Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নৌকায় ভোট দিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখুন

চাঁদপুরের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী

তারেক সালমান ও বি এম হান্নান, চাঁদপুর থেকে | প্রকাশের সময় : ১ এপ্রিল, ২০১৮, ৬:১১ পিএম | আপডেট : ৭:১৪ পিএম, ১ এপ্রিল, ২০১৮
  • নৌকায় ভোট দিলে কেউ খালি হাতে ফিরে না

উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চাঁদপুরবাসীর কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আপনারা নৌকায় ভোট দিয়ে, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখুন। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য আমি আপনাদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাই। আমরা চাই ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে ক্ষুধামুক্ত দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ। আমরা সেই বাংলাদেশ গড়তে চাই। এজন্য সরকারের ধারাবাহিকতা থাকা দরকার। গতকাল রোববার(১ এপ্রিল) বিকেলে চাঁদপুর স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন। তিনি বলেন চাঁদপুরের জন্য কোন উন্নয়ন বাদ রাখিনি। আপনারা চাঁদপুরের মানুষ- অতীতে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন, আমরা উন্নয়নের সুযোগ পেয়েছি। আর নৌকা মার্কায় ভোট দিলে কেউ খালি হাতে ফিরে না।

আওয়ামী লীগ সভাপতি এ সময় বিএনপি-জামায়াত জোটের সমালোচনা করে বলেন, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, যারা জাতির পিতার খুনিদের পুরস্কৃত করে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেয়, ভোট চুরি করে পার্লামেন্টে বসায়, যারা যুদ্ধাপরাধী, সাজাপ্রাপ্ত আসামীদের হাতে আমার লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত পতাকা তুলে দেয়, তারা এদেশের কোনো উন্নয়নে বিশ্বাস করে না। উন্নয়ন করেনি কোনোদিন, ভবিষ্যতেও করবে না।

তিনি বলেন, আপনাদের কাছে আমার আহ্বান, নৌকা মার্কা আপনাদের মার্কা। এই নৌকা মার্কা সবসবময় মানুষকে উদ্ধার করে। নূহ নবীর নৌকা মানবজাতি এবং পশুপাখি সব রক্ষা করেছিল। এ নৌকায় ভোট দিয়ে আপনারা স্বাধীনতা পেয়েছেন, তাই আগামীকে যে নির্বাচন হবে। নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করেছে, ডিসেম্বর মাসে নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে আপনাদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আমাকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। আইভি আপাসহ আমাদের অনেক নেতাকর্মী মারা গেছে। এই চাঁদপুরেরও আমাদের একজন কর্মী মারা গেছে। বারবার এইকভাবে ওরা আঘাত দেওয়ার চেষ্টা করেছে, বেঁচে গেছি। আমার লক্ষ্য একটাই, বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ। সেই লক্ষেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

আওয়ামী লীগ সভাপতি আরও বলেন, ওদের লজ্জা শরম একটু কম। লজ্জা শরম কম এজন্যই বলবো, যে স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। ওরা তো বাংলাদেশের সৃষ্টিতেই বিশ্বাস করে না। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে এটাই যেন ওরা মেনে নিতে পারে না। আপনারাই তুলনা করে দেখেন, ১৯৭৫ এর পর থেকে যারা ক্ষমতায় ছিল, ওই জিয়া বলেন, এরশাদ বলেন, খালেদা জিয়াই বলেন বাংলাদেশের তো কোনো উন্নতি করতে পারে নাই। চাঁদপুরের কী উন্নতিটা করেছে তারা? ঘ্যা তাদের একটা উন্নতি হয়েছে, দুর্নীতির উন্নতি। টানা পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করেছে বাংলাদেশকে। বাংলাদেশের মাথা হেট হয়েছে বিশ্ব দরবারে। নিজেরা লুটপাট করেছে, টাকা পাচার করেছে বিদেশে। লুটপাট করেই থেমে থাকে নি, এতিমের টাকা এসেছে বিদেশ থেকে, একটা টাকাও এতিমের হাতে যায় নি। সব টাকা লুটপাট চুরি করে খেয়েছে। আজকের সেই এতিমের টাকা চুরির দায়ে মামলায় সাজা ভোগ করছে খালেদা জিয়া। আর তার জন্য নাকি আন্দোলন করে। আপনারা জানেন, কোরান শরীফে বলা আছে, এতিমের হক এতিমকে দাও। এতিমের সম্পদ তোমরা চুরি কর না। তাদের লোভ এতো বেশি যে, লোভের মাত্রা তাদের ছাড়িয়ে গেছে।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদ সভাপতিত্বে জনসভায় আরো বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, আব্দুর রহমান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, ত্রাণমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম (বীরউত্তম), সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, একে এম এনামুল হক শামীম, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, পঙ্কজ দেবনাথ এমপি, যুব মহিলা লীগের সভাপতি অপু উকিল, নুরজাহান বেগম মুক্তা এমপি। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।
এ সময়ে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম,সাবেক ছাত্র নেতা আবু আব্বাসসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ,লক্ষ্মীপুর, শরীয়তপুর ও কুমিল্লার জেলার আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ও জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

চাঁদপুরের হাইমচর চরভাঙ্গায় বাংলাদেশ স্কাউটস-এর ৬ষ্ঠ জাতীয় কমডেকার উদ্বোধন শেষে চাঁদপুর শহরে আসেন প্রধানমন্ত্রী। দুপুর পৌনে ১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত জোহরের নামাজ এবং মধ্যাহ্ন বিরতির সময় তিনি চাঁদপুর সার্কিট হাউজে অবস্থন করেন তিনি। দুপুর ৩টা ৬মিনিটে তিনি জনসভাস্থল চাঁদপুর স্টেডিয়ামে উপস্থিত হন। জনসভা মঞ্চের পাশে স্থাপিত ২৩টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ২৪টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর ইলেকট্রিক সুইচ টিপে উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী।

এরপর জনসভা মঞ্চে দাাঁড়িয়ে উপস্থিত জনসমুদ্রের উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে অভিবাদন জানান। পরে প্রধানমন্ত্রীকে জেলাবাসীর পক্ষ থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক চাঁদপুরের ঐতিহ্য ইলিশ খচিত স্মারক দিয়ে বরণ করে নেয়। বেলা ৩টা ৪১ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্য শুরু করেন। ৩২ মিনিটের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী চাঁদপুরে মেডিকেল কলেজ, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, পর্যটনের সুযোগ সৃষ্টি, নৌ-বন্দর, নদী ভাঙন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের প্রতিশ্রুতি দেন।

প্রধানমন্ত্রীর জনসভা উপলক্ষে নতুন সাজে সাজানো হয় গোটা চাঁদপুর শহর ও তার আশপাশের সড়ক ও মহাসড়কগুলো। রঙিন ব্যানার, ফেস্টুন ও তোরণে ছেয়ে ফেলা হয় পুরো শহর। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে লাগানো হয় নতুন রং। ছোট বড় সব নেতাসহ আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ব্যানার পোস্টারে রাঙিয়ে তোলেন রাস্তার মোড় ও পাড়া মহল্লা। প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতাদের ব্যাপক শোডাউন লক্ষ্য করা গেছে। জনশক্তির প্রদর্শনীও ছিল চোখে পড়ার মত। ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রত্যেক নেতা অনুসারীদের স্রোত ছিল স্টেডিয়ামের দিকে।

জনসভায় আসা নানা পেশার মানুষ তাদের বিভিন্ন দাবির কথা তুলে ধরেছেন। ব্যানার-ফেস্টুনে সে দাবিই তুলে ধরেছেন অনেকে। মুক্তিযোদ্ধা থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে কথা বলে কমপক্ষে এক ডজন দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে। দাবিগুলো হলো- চাঁদপুরে মেডিকেল কলেজ করা, চাঁদপুর লাকসাম রেলপথ ডাবল (দুই লাইন) করা, চাঁদপুর শরীয়তপুর রুটে পদ্মা-মেঘনা সেতু নির্মাণ করা, চাঁদপুর পৌরসভাকে সিটি কর্পোরেশন করা, চাঁদপুরকে পর্যটন শহর ঘোষণা করা, ঢাকা-চাঁদপুর রুটে যাত্রীবাহী সরকারি জাহাজ সার্ভিস চালু করা, চাঁদপুরে একটি বিমানবন্দর স্থাপন করা, চাঁদপুর স্টেডিয়ামকে আধুনিকায়ন করা, চাঁদপুর-রায়পুর সেতুর টোল আদায় বন্ধ করা, চাঁদপুর সরকারি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা করা, দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ দ্রুত শেষ করা এবং ঢাকা-চাঁদপুর রেল লাইন স্থাপন করার দাবি চাঁদপুরবাসীর।

সর্বশেষ ২০১০ সালের ২৫ এপ্রিল চাঁদপুর সফরে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেসময়ে চাঁদপুরের গুনরাজদী বালুর মাঠে ১৫০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এরও ১১বছর আগে ১৯৯৯ সালের ২৮ নভেম্বর চাঁদপুর সফরকালে নতুনবাজার-পুরানবাজার সেতু ও চাঁদপুর পৌর অডিটরিয়ামের ভিত্তিফলক স্থাপন এবং জেলা কালেক্টরেট ভবন ও আদালত ভবনের ভিত্তিফলক উন্মোচন করেছিলেন শেখ হাসিনা



 

Show all comments
  • hmnasiruddin ১ এপ্রিল, ২০১৮, ৮:৩৯ পিএম says : 0
    Amra onnoyon sai.tobe tar saye base sai sosto gonotantrik babosta.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ