Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

উৎসে কর হার অপরিবর্তিত রাখার ইঙ্গিত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৫ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

তৈরি পোশাকসহ রফতানি খাতের উৎসে কর হার অপরিবর্তিত রাখার ইঙ্গিত দিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। একইসঙ্গে আগামী বাজেটে উবার, পাঠাও’র মতো প্রতিষ্ঠানকে ট্যাক্স নেটের মধ্যে আনার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
গতকাল বুধবার এনবিআরের সম্মেলন কক্ষে রফতানি খাত, ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ), সংবাদপত্র শিল্প মালিকদের সংগঠন নিউজপেপার ওনার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব) এবং অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স (অ্যাটকো) নেতাদের সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে এ সব কথা জানান তিনি। আলোচনায় রফতানিকারক সমিতির (ইএবি) সিনিয়র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে পোশাকের দাম কমে যাওয়ায় এখন ৮০ শতাংশ ব্যবসায়ী লস দিয়ে কারখানা চালাচ্ছে। ১০ শতাংশ কারখানার আয়-ব্যয় সমান (ব্রেক ইভেন), আর ১০ শতাংশ মুনাফা করছে। এ অবস্থায় উৎসে কর বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তৈরি পোশাক শিল্পসহ রফতানি খাতের উৎসে কর হার ৫ বছরের জন্য ফিক্সড করে দেয়া উচিত। এতে ব্যবসায়ীদের বিজনেস পলিসি তৈরিতে সহায়ক হবে। এর জবাবে আয়কর নীতির প্রথম সচিব শব্বির আহমেদ বলেন, রফতানি খাতের আন্তর্জাতিক অবস্থানের প্রেক্ষিতে উৎসে কর নির্ধারণ করা হয়। সব পক্ষের বক্তব্য শুনে মোহাম্মদ হাতেমের দিকে তাকিয়ে আস্তে করে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘বর্তমানে উৎসে কর বাড়ানোর চিন্তা নেই।’ এর আগে তিনি বলেন, ‘সরকারের নির্বাচনী বাজেট হওয়ায় এবার খুব বেশি পরিবর্তন আসবে না। মিডিয়ার সামনে সব বলা যাচ্ছে না।’ এর আগে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, দেশ থেকে যে পরিমাণ রফতানি করা হয়, সে পরিমাণ টাকা দেশে আসছে না। কিছু টাকা বাইরে রেখে দেয়া হয়। এখন থেকে মাস্টার এলসি ভ্যালুর ওপর উৎসে কর আদায় করা যায় কিনা তা ভেবে দেখতে হবে।
হয়রানির অভিযোগ করে মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বন্ড-ভ্যাটের অডিটে রফতানিকারকরা নাজেহাল। কয়েক দিন পর পর ভ্যাট অফিস থেকে কাগজপত্র জমা দিতে বলা হচ্ছে। এরপর পরিবহন খরচ, গ্যারেজ খরচ ও মিসেলিনিয়াস (অন্যান্য) খরচ অর্থাৎ ঘুষের ওপর ভ্যাট চেয়ে দাবিনামা পাঠানো হচ্ছে। অন্যদিকে প্রতিবছরই বন্ডের অডিট করা হয়। অথচ বন্ড লাইসেন্স দেয়া হয় ২ বছরের জন্য। রফতানিমুখী শিল্পে ভ্যাট অডিট বন্ধ ও ২ বছর পর পর বন্ডের অডিট করার আহŸান জানান তিনি। এর জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আয়করের ওপর জনগণের গ্রহণযোগ্যতা আসলেও ভ্যাটের ক্ষেত্রে সেটি হয়নি। সবাই ভ্যাট দিতে চায় না। সে জন্য অডিট করা হয়। আর প্রতিষ্ঠান অডিটে গেলে হয়রানি কথা বলা হয়। কিন্তু তারপরও অডিটের মাধ্যমে অনাদায়ী ভ্যাট আদায় হচ্ছে।
গার্মেন্টস এক্সেসরিজ এন্ড প্যাকেজিং ম্যানুফেকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (বিজিএপিএমইএ) সভাপতি আব্দুল কাদের খান বলেন, এক্সেসরিজ শিল্প বৈষম্যের শিকার। তৈরি পোশাক শিল্পের কর্পোরেটর কর ১২ শতাংশ হলেও এক্সেসরিজ শিল্পকে ৩৫ শতাংশ কর দিতে হচ্ছে। এ নিয়ে বিগত ৪ বছর অনেক দেন দরবার করা হলেও লাভ হয়নি। এছাড়া উৎসে কর দশমিক ৭০ থেকে কমিয়ে দশমিক ৫০ শতাংশ করার দাবি জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে বন্ড কমিশনারেট থেকে আমদানি প্রাপ্যতা দেয়ার ক্ষেত্রে দ্বিমুখী নীতি অবলম্বন করা হচ্ছে। কিছু ব্যক্তি বিশেষের প্রতিষ্ঠানকে চাহিদামাফিক আমদানি প্রাপ্যতা দেয়া হলেও বাকিদের কম দেয়া হচ্ছে। এতে শিল্পে বৈষম্য দেখা দিচ্ছে। তাই এই বৈষম্য কমানোর কথা জানান আব্দুল কাদের খান।
শুল্কমুক্ত সুবিধায় নিউজপ্রিন্ট আমদানির সুবিধা চায় নোয়াব: বিকেলে এনবিআরের সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে শুল্কমুক্ত সুবিধায় নিউজপ্রিন্ট আমদানির সুবিধা চেয়েছে সংবাদপত্রের মালিকদের সংগঠন নোয়াব। সংগঠনটির সভাপতি মতিউর রহমান বলেন, ধীরে ধীরে সংবাদপত্র শিল্প রূগ্ন শিল্পে পরিণত হচ্ছে। প্রতিবছর ৫-১০ শতাংশ সংবাদপত্রের পাঠক কমছে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে সংবাদপত্র শিল্পের কাঁচামাল নিউজপ্রিন্টের দাম বাড়ছে। এছাড়া ইউটিউব- ফেসবুকে অবাধ বিজ্ঞাপনের কারণে রাজস্ব বঞ্চিত হতে হচ্ছে। এ অবস্থায় শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে নিউজপ্রিন্ট আমদানিতে শুল্ক-কর প্রত্যাহার, কর্পোরেট কর হার হ্রাস, বিজ্ঞাপনের ওপর অগ্রিম আয়কর ও ভ্যাট প্রত্যাহার এবং ইউটিউব- ফেসবুককে করের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
টেলিভিশন মালিকদের সংগঠন অ্যাটকোর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোজাম্মেল বাবু বলেন, ক্যাবল অপারেটরদের ডিজিটাইজড করতে পারলে প্রতি বছর অতিরিক্ত ১২শ-১৫শ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করতে পারে সরকার। এ নিয়ে চলতি বাজেটে অর্থমন্ত্রী ঘোষণা দিলেও সেটির এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের টিভি চ্যানেল অন্য দেশের দেখাতে হলে ল্যান্ডিং ফি দিতে হয়। অথচ বাংলাদেশের পাকিস্তানি, তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশের টিভি চ্যানেল প্রচারিত হলেও এই চার্জ দিতে হয় না।
সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারিখাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী ও ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম প্রমুখ।
করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানোর পরামর্শ: ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) নেতারা মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিয়ে আগামী বাজেটে করমুক্ত আয়েরসীমা বাড়ানোর আহŸান জানান। একইসঙ্গে কর জাল বাড়াতে নতুন নতুন খাতে করারোপ, জমি-ফ্ল্যাট নিবন্ধন ট্যাক্স হ্রাসের পরামর্শ দেন।
ইআরএফ সভাপতি সাইফ ইসলাম দিলাল বলেন, বর্তমানে করমুক্ত আয়ের সীমা আড়াই লাখ টাকা আছে। এটি ২৫ হাজার টাকা বাড়িয়ে ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা করলে চাকরিজীবীদের সুবিধা হবে। পাশাপাশি ফ্ল্যাট-জমি নিবন্ধনের কর কমানোর পরামর্শ দেন তিনি।
সহ-সভাপতি সালাউদ্দিন বাবলু বলেন, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষায়িত বাস আমদানিতে প্রণোদনা দিলে রাস্তায় যানজট কমবে। এক্ষেত্রে শুল্ক-কর হ্রাস করে উন্নত বিশে^র মতো ইয়োলো বাস নামাতে স্কুল-কলেজকে উৎসাহ দেয়া যেতে পারে।
সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান বলেন, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সঙ্গে তালিকাভুক্তির বাইরে থাকা কোম্পানি করহারের পার্থক্য আরো বাড়ানো উচিত। এতে কোম্পানিগুলোর তালিকাভুক্তিতে আগ্রহ বাড়বে। পাশাপাশি কোম্পানিগুলোর স্বচ্ছতা বাড়বে।
সিএনজি মালিক, উবারচালিক ক্যাব মালিকদের ওপর ট্যাক্স আরোপের পরামর্শের জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, উবার-পাঠাও ট্যাক্স নেটের বাইরে আছে। এবারের বাজেটে এ ধরনের কোম্পানিকে ট্যাক্সের আওতায় আনা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ