Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সিনহা কি অপরাধ করেছে তা জানার অধিকার জনগণের আছে

সুজনের গোল টেবিল বৈঠকে বক্তরা

| প্রকাশের সময় : ৪ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম


স্টাফ রিপোর্টার ঃ: সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার দুর্নীতিটা কী তা জনগণের জানার অধিকার আছে বলে দাবি তুলেছেন সুশীল সমাজ। সুশীল প্রতিনিধীরা বলেছেন, একজন প্রধান বিচারপতিকে ‘তুই’বলে সম্বোধন করাটা সরাসরি সংবিধান পরিপন্থী। অথচ এ দেশে সেটি হয়েছে। একজন বিচারপতি তিনিও একজন মানুষ। সুতরাং দুর্নীতি করতেই পারেন। কিন্তু তার দুর্নীতিটা কী তা জনগণের জানার অধিকার আছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে নাগরিক সংগঠন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) উদ্যোগে ‘আইনের শাসন : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এ কথা বলেন।
বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুজন-এর নির্বাহী সদস্য বিচারপতি আব্দুল মতিন। গোলটেবিল বৈঠকে আলোচক হিসেবে সিনিয়র আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, বিচারপতি কাজী এবাদুল হক, ব্যারিস্টার আমির- উল ইসলাম, ড. তোফায়েল আহমেদ, সৈয়দ আবুল মকসুদ, ড. আসিফ নজরুল, ড. বদিউল আলম মজুমদার, স্থপতি মোবাশ্বার হাসান, গোলাম মর্তুজা, এএসএম আকরাম, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা উপস্থিত ছিলেন।
মূল প্রবন্ধে বিচারপতি আব্দুল মতিন বলেন, আইনের শাসন বা রুল অব ল’ প্রতিষ্ঠা সংবিধানের প্রস্তাবনায় জাতির জন্য অন্যতম অঙ্গীকার। যেমন, অঙ্গীকার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার। জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তিরূপে সংবিধানই হচ্ছে সর্বোচ্চ আইন। তারই প্রস্তাবনায় আমাদের অঙ্গীকার এই যে, রাষ্ট্রের মূল লক্ষ্য হবে সব নাগরিকের জন্য আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা।
ড. কামাল হোসেন বলেন, মানুষ জীবনবাজি রেখে দেশ স্বাধীন করেছে। আমরা সংবিধানে সেটা স্বীকার করেছি। ৪৭ বছর পরেও সংবিধান বহাল আছে। এ দেশের মালিক জনগণ-এটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী সাতজন বিচারপতি বাতিল করেছেন। আমরা সবাই বলেছি যে, এটা অসাংবিধানিক। তাই আমার মনে হয় না যে, রিভিউর মাধ্যমে এটা বাতিল করা যাবে। এ সংশোধনী বাতিলের ক্ষেত্রে বিচারকদের ভূমিকা অস্বীকার করা যাবে না। স্বাধীন দেশের বিচারককে প্রকাশ্যে তুই তুকারি করা দেশের প্রতিটি মানুষকে অপমান করার শামিল। তিনি আরও বলেন, একটি স্বাধীন দেশে একজন প্রধান বিচারপতিকে যেভাবে সরানো হয়েছে তাতে আমি উদ্বিগ্ন। এটা তারা করতে পারেন না। সংবিধান কিংবা রাষ্ট্র বিরোধী এ কাজের বিরোধিতা হওয়া উচিত ছিল। আমি মনে করি এটা নিয়ে একটা ক্যাম্পেইন করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
ব্যারিস্টার এম. আমীর-উল ইসলাম বলেন, আইনের শাসন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে জনগণের সামনে আমরা কি উত্থাপন করছি সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেগুলো রাজনৈতিক দল ও গণমাধ্যম দ্বারা অনুমোদিত কি-না তাও গুরুত্বপূর্ণ। সংবিধান অনুধাবন করার মতো উপযুক্ত নাগরিক আমরা তৈরি করতে পারছি কি-না তাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, বিচারক নিয়োগে আইন করার জন্য আমরা স্বাধীনতার প্রারম্ভে পদক্ষেপ নিয়েছিলাম। কিন্তু ৪৭ বছর পরও তা করতে পারিনি। ষোড়শ সংশোধনী মামলায়ও আমি এ বিষয়ে জোর দিয়েছিলাম। বর্তমানে দেশে প্রশাসন ও বিচার বিভাগসহ অনেক ক্ষেত্রেই নিয়োগের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট মানদন্ড নেই। চাকরিতে কোটা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী নয়। তাই কোটার মাধ্যমে তাদের সন্তানদের চাকরিতে নিয়োগ দেয়া মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি অসম্মান করার সমান।
বিচারপতি আব্দুল মতিন বলেন, আজ জাতির জিজ্ঞাসা, আমরা কী আইনের শাসন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার পালন করতে সক্ষম হয়েছি? নির্বাচনকেন্দ্রিক গণতন্ত্র বা অনুমতির গণতন্ত্র, অসীম ক্ষমতাধর নির্বাহী বিভাগ, ৭০ অনুচ্ছেদের কারণে অকার্যকর আইনসভা এবং আপিল বিভাগের একটি রায়কে কেন্দ্র করে নির্বাহী বিভাগের তান্ডবে প্রকম্পিত বিচার বিভাগ কি প্রমাণ করে না যে, আমরা সে অঙ্গীকার পালনে ব্যর্থ হয়েছি?
বিচারপতি কাজী এবাদুল হক বলেন, আইনের শাসন মানে জনগণের সম্মতির শাসন। আইন হতে হলে তাতে জনগণের সম্মতি প্রয়োজন এবং আইন হতে হলে তা বিচারকদের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, আইন প্রণীত হতে হবে জনগণের ভোটের প্রকৃত প্রতিনিধি দ্বারা। এটা নিশ্চিত করার জন্য নির্বাচন সঠিক হতে হবে। যে কারণে আমরা সামরিক শাসনের আইনকে আইন হিসেবে সাধারণত মানি না। আর আইন কারো ক্ষেত্রে প্রয়োগ হবে, কারো ক্ষেত্রে হবে না তা মেনে নিতে পারি না।
সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, আইনের শাসনের মাহাত্ম হলো সাধারণ মানুষ থাকবে স্বস্তিতে এবং অপরাধীরা থাকবে আতঙ্কে। এমনকি রাষ্ট্রের সবচেয়ে দুর্বলতম ব্যক্তিটিও নিরাপদ থাকবে। একটি রাষ্ট্রে কম গণতন্ত্র মানা যায়, কিন্তু আইনের শাসনের ব্যতয় মানা যায় না। আইনের শাসনের ব্যতয় ঘটছে কি-না তা তারাই বলতে পারবেন যারা গুম-খুনের শিকার হচ্ছেন।
ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, চাকরিতে কোটা সংবিধান সম্মত। কিন্তু সবার জন্য এ কোটা প্রযোজ্য হবে না, কোটা হলো অনগ্রসর শ্রেণির জন্য। বর্তমানে যারা কোটার সুযোগ নিচ্ছেন তাদের সবাই কোটার যোগ্য নয়। বর্তমানে আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আইন নয় বরং অর্ডারের অধীনে রয়েছি। তিনি বলেন, একজন বিচারপতি তিনিও মানুষ। তিনি দুর্নীতি করতেই পারেন। কিন্তু তার দুর্নীতিটা কী সেটা জনগণের জানার অধিকার আছে।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বিচার বিভাগ প্রধান ভূমিকা পালন করে। কিন্তু বিচার বিভাগের সঙ্গে অন্য বিভাগগুলোকে সমান্তরালে এগিয়ে যেতে হবে। আমি মনে করি, মানুষের ভোটের অধিকার না থাকলে আইনের শাসন নিশ্চিত করা যায় না। তিনি বলেন, একজন প্রধান বিচারপতি হঠাৎ করে দুর্নীতিবাজ হয়ে গেলেন। কিন্তু তার বিচার হলো না কেন? তিনি যে দুর্নীতি করেছেন তার সঙ্গে কারা যুক্ত ছিলেন তাও আমরা জানতে চাই। আদালতের প্রতি আমরা আস্থা হারাতে চাই না।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আইনের শাসন ছাড়া যে শাসন তা সভ্য শাসন নয়। বিচারপতিদের নিয়োগে আইন পাশ করার দাবি জানান তিনি।



 

Show all comments
  • নাহিদ ৪ এপ্রিল, ২০১৮, ৪:৪৮ এএম says : 1
    অধিকার জনগণ বলতে দেশে কিছু বাকী আছে ?
    Total Reply(0) Reply
  • rakib ৪ এপ্রিল, ২০১৮, ৬:৪৯ এএম says : 1
    ashole shomosto b-kolom chor chechor die proshashon chalache BAL government ! ora abar manush ke shonman korbe ki vabe?? akjon prodhan bichar potike ki vabe shonman korte hoy ora ki ta jane ??
    Total Reply(0) Reply
  • md salam ৪ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:৫৭ পিএম says : 1
    সিনহা স াহেবের একমাত্র অপরাধ তিনি সরকারী নীল নকশা অনুযায়ী কাজ করতে রাজী হয়নি।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Shah Alam Khan ৪ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:৫৯ পিএম says : 1
    সিনহা সাহেবের কাহিনী কোনোদিন জানা যাবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • Azad Sheikh ৪ এপ্রিল, ২০১৮, ৩:২৭ পিএম says : 1
    রাইট
    Total Reply(0) Reply
  • সাইফুল ইসলাম চঞ্চল ৪ এপ্রিল, ২০১৮, ৩:২৮ পিএম says : 2
    সিনহার অপরাধ সে কেনো আওয়ামী সার্থের বাইরে গিয়েছে কেনো?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ