পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মো. দেলোয়ার হোসেন, গাজীপুর থেকে : শিল্পশহর খ্যাত গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর ও টঙ্গীর ৩২৯.৫৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে ২০১৩ সালে শুরুতে গঠিত গাজীপুর সিটি করপোরেশন। ২০১৩ সালের ৬ জুলাই অনুষ্ঠিত হয়েছিল এ সিটির প্রথম নির্বাচন। টান টান উত্তেজনা এবং তীব্র প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী টঙ্গী সাবেক পৌরসভার মেয়র আজমতউল্লা খানকে সোয়া লাখ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত নগরপিতা হয়েছিলেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী অধ্যাপক এম এ মান্নান। রাজধানীর সবচেয়ে কাছের এবং জাতীয় ভাবে গুরুত্বপূর্ণ গাজীপুর সিটিতে পরাজয়ের ঘটনা ওই সময় সারাদেশ ও আওয়ামী লীগে বেশ তোলপাড় হয়। ‘প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল’ এবং ‘নগরীর রাস্তাঘাটের দুরাবস্থা’র জন্যই ওই সময় দলীয় প্রার্থীর পরাজয় হয়েছিল বলে অভিমত প্রকাশ করেছিলেন নেতাকর্মীরা। অপরদিকে বিএনপি প্রার্থীর বিজয়ের নেপথ্যে ছিল ‘বিভেদ ভুলে একাট্ট্রা হয়ে মাঠে নামা’।
পরাজয়ের গøানি মুছে আসন্ন নির্বাচনে জয় পেতে মরিয়া আওয়ামী লীগ। ভোটে জয় ছাড়া তারা এ মুহূর্তে আর অন্য কিছু ভাবছে না। কিন্তু প্রার্থী বাছাই নিয়ে বেশ চাপ ও উৎকন্ঠায় রয়েছে তারা। আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী হতে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট মো. আজমতউল্লা খান ও সাধারন সম্পাদক এ্যাডভোকেট মো. জাহাঙ্গীর আলম ও মহানগর যুবলীগের আহবায়ক কামরুল আহসান সরকার রাসেল প্রচার-প্রচারনা চালাচ্ছেন। ইতিমধ্যে এলাকার যুব সমাজকে সাথে নিয়ে রাসেল ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন। দক্ষ ও বিনয়ী রাসেল নির্বাচনী মাঠে আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে পরিনত হয়েছেন। তবে ৩ প্রার্থীর মধ্যে কে মনোনয়ন পাবেন, না পেলে অন্যদের ভুমিকা কি হবে, এসব নিয়ে দলে এবং সমর্থকদের মধ্যে চলছে উৎকন্ঠা ও উদ্বেগ।
একই ভাবে প্রার্থী নিয়ে বেকায়দায় আছেন বিএনপিও। এতদিন বর্তমান মেয়র অধ্যাপক মান্নান একক প্রার্থী বিবেচনা করা হলেও বেশ কিছুদিন ধরে তিনি অসুস্থ। তাঁর অসুস্থতায় বিকল্প প্রার্থী খুঁজছেন দলের শীর্ষ নেতারা। সেক্ষেত্রে আলোচনায় উঠে এসেছে দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান উদ্দিন সরকার। বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান সরকার এ আসনের সাবেক এমপি ও সাবেক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।
৫৭টি সাধারণ সদস্য ও ১৯টি সংরক্ষিত নারী সদস্য ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত গাজীপুর সিটি করপোরেশনের আসন্ন নির্বাচনে ভোটার ১১ লাখ ৬৪ হাজার ৪২৫ জন। তারমধ্যে পুরুষ ৫ লাখ ৯১ হাজার ১০৭ এবং নারী ভোটার ৫ লাখ ৭৩ হাজার ৩১৮ জন। ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৪৩০টি।
নেতা-কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মেয়র পদে সমর্থন পেয়েছিলেন সাবেক টঙ্গী পৌরসভার মেয়র তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক এ্যাডভোকেট মো. আজমতউল্লা খান। সমর্থন চেয়েও না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নগর জুড়ে ঝড় তুলেছিলেন তৎকালীন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম। পরবর্তীতে দলীয় চাপে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। ওই নির্বাচনে এক লাখেরও বেশী ভোটে হেরে যান আজমতউল্লা খান। নির্বাচনে তিনি পেয়েছিলেন ২ লাখ ৫৮ হাজার ৮৬৭ ভোট। বিজয় বিএনপির মান্নান পেয়েছিলেন ৩ লাখ ৬৫ হাজার ৪৪৪ ভোট। নেতাকর্মী ও সাধারন মানুষ ওই সময় পরাজয়ের জন্য ‘প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল’ এবং ‘নগরীর রাস্তাঘাটের দুরাবস্তা’কে দায়ী করেছিলেন। তৃণমূল থেকে দাবি ছিল জাহাঙ্গীর আলমকে প্রার্থী করার। তাকে প্রার্থী না করার খেসারত হিসেবে নগর পিতার আসন বিএনপির কাছে চলে যায়।
ওই নির্বাচনের ২ বছর পর কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ এ্যাডভোকেট আজমতউল্লা খানকে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলমকে সাধারন সম্পাদক মনোনিত করে। দায়িত্ব পেয়ে দল গোছানোর পাশাপাপাশি মেয়র প্রার্থী হিসেবে মাঠ নামেন জাহাঙ্গীর আলম। তাদের বাইরে গত কয়েক মাস ধরে মাঠে নেমেছেন আজমতউল্লা খান ও মহানগর যুবলীগের আহবায়ক মো. কামরুল আহসান সরকার রাসেল। ইতিমধ্যে তার পোষ্টার ফেষ্টুনে ছেয়ে গেছে এলাকা।
অন্যদিকে মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন আহমেদ মহি জানান, জাহাঙ্গীর আলম নেতাকর্মীদের একাট্টা করে মাঠে নেমে পড়েছেন। দিনরাত ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঘুরে উঠান বৈঠক করছেন।
কাশিমপুর সাংগঠনিক থানার যুবলীগ নেতা শাহাজ সরকার সুমন জানান, মেয়র প্রার্থী কামরুল আহসান সরকার রাসেল গত রোববার নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় ৫৭টি ওয়ার্ডে থেকে আসা তিনশধিক মাকে নিয়ে ‘মা’ সমাবেশ করেছেন। মায়েদের দোয়া নিয়ে তিনি গতকাল থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে মাঠে নেমেছেন।
বিএনপি থেকে এ পর্যন্ত সরাসরি কেউ মাঠে প্রচার-প্রচারনায় না থাকলেও মেয়র প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় আছেন বর্তমান মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান ও হাসান উদ্দিন সরকার। অধ্যাপক মান্নান জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ১৯৯১ সালে প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত হন। মন্ত্রী হয়ে তিনি নতুন নতুন স্কুল-কলেজ, রাস্তাÑঘাট, ব্রিজ-কালভার্টসহ এলাকার প্রভুত উন্নয়ন করেন। গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি ৩ লাখ ৬৫ হাজার ৪৪৪ ভোট পেয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন। দায়িত্ব পালনের দেড় বছরের মাথায় নাশকতার মামলায় তিনি গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যান। তার বিরুদ্ধে ৩০টি মামলা দেয় পুলিশ। এসব মামলায় তাকে একাধিকবার রিমাÐে এনে নির্যাতন করা হয়। মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে তিনি প্রায় দুই বছর কারাগারে ছিলেন। জেলে থাকায় অবস্থায় তাকে দুইদফা মেয়র পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়। আইনী লড়াইয়ে মুক্তি এবং পদ ফিরে পেয়ে আবারো মেয়রের চেয়ারে বসেন তিনি। কিন্তু তিনি কারাভোগ ও নির্যাতনে বর্তমানে কিছুটা অসুস্থ।
অধ্যাপক মান্নানের অসুস্থতার কারণে হাসান উদ্দিন সরকারকে প্রার্থী করার কথা ভাবছে বিএনপি। তিনি টঙ্গী পৌরসভার মেয়র, দুইবার গাজীপুর সদরের সংসদ সদস্য ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি এলাকায় বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সামাজিক কাজ করেছেন। টঙ্গীতে তার পরিবার বহু আগে থেকেই প্রভাবশালী। এলাকায় তার রয়েছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা। গত নির্বাচনে তিনি অধ্যাপক মান্নানের হয়ে ব্যাপক কাজ করে প্রশংসিত হন। দুজনের মধ্যে কাকে মনোনয়ন পারেন তা নির্ভর করছে দলীয় চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সিদ্ধান্তের উপর।
জানতে চাইলে মেয়র মান্নান জানান, তিনি তেমন কোন অসুস্থ নন। কারাগারে থাকার সময় চিকিৎসা না পেয়ে রুটিন চেকাআপে ছিলেন। নির্বাচনের সব প্রস্তুতি তার রয়েছে। কারাভোগ ও মামলায় হয়রানীর কারণে মানুষের মাঝে তাকে নিয়ে সহানুভ’তি রয়েছে। দল চাইলে নির্বাচন করবেন। একই ভাবে হাসান উদ্দিন সরকার জানান, তিনি মাঠের রাজনীতি করেন। নির্বাচনের পুরো প্রস্তুতি তার য়েছে। দল চাইলে নির্বাচন করবেন।
গাজীপুর সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। দলীয় ভাবে নির্বাচনের সুযোগ না থাকায় ‘গাজীপুর মহানগর উন্নয়ন ফোরাম’ ব্যানারে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের কথা ভাবছে তারা। এরই মধ্যে মেয়র পদ দোয়া ও সমর্থন চেয়ে মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমীর প্রিন্সিপাল এসএম সানাউল্লাহর অসংখ্য পোষ্টার লাগানো হয়েছে।
জাসদ (ইনু) থেকে প্রার্থী হচ্ছেন গাজীপুর মহানগর জাসদের সভাপতি রাশেদুল হাসান রানা। জাসদ সভাপতি ও তথ্য মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু রানাকে আনুষ্ঠানিক ভাবে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছেন। ইতিমধ্যে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে তরুণ এ নেতার পোস্টার ও ব্যানার ছেয়ে গেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।