যে ঢুকে পড়ে ও ২টি পি-৩সি ওরিয়ন সাবমেরিন বিধ্বংসী বিমান ধ্বংস করে। প্রাথমিক ভাবে পাকিস্তানি তালিবান এ হামলার দায় স্বীকার করলেও পরে নির্ভরযোগ্য তথ্যে জানা যায় যে আল কায়েদা এ হামলা চালিয়ে থাকতে পারে। এ ঘটনায় যা স্পষ্ট হয় তা হল যে হামলাকারীরা ঘাঁটির ভিতর থেকে সাহায্য পেয়েছিল।
মেহরান ঘাঁটিতে হামলা উপলক্ষে ভারত ও পাকিস্তান উভয়েই তাৎক্ষণিকভাবে তাদের পারমাণবিক অস্ত্র উচ্চ সতর্কতায় রাখে। কারণ মেহরান ঘাঁটি ছিল পাকিস্তানের অন্যতম প্রধান পারমাণবিক অস্ত্র মজুদাগারের পাশেই। এ হামলার ঘটনা উভয় দেশকেই তাদের অস্ত্রের নিরাপত্তার ব্যাপারে উদ্বেগে ফেলে দেয়।
সাবেক ভারতীয় নৌ কর্মকর্তা সিং বলেন,পাকিস্তান নৌবাহিনী উচ্চমাত্রার পেশাদার হিসেবে পরিচিত। তাদের উপর হামলা আমাদের জন্যও উদ্বেগ জনক।
এসব ঘটনা যদিও উদ্বেগজনক, অধিকাংশ বিশেষজ্ঞই একমত যে পাকিস্তান তার পারমাণবিক অস্ত্র নিরাপত্তার ক্ষেত্রে চমৎকার কাজ করেছে। ভারত, দেশীয় সন্ত্রাসী ও মার্কিন সামরিক বাহিনীর কাছ থেকে তাদের অস্ত্র ভান্ডারকে রক্ষা করা পাকিস্তানের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।
তাদের বিবেচনায় এক ধরনের বø্যাকমেইলে কুপিত হয়ে ভারতীয় সামরিক বাহিনী এমন একটি কৌশল উদ্ভাবনের কথা ভাবছে যাতে তারা কোনো পারমাণবিক পাল্টা আঘাত না করে পাকিস্তানকে শাস্তি দিতে তাদের উন্নত প্রচলিত শক্তি ব্যবহার করতে পারে।
এদিকে পাকিস্তান তার ‘বিশ^াসযোগ্য ন্যূনতম নিবৃত্তি’ মতবাদ থেকে সরে এসে তাদের ভাষায় ‘পূর্ণ পর্যায়ে নিবৃত্তি’ মতবাদে স্থিত হয়েছে যার অর্থ দাঁড়ায় সম্ভবত ভারতীয় আগ্রাসনের ক্ষেত্রে তার নিজ ভ‚খন্ডে নি¤œমাত্রার কৌশলগত যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার যোগ্য পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার। এটা হবে পারমাণবিক নিবৃত্তির ইতিহাসে আরেকটি প্রথম অমিমাংসিত ঘটনা।
¯œায়ু যুদ্ধ কালে যে পন্থায় মার্কিন-সোভিয়েত অস্ত্র প্রতিযোগিতা পরিচালিত হয়েছিল তা নাম ছিল এমএডি ( মিউচুয়াল অ্যাসিউরড ডিস্ট্রাকশন) যাতে দেখা গিয়েছিল যে উভয়পক্ষ হাজার হাজার যুদ্ধাস্ত্রসহ বিশাল অস্ত্রভান্ডার গড়ে তুলেছে। এখানে যুক্তি ছিল এই যে উভয়পক্ষেরই এত বিশাল ধংসক্ষমতা রয়েছে যে কেউই অন্যের উপর হামলা চালানোর সাহস করেনি। উভয়পক্ষই বুঝতে পারে যে একটি পারমাণবিক য্দ্ধু হবে বিজয় -অযোগ্য, সুতরাং অচিন্তনীয়। এর বিপরীতÑ সমভাবে বিপথগামিতাও বটে, ভারত-পাকিস্তান দ্ব›দ্ব গতিশীল হচ্ছে। ভারত যেমন তার বিশাল প্রচলিত সামরিক সুবিধা ব্যবহারের পথ খুঁজছে ¯œায়ুচাপে আক্রান্ত পাকিস্তান তখন পারমাণবিক প্রতিশোধের পথে হেঁটে সে চাপ কমাতে বাধ্য হচ্ছে ।
এর ফলে সাম্প্রতিক ইঙ্গিত মিলেছে ভারত পারমাণবিক অস্ত্র প্রথম ব্যবহার না করার তার নীতি পুনর্বিবেচনা বা পুনর্ব্যাখ্যা করছে। ২০১৬ সালে প্রকাশিত তার গ্রন্থে সাবেক সরকারের আমলের এক সম্মানিত নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশংকর মেনন ‘ভারত যখন প্রথম পারমানবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে তখন তা এক সম্ভাব্য ধূসর এলাকা সৃষ্টির কারণ হবে বলে ঘোষণা করলে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। মেনন বলেন, পাকিস্তান তার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে যাচ্ছে বলে মনে হলে ভারতকে আগাম হামলা চালানোর জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিজেপি ২০১৪ সালে অনুরূপ এক ধারণার জন্ম দিয়ে পাকিস্তানের মোকাবেলায় অধিকতর নমনীয় পারমাণবিক মতবাদ গ্রহণের আহবান জানায়। মোদি যখন বলেন যে তিনি নিজে প্রথম পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার না করতে অঙ্গীকারবদ্ধ , তার পূর্ববর্তী প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মনোহর পারিকর যুক্তি দিয়েছিলেন যে ভারতের আরো কম বিধিনিষেধ মূলক পারমাণবিক মতবাদ দরকার।
পারমাণবিক ত্রিত্বতা (স্থল, বিমান ও নৌ) পূর্ণাঙ্গ হওয়ার পর ভারত পারমাণবিক হামলার শিকার হলেও পাকিস্তানে পাল্টা আঘাত হানার ব্যাপারে নিশ্চিত ভারতীয় জেনারেলরা এখন আরো আগ্রাসীভাবে কথা বলছেন। জানুয়ারিতে ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত ঘোষণা করেন যে যদি নতুন কোনো যুদ্ধ ঘটে তাহলে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের পাকিস্তানের হুমকি পরীক্ষা করে দেখতে ভারত প্রস্তুত।
জেনারেল বিপিন বলেন, আমরা এটাকে তাদের ধাপ্পা বলে মনে করি। যদি দায়িত্ব দেয়া হয়, আমরা বলব না যে তাদের হাতে পারমাণবিক অস্ত্র আছে বলে আমরা সীমান্ত অতিক্রম করতে পারব না।
এ সবই দু’দেশ ও তাদের শত শত মিলিয়ন অধিবাসী এবং গোটা বিশে^র জন্য গুরুতর বিষয়। ভারত ও পাকিস্তান পরস্পরের প্রাণঘাতী শত্রæ যারা এক অন্যের দিকে ডজন ডজন পারমাণবিক অস্ত্র তাক করে রেখেছে। এ পারমাণবিক অস্ত্র যখন শুধু স্থলভিত্তিক ছিল তখন ছিল ভীতিকর। এখন গভীর পানির নিচে সাবমেরিনে ভয়ংকরতম প্রাণঘাতী পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনের পর তা হয়েছে অনেক বেশি ভীতিকর। (সমাপ্ত)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।