পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রফিকুল ইসলাম সেলিম : বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামে বন্ধ হচ্ছে না ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিলের যন্ত্রণা। মিটার রিডাররা অফিসে বসেই তৈরি করা অতিরিক্ত বিল ধরিয়ে দিচ্ছেন গ্রাহকদের। বিদ্যুৎ অফিসে গিয়েও মিলছে না কোন প্রতিকার। উল্টো হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে ভুক্তভোগী গ্রাহকদের। এ যন্ত্রণা থেকে রেহাই পেতে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের উদ্যোগ নেয় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড পিডিবি। তবে তাও চলছে শম্বুকগতিতে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ৮ লাখ গ্রাহককে প্রি-পেইড মিটার দেয়ার কথা থাকলেও এ পর্যন্ত মাত্র আড়াই লাখ গ্রাহক পেয়েছেন এ সুবিধা।
পিডিবির হিসেবে, চট্টগ্রাম তিন পার্বত্য জেলা ও কক্সবাজারসহ এ অঞ্চলের ৫ জেলায় আবাসিক ও বাণিজ্যিক গ্রাহকের সংখ্যা ৮ লাখের বেশি। এত বিপুল সংখ্যক গ্রাহকের মিটার দেখে বিল তৈরি করার মতো লোকবলের অভাব দীর্ঘদিন থেকে। মিটার রিডাররা মিটারের রিডিং না দেখেই বিল তৈরি করে দিচ্ছেন। এতে করে অধিকাংশ গ্রাহক অতিরিক্ত বিলের বোঝা টানছেন। বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে প্রতিকারের বদলে উল্টো হয়রানির শিকার হচ্ছেন গ্রাহকেরা। গত ২৮ মার্চ আগ্রাবাদস্থ পিডিবি কার্যালয়ে গণশুনানিতে ৩৮ জন গ্রাহকের বেশিরভাগই ভুতুরে বিলের যন্ত্রণা নিয়ে অভিযোগ করেন।
সেখানে পিডিবির হালিশহরের নিউমুরিং অফিসের মিটার রিডার ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন গ্রাহক মোঃ আবু বকর। তিনি বলেন, তার মিটার রিডিংয়ের সাথে বিলের গরমিল ছিল ৩৪৫ ইউনিট। দীর্ঘ এক বছর ধরে তাকে অতিরিক্ত বিল ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে। কিন্তু পিডিবি অফিসে গিয়ে ধর্না দিয়েও কোন প্রতিকার মিলছে না। টেলিফোনে এ ব্যাপারে সমাধান চাইলে মিটার রিডার বলেন, ৪তলা থেকে লাফ দিন, সমাধান হয়ে যাবে। দুদক কমিশনার ড. নাসির উদ্দিন আহমেদের নির্দেশে পরে অবশ্য ওই মিটার রিডারকে বরখাস্ত করা হয়। গণশুনানিতে একজন গ্রাহক অভিযোগ করেন, তার বিদ্যুৎ বিলের সাথে মিটার রিডিংয়ের গরমিল ৫ হাজার ইউনিট। অতিরিক্ত বিল ধরিয়ে দেয়ার পরও কোন প্রতিকার পাননি। ওই গণশুনানিতে অংশ নিতে পারেননি এমন অনেক গ্রাহক ভুতুরে বিলের যন্ত্রণা নিয়ে প্রতিনিয়ত বিদ্যুৎ অফিসে ধর্না দিচ্ছেন।
নগরীর শান্তিবাগের ফ্ল্যাট মালিক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আনোয়ার সাদাত জানান, তার নতুন ফ্ল্যাটে বিদ্যুতের মিটার লাগানো হলেও সেখানে কেউ থাকে না। অথচ প্রতিমাসে ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা বিদ্যুৎ বিল ধরিয়ে দিচ্ছে পিডিবি। বিদ্যুৎ ব্যবহার না করেও বিল পেয়ে তিনি হাজির হন পিডিবি কার্যালয়ে। পিডিবির কর্মকর্তারা তাকে সোজা জানিয়ে দেন বিল যা দেয়া হয়েছে তা পরিশোধ করতে থাকুন। ফ্ল্যাটে যখন উঠবেন তখন তো বিদ্যুৎ ব্যবহার করবেন, তখন এ বিল সমন্বয় করে নেব। বায়েজিদ এলাকার এরশাদ নগরের বাসিন্দা মৌলভী এম এ হাকিম অভিযোগ করেন, মিটার না দেখে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল দেয়ার পাশাপাশি তার বাড়ির দুইটি মিটারের বিদ্যুৎ বিল পাঠানো হয়েছে দুই ঠিকানায়। এ নিয়ে বিদ্যুৎ অফিসে বারবার ধর্না দিয়েও কোন প্রতিকার না পেয়ে ঢাকায় বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ে ছুটে যান তিনি।
এদিকে প্রি-পেইড মিটার স্থাপন কাজ চলছে ধীরগতিতে। গ্রাহকদের অভিযোগ, পিডিবির একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তার কারণে এ প্রকল্পে গতি আসছে না। প্রি-পেইড মিটার চালু হলে ভুয়া বিলের মাধ্যমে গ্রাহকদের হয়রানি করে অর্থ আদায়ের পথ বন্ধ হয়ে যাবে এ কারণেই অনেকে চান না প্রি-পেইড মিটার চালু হোক। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ছিল চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে সব গ্রাহককে প্রি-পেইড মিটার সুবিধা দেয়া। ৩ বছরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে বলা হলেও ৪ বছরেও অর্ধেকের কম গ্রাহক প্রি-পেইড মিটার পেয়েছে। এ নিয়ে স্বয়ং বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ পিডিবি চট্টগ্রাম কর্মকর্তাদের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন। গত বছরের ২৭ মে এক অনুষ্ঠানে চলতি বছরের মার্চের মধ্যে ৭ লাখ প্রি-পেইড মিটার চালুর নির্দেশনা দিয়েছিলেন তিনি। প্রতিমন্ত্রীর বেধে দেয়া সময় শেষ হয়েছে কিন্তু বসেনি প্রি-পেইড মিটার।
প্রি-পেইড মিটার স্থাপন প্রকল্পের পরিচালক তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ কামাল উদ্দিন গতকাল ইনকিলাবকে জানান, এখন পর্যন্ত ৪ লাখ প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজ চলছে। ৮ লাখ গ্রাহকের মধ্যে আরও ৪ লাখ গ্রাহক এ সুবিধার বাইরে রয়েছেন। তিনি জানান, প্রথম দফায় এক লাখ ২০ হাজার। দ্বিতীয় দফায় এক লাখ ১৫ হাজার মিটার স্থাপন করা হয়েছে, আরও ৩৫ হাজার মিটার স্থাপনের কাজ চলছে। তৃতীয় পর্যায়ে এক লাখ মিটার স্থাপনের কাজ চলছে। তিনি বলেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সব গ্রাহককে এ মিটারের আওতায় আনার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু তা এখন আর সম্ভব হচ্ছে না। এ কাজ শেষ হতে আরও অন্তত এক বছর সময় লাগবে বলে জানান তিনি। অন্যদিকে প্রি-পেইড মিটার পেয়ে গ্রাহকদের অনেকে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, এখন ভুতুরে বিলের যন্ত্রণা থেকে রেহাই পেয়েছেন তারা। তাছাড়া বিদ্যুতের বিল পরিশোধের জন্য নানা ঝক্কি-ঝামেলাও পোহাতে হচ্ছে না। পিডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, যেসব এলাকায় প্রি-পেইড মিটার চালু হয়েছে সেসব এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদা এবং অপচয় দুটোই কমে গেছে। সেইসাথে কমে গেছে সিস্টেম লস। রাজস্ব আদায়ও বেড়ে গেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।