Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পরমাণু প্রশ্নে আলোচনায় প্রস্তুত : কিম জং উন

ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের আগে গোপনে চীন সফরে উত্তর কোরীয় নেতা

| প্রকাশের সময় : ২৯ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং উন বলেছেন, তার দেশ কোরীয় উপদ্বীপকে পরমাণু অস্ত্রের হুমকিমুক্ত করার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে খোলামেলা ও গঠনমূলক আলোচনার ব্যাপারে প্রস্তুত। এ বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও দক্ষিণ কোরীয় প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনার জন্য তিনি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছেন।
সবুজ রঙা সামরিক ট্রেনে করে সোমবার সস্ত্রীক বেইজিং পৌঁছে উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং উন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। সে বৈঠকেই তিনি এই অভিমত প্রকাশ করেন বলে বুধবার জানিয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম। উভয় নেতা বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব দ্য পিপল এ বৈঠক করেন। শি ও তার স্ত্রী পেং লিয়ুয়ান কিম ও তার স্ত্রী রি সোল জু’র সম্মানে একটি প্রীতিভোজের আয়োজন করেন। এরপর তারা একসঙ্গে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। চীনের প্রধানমন্ত্রী ও সিপিসি’র (সেন্ট্রাল কমিটি অব দ্য কমিউনিস্ট পার্টি অব চায়না) কেন্দ্রীয় কমিটির পলিটিক্যাল ব্যুরোর স্থায়ী কমিটির সদস্য লি কেকিয়াং, সিপিসি’র কেন্দ্রীয় কমিটির পলিটিক্যাল ব্যুরোর স্থায়ী কমিটি ও সিপিসি’র কেন্দ্রীয় কমিটির মন্ত্রীপরিষদের সদস্য ওয়াং হানিং এবং চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়াং কিশান এ সময় উপস্থিত ছিলেন। বৈঠককালে শি সিপিসি’র কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে কিমকে চীনে তার প্রথম সফরের জন্য উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। শি বলেন, সিপিসি’র কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব ও সিপিসির কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশন অফিসের জন্য ১৯তম সিপিসি জাতীয় কংগ্রেস তাকে পুনরায় নির্বাচিত করার পর কিম তাকে অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছেন। এ জন্য শি কিমকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
শি বলেন, চীনে কিমের এই সফর দু’দেশ ও দুই দলের মধ্যে সুদৃঢ় বন্ধনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করছে। এই বিশেষ সময়ে সফরটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। শি বলেন, ‘সফরটি নিয়ে আমাদের অনেক প্রত্যাশা রয়েছে।’ কিম বলেন, কমরেড শি জিনপিংয়ের প্রতি সিপিসি ও পুরো দেশের সমর্থন রয়েছে, যা তাকে দেশটির প্রধান নেতা বানিয়েছে। সর্বসম্মতিক্রমেই তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট ও সিএমসি’র চেয়ারম্যান হিসেবে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন। কিম আরো বলেন, ডিপিআরকে-চীনের বন্ধুত্বের ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় ব্যক্তিগতভাবে শি’কে অভিনন্দন করা তার কর্তব্য। কিম বলেন, বর্তমানে কোরীয় উপদ্বীপের পরিস্থিতি খুব দ্রæত পাল্টে যাছে এবং ওই অঞ্চলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হছে। শি বলেন, চীন-ডিপিআরকে’র মধ্যে ঐতিহ্যপূর্ণ বন্ধুত্ব রয়েছে। তিনি আরো বলেন, দেশ দুটি অভিন্ন আদর্শ ও বিশ্বাস লালন করে। এটা তাদের মধ্যকার বৈপ্লবিক বন্ধুত্ব।
চীনের প্রেসিডেন্ট বলেন, দুদেশের জ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দ কয়েক প্রজন্ম ধরে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছেন। তারা আত্মীয়ের মতো পরস্পরের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন। শি বলেন, ‘এটা চলমান আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে ইতিহাস ও বাস্তবতার ভিত্তিতে উভয়পক্ষের জন্য একটি কৌশলগত সম্পর্ক এবং একমাত্র পথ।’
শি আরো বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিনের স্থিতিশীল সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্যে এক সঙ্গে কাজ করতে ইছুক। এর মাধ্যমে উভয় দেশ ও দেশের জনগণের স্বার্থ রক্ষা হবে এবং আঞ্চলিক শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নে সহায়ক হবে।
উত্তর কোরীয় নেতার কণ্ঠে যুদ্ধংদেহী মনোভাবের বদলে নমনীয় ভাবই প্রকাশ পেয়েছে বেশি। তার ভাষায়, তার দেশ উত্তর কোরিয়া আন্তঃকোরীয় সম্পর্ককে সমঝোতা, সহযোগিতা ও পারস্পরিক আস্থার সম্পর্কে উন্নীত করতে আগ্রহী। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈরিতার বদলে সংলাপের সূচনা করতেও আগ্রহী তারা। এজন্যই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চান তিনি। পরমাণু অস্ত্র ও আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে যে উত্তেজনা চলছে, তারও গঠনমূলক সমাধান সম্ভব বলে মনে করেন তরুণ এই নেতা: ‘যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়া যদি আমাদের প্রচেষ্টার প্রতি শুভেছার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসে তাহলে কোরীয় উপদ্বীপে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা অসম্ভব নয়। সবকিছুই নির্ভর করছে পারস্পরিক সদিছা ও আন্তরিকতার ওপর’।
চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, কিম মনে করেন যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে আগের যুদ্ধংদেহী অবস্থান এখন ততোটা নেই। পরিস্থিতি এখন আগের চেয়ে অনেক ইতিবাচক। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংও অনুরূপ মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। শি জিন পিং এজন্য উত্তর কোরিয়ার বদলে যাওয়া ইতিবাচক মনোভাবের প্রশংসা করেছেন। তার মতে, সব কিছুই ঠিকঠাক আছে। এখন শুধু সদিছার মনোভাবটা ধরে রাখাই আসল কাজ।
উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং উন এখন প্রতিবেশী দেশ চীনে অবস্থান করছেন। চীনে তার এই সফরটি একেবারেই আকস্মিক ও অপ্রত্যাশিত। তাছাড়া তিনি কখনই বিদেশ সফরে যান না। এর আগে একবারই তিনি দেশের বাইরে পা রেখেছিলেন। সেটাও বহ আগে ২০১১ সালে। অতি গোপনীয়তা আর নিশ্ছিদ্র, নজিরবিহীন নিরাপত্তার মধ্যে সোমবার কিম জং উন চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে গিয়ে পৌঁছান।
সংবাদ মাধ্যমগুলো জানায়, তার এই চীনযাত্রা উড়োজাহাজে করে নয়, বরং সবুজ রঙা একটি মিলিটারি ট্রেনে। এই ট্রেনটির নিরাপত্তা এমনই ছিল যে, বুঝতে কারো বাকি ছিল না যে, উত্তর কোরিয়া থেকে খুব উচ পর্যায়ের কেউ এসেছেন। আর হতে পারেন তিনি স্বয়ং কিম জং উন। চীন ও উত্তর কোরিয়া দুদেশের তরফ থেকেই এ ব্যাপারে ‘মুখে কুলুপ আঁটা’ নীতি বজায় রাখা হয়। এমনকি চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যন্ত দাবি করেছে এরকম কিছু তাদের জানা নেই।
কিন্তু যতোই ঢাক-ঢাক গুর গুর করা হোক এরই মধ্যে কিমকে বহনকারী ট্রেনের ভিডিও ফুটেজ দেখিয়ে দিয়েছে টোকিও-ভিত্তিক নিপ্পন নিউজ নেটওয়ার্ক।
ফুটেছে একটি সবুজ ট্রেনকে বেইজিংয়ে প্রবেশ করতে দেখা যায়। এরকম সবুজ রঙা ট্রেনে কিম জং উনের পিতা কিম জং ইলও ভ্রমণ করতেন। কিমের পিতা কিম জং ইল যখন বেইজিং সফরে গিয়েছিলেন তখনও ব্যাপারটা চীন বেমালুম গোপন করেছিল। এবারও তা-ই হলো। কিম জং ইল সফর শেষ করে চলে যাবার পরই কেবল চীন তা প্রকাশ করে।
উল্লেখ্য, উড়োজাহাজে চড়তে ভয় পেতেন কিম জং উনের বাবা কিম জং ইল। তাই তিনি ট্রেনে ভ্রমণই পছন্দ করতেন।
কিম জং উনের এই চীন সফরটি হছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক সময়ে। কেননা ট্রাম্পের সঙ্গে কিম জং উনের অভূতপূর্ব, ঐতিহাসিক এক বৈঠক হতে যাছে। এখন তারই প্রস্তুতি চলছে। কিম জং উনের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
বৈঠকের দিন তারিখ এখনও ঠিক হয়নি। এ নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে সীমান্তের ‘শান্তিগ্রাম’ পানমুনজমে এক প্রস্তুতি বৈঠকে বসছে উত্তর কোরিয়া। সবকিছু ভালোয় ভালোয় হলে মে মাসের শেষ দিকে বা কাছাকাছি কোনো সময়ে ট্রাম-কিম বৈঠকটি হবে। যুক্তরাষ্ট্র-উ. কোরিয়ার মধ্যে এমন উচ পর্যায়ের বৈঠক কখনোই হয়নি অতীতে। সূত্র : সিনহুয়া।

 



 

Show all comments
  • Nasir Parvez ২৯ মার্চ, ২০১৮, ৭:৪০ এএম says : 0
    alochoner maddome e sob kisur solution howa dorker
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পরমাণু


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ