Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

তারা আমাদের সমাজেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ

অটিজম আক্রান্তদের পাশে দাঁড়াতে প্রধানমন্ত্রীর আহবান

| প্রকাশের সময় : ৩ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

অটিজম আক্রান্তরা সমাজেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ উল্লেখ করে জনগণকে পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের সুযোগ করে দেয়ার আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, যারা অটিজমে ভূগছে তাদের অবহেলা করবেন না। তারা আমাদের সমাজেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ। অনেক সুস্থ মানুষ যা পারে না সেই সুপ্ত প্রতিভা তাদের রয়েছে। আমাদেরকেই সেই সুপ্ত প্রতিভাগুলি বিকশিত করার সুযোগ করে দিতে হবে। আর সমাজে তাদের একটা সুন্দর স্থান করে দিতে হবে।
গতকার সোমবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ১১তম বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অটিজম আক্রান্ত এবং প্রতিবন্ধীদের জীবন মান উন্নয়নের নিমিত্তে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ২ এপ্রিলকে সর্বসম্মতভাবে অটিজম সচেতনতা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে গতকাল অটিজম সচেতনতা দিবস হিসেবে ‘নারী ও বালিকাদের ক্ষমতায়ন, হোক না তারা অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন’ শীর্ষক প্রতিপাদ্য নিয়ে পালিত হয়। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। অটিজম আক্রান্তদের পক্ষে নবম শ্রেনীর ছাত্রী ইসাবা হাফিজ সুষ্মী বক্তব্য রাখেন।
সুস্থ মানুষকে যেভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে তেমনি যারা প্রতিবন্ধী এবং অটিজমে ভূগছে তাদের প্রতি আমাদের সমাজকে আরো সচেতন হবার আহŸান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। কারণ এটা তাদের জন্মের কোন দোষ নয়, আল্লাহতো মানুষকে বিভিন্নভাবেই সৃষ্টি করেন। কাজেই সেটাকে অবহেলার চোখে দেখা ঠিক নয়। তাই সমাজের সচেতনতা একান্তভাবেই প্রয়োজনীয়।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা চাচ্ছি অভিভাবক এবং শিক্ষকদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে যাতে তারা আচার আচরণ, কথা বলা ইত্যাদির মাধ্যমে অটিজমে আত্রান্তদের সুস্থ করতে ভূমিকা রাখতে পারেন। অর্থাৎ শিক্ষকরাও পারবে তাদেরকে আরো সুস্থ করে তুলতে। তাদের মধ্যে সেই সচেতনতাটা সৃষ্টি করা একান্তভাবেই দরকার। সেটাই আমরা চাই।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিভার স্বীকৃতি স্বরূপ তিনজন অটিজম আক্রান্তকে এবং অটিজম সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টিতে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর সদস্য ইসাবা হাফিজের বঞ্চনার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি যখন ইসাবার বক্তৃতা শুনছিলাম তখন খুব কষ্ট হচ্ছিল। এই মানসিকতা পরিবর্তন করে সবাইকে বরং আরো সংবেদনশীল হয়ে, আরো সহানুভূতিশীল হয়ে অটিজম আক্রান্তদের আদর-ভালোবাসা দিয়ে কাছে টেনে নিতে হবে। আর তাদের মাঝে যে সুপ্ত প্রতিভা রয়েছে সেই সুপ্ত প্রতিভাকে জাগিয়ে তুলতে হবে। অটিজম বক্তা ইসাবার আশংকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইসাবা বলেছে সে এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারবে কি না। ‘আমি বলবো সে দিতে পারবে’, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রতিবন্ধীদের পাবলিক পরীক্ষায় ২০ থেকে ৩০ মিনিট বাড়িয়ে দেয়ার সরকারের পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় অন্যরা যে সময়ে পরীক্ষা দেয় তাদের চাইতে সাধারণভাবেই ২০ থেকে ৩০ মিনিট সময় বেশী দিয়ে থাকি। যেন তারা তাদের পরীক্ষাটা ভালোভাবে দিতে পারে। ইতোমধ্যে ব্যবস্থাটা আমরা করে দিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অটিজম বিষয়টি আমাদের সমাজে এখন আর নতুন নয়। এসব অটিজম বৈশিষ্ট-সম্পন্ন শিশু ও ব্যক্তিদের বিষয়ে আমি এবং আমার সরকার বিশেষ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছি। তিনি বলেন, আমরা কাউকে প্রতিবন্ধী বা অটিজম বৈশিষ্ট-সম্পন্ন বলে দূরে সরিয়ে রাখতে পারি না। তাদের প্রতি সমাজের নেতিবাচক ধারণা এক্ষেত্রে একটি বড় বাধা।
শেখ হাসিনা বলেন, সমাজে সুস্থ্য মেয়ে হলেই অনেক বাবা-মা বোঝা মনে করে। আর প্রতিবন্ধী বা অটিজম শিশু হলে তো কোনো কথাই নাই। প্রতিবন্ধী শিশুর জন্ম হলে দোষ দেয়া হয় স্ত্রীকে, যেন সব দোষ তার। তিনি বলেন, প্রতিবন্ধীদের প্রতি সকলেরই সদয় হতে হবে। তাদের সঙ্গে স্বাভাবিক আচরণ করলে তারাও সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী, মানীষীদের কেউ-কেউ প্রতিবন্ধীতায় আক্রান্ত ছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী সুর স¤্রাট মোজার্টের উদাহারণ দেন।
অটিজম বিষয়ে মানুষকে সচেতন করে তুলতে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে অটিজম বিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন তার কন্যা সায়মা ওয়াজেদের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আগে বাংলাদেশে অটিজম সম্পর্কে মানুষের তেমন কোন ধারণা ছিল না। আমার কন্যা সায়মা ওয়াজেদের নিরলস প্রচেষ্টায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে অটিজমের গুরুত্ব ও সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, অটিজম সচেতনতা ও জনস্বাস্থ্যে বিশেষ অবদান রাখার জন্য সায়মা ওয়াজেদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ এশিয়া ‘অটিজম চ্যাম্পিয়ন’ এর স্বীকৃতি পেয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সায়মা ‘ইউনেস্কো’র একটি আন্তর্জাতিক জুরি বোর্ডের সভাপতি এবং জাতিসংঘের মানসিক স্বাস্থ্য প্যানেলের একজন সদস্য হিসেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করে চলেছে। তিনি বলেন, ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি ৯৬৩ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য ৮ হাজার ৪০৫টি ব্রেইল বই বিতরণ করা হয়েছে। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য ‘অভিগম্য অভিধান’ বা এ্যাকসিসিবল ডিকশনারি তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা মোবাইল বা কম্পিউটারের মাধ্যমে বাংলা একাডেমির চারটি অভিধান ব্যবহার করতে পারবে। ঢাকার মিরপুরে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন কমপ্লেক্সে ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৫ তলা স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিবন্ধী কমপ্লেক্স নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে।
ঢাকার অদূরে সাভারে ১২ একর জমিতে ২৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে আন্তর্জাতিক মানের প্রতিবন্ধী ক্রীড়া কমপ্লেক্স গড়ে তোলার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতীয় সংসদ ভবনের পশ্চিম পার্শ্বে ৪ দশমিক ১৬ একর জায়গা প্রতিবন্ধী ছেলে-মেয়েদের খেলাধুলার জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সরকার ইতোমধ্যে প্রতিবন্ধীদের উপযোগী কর্মক্ষেত্র চিহ্নিত করার কাজ শুরু করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিসিএসসহ প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরির জন্য ১ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ১০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এবার দু’জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে চাকরি পেয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অটিজমের লক্ষণ দেখা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে সুচিকিৎসা করা হলে তা ভালো হতে পারে। তিনি বলেন, বিভিন্ন উৎসবে মানুষের কাছে তিনি যেসব কার্ড পাঠান, অটিস্টিক শিশুদের আঁকা কাডর্ই পাঠান। যার কার্ড নির্বাচিত হয় তাঁকে সম্মানি হিসেবে এক লাখ করে টাকাও প্রদান করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্ড সাধারণত ২০ থেকে ২৫ হাজার কপি ছাপানো হয়। এভাবেই আমি কয়েক বছর থেকে অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী শিশুদের হাতে আঁকা ছবি দিয়েই শুভেচ্ছা কার্ড বানিয়ে তা পাঠিয়ে আসছি।
অটিজম বিষয়ে সরকারের ভূমিকার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অটিজমের ওপর একটা রেজ্যুলেশনও গ্রহণ করেছে জাতিসংঘ। শুধু আমাদের দেশেই নয়, বিশ্বব্যাপী একটা সচেতনতা শুরু হয়েছে। আমাদের দেশেও অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন লোকদের জন্য প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে একটা কমপ্লেক্স তৈরি করতে চাই। অটিস্টিক হয়ে জন্ম নেয়া শিশুদের আজীবন সেবা দেয়ার ব্যবস্থা থাকবে এখানে। সূচনা ফাউন্ডেশন নামে একটি ফাউন্ডেশনও করে দিয়েছে সরকার। যার উদ্দেশ্য হলো প্রতিবন্ধীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। অটিস্টিক শিশুদের প্রতিভা বিকাশে দেশের বিত্তশালীদের এগিয়ে আসার আহŸান জানান প্রধানমন্ত্রী। পরে অটিজম আক্রান্তদের অংশগ্রহণে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও উপভোগ করেন।
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন। সমাজকল্যাণ সচিব জিল্লার রহমান স্বাগত বক্তব্য দেন।

 



 

Show all comments
  • উজ্জল ৩ এপ্রিল, ২০১৮, ২:৪৫ এএম says : 0
    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অসংখ্য মোবারকবাদ জানাই।
    Total Reply(0) Reply
  • এমদাদুল হক ৩ এপ্রিল, ২০১৮, ২:৪৬ এএম says : 0
    এই বিষয়টি আমাদের সকলকে বুঝতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • ওবায়েদ ৩ এপ্রিল, ২০১৮, ২:৪৭ এএম says : 0
    অটিজম আক্রান্তদের আদর-ভালোবাসা দিয়ে কাছে টেনে নিতে হবে। আর তাদের মাঝে যে সুপ্ত প্রতিভা রয়েছে সেই সুপ্ত প্রতিভাকে জাগিয়ে তুলতে হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ