Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পশ্চিম জোনে বিদ্যুৎ সঞ্চালন, সরবরাহ ও বিতরণ ব্যবস্থায় বিপর্যয়

পানি সরবরাহ, জরুরি স্বাস্থ্য সেবাসহ সাড়ে ৩ কোটি মানুষের দুর্ভোগ চরমে

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ২ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

কালবৈশাখী মৌসুমের শুরুতেই দেশের দক্ষিণাঞ্চল সহ গোটা পশ্চিম জোনের ২১টি জেলার বিদ্যুৎ সঞ্চালন, সরবরাহ ও বিতরণ ব্যবস্থা লন্ডভন্ড হয়ে যাচ্ছে। দফায় দফায় বিদ্যুৎ বিভ্রাটে চরম বিপর্যস্ত বরিশাল ও খুলনা বিভাগ সহ ফরিদপুর অঞ্চলের সাড়ে ৩ কোটি মানুষ। এ অঞ্চলের শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্য সহ ভরা মৌসুমের কৃষি সেচ ব্যবস্থাও চরম বিপর্যয়ের কবলে। শনিবার সকাল ৫টার দিকে মাঝারী কালবৈশাখীতে ঈশ্বরদী-খুলনা ৪শ’ কেভি গ্রীড সঞ্চালন লাইনে গোলযোগের কারণে পশ্চিম জোনের বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও উৎপাদন ব্যবস্থার মত সরবরাহ এবং বিতরণও একযোগে বন্ধ হয়ে যায়। ফলে টানা প্রায় ৪ ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। তবে উৎপাদন ব্যবস্থা স্বাভাবিক হতে সন্ধ্যা গড়িয়ে যায়।
এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যায় মাত্র ২০ কিলোমিটার বেগের মৃদু দমকা হওয়ার সাথে মৌসুমের প্রথম কালবৈশাখীতেই বরিশাল মহানগরীসহ সমগ্র জেলা এবং ঝালকাঠী জেলার বিদ্যুৎ সরবরাহ, সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। মাত্র ১৫ মিনিট স্থায়ী কালবৈশাখীতে নগরীর রূপাতলী-কাশীপুর ৩৩ কেভি সঞ্চালন লাইন সহ ২২টি ১১ কেভি ফিডারের প্রায় সবগুলোই বন্ধ হয়ে যায়। বরিশাল-ঝালকাঠী ৩৩ কেভি সঞ্চালন লাইনও একইসাথে ট্রিপ করে। ফলে সমগ্র বরিশাল মহানগরী সহ গোটা জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল ১ ঘন্টা থেকে ৩ ঘন্টা পর্যন্ত। ঝালকাঠী জেলার বিভিন্ন এলাকায়ও প্রায় একই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ফলে মাত্র ১৯ কিলোমিটার বেগের বাতাসের সাথে বজ্রবৃষ্টিতেই ওয়েষ্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী-ওজোপাডিকো এর ভঙ্গুর বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা আমজনতাকে চরম দুর্ভোগে ফেলে। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সহ এ অঞ্চলের বেশীরভাগ স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান ও জরুরী পানি সরবরাহ পর্যন্ত বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।
রাত ১২টা নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও মাত্র ৫ ঘন্টার মাথায় শনিবার সকাল ৫টার কয়েক মিনিট আগে আরেক মৃদু কালবৈশাখীর কারণেই ঈশ্বরদী-ভেড়ামারা-খুলনা ৪শ’ কেভি জাতীয় গ্রীড সঞ্চালন লাইনে গোলযোগ দেখা দেয়। কালবৈশাখীর দমকা বাতাসে ৪শ’ কেভি সঞ্চালন লাইনটির ঈশ্বরদী প্রান্তে দুটি সার্কিটের স্পর্শের কারণে পশ্চিম জোনের বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থায় ভয়াবহ গোলযোগ সৃষ্টি হয়। একযোগে সবগুলো উৎপাদন ইউনিটও বন্ধ হয়ে যায়। ফলে হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থা চরম বিপর্যয়ে পড়ে। একইসাথে বরিশাল ও খুলনা সিটি করপোরেশন সহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সবগুলো জেলা সদর ছাড়াও পৌর শহরগুলোতেও পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। বিদ্যুতের অভাবে শনিবার অনেক মসজিদ থেকে ফজরের আজান শোনা যায়নি।
সকাল ৫টার দিকে জাতীয় গ্রীডের সঞ্চালন ব্যবস্থার ঐ বিপর্যয়ের ফলে বরিশাল ও খুলনা অঞ্চলের সবগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদন ইউনিটও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি সামাল দেয়া দুরূহ হয়ে পরে। আঞ্চলিক লোড ডেসপাস সেন্টার সহ সবগুলো গ্রীড সাব-স্টেশনই দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎ শূণ্য থাকার মধ্যেই ‘অপারেশন ব্লাক আউট’ পদ্ধতিতে ‘ইষ্ট-ওয়েষ্ট ইন্টার কানেক্টর’এর মাধ্যমে পূর্বজোন থেকে বিদ্যুৎ এনে লোড ডেসপাস সেন্টার থেকে উৎপাদন কেন্দ্রগুলোতে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া হয়। ফলে একে একে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো সচল করা সম্ভব হয়। সকাল ৮টার পর থেকে বিভিন্ন এলাকায় ক্রমে বিদ্যুৎ পৌঁছতে শুরু করলেও ভোলার ২২৫ মেগাওয়াটের কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার স্টেশনটি চালু করতে বিকেল গড়িয়ে যায়।
সর্বশেষ সকাল ১০টার পরে বরিশাল ও পটুয়াখালী গ্রীড সাব-স্টেশনে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়ে সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থা প্রায় স্বাভাবিক করা সম্ভব হয়। তবে বরিশাল মহানগরী ও বাইরের বেশ কিছু ১১ কেভি লাইনের ত্রুটির কারণে শনিবারও দিনভরই বিভিন্ন ফিডারে ছোট-বড় গোলযোগ অব্যাহত ছিল। গতকালও বরিশাল মহানগরীর বিভিন্ন ফিডারে লোডশেড করতে হয়েছে সরবরাহ ও বিতরণ ব্যবস্থার ত্রুটির কারণে।
ওজোপাডিকো’র বরিশাল মহানগরীসহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলেই বিদ্যুৎ বিতরণ ও সরবরাহ ব্যবস্থা এখন নাজুক। ওভারলোডেড ট্রান্সফর্মার, পুরনো এইচটি ও এলটি কন্ডাক্টর, জরাজীর্ণ ত্রুটিপূর্ণ ইনস্যুলেটরসহ অনেক বড় এলাকা ও বিশাল লোডের ১১ কেভি ফিডারগুলো খোদ বরিশাল মহনগরবাসীকেও চরম বিব্রতকর অবস্থায় ফেলছে। কিন্তু তা থেকে উত্তরণের কোন লক্ষণ নেই। সহস্রাধিক কোটি টাকা ব্যয়ে বিতরণ ও সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নয়নে ওজোপাডিকো’র জন্য দুটি উন্নয়ন প্রকল্প চলমান থাকলেও তার গতি অত্যন্ত ধীর। ফলে ঐসব প্রকল্পের সুফল এ অঞ্চলের গ্রাহকগণ পাবার আগেই হয়ত তা পুনর্বাসনের সময় হয়ে যেতে পারে।
তবে এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালকগণ দ্বিমত পোষণ করলেও তা নিয়ে ওজোপাডিকো’র ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সরবরাহ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ