প্রশ্ন : বিদেশ থেকে দেশে ফিরলে মুসাফির থাকা প্রসঙ্গে।
প্রশ্নের বিবরণ : আমি ২৩ বছর হল অষ্ট্রেলিয়া থাকি এবং বলতে গেলে এটাই এখন আমার পারমানেন্ট ঠিকানা। দেশে যাওয়া হয় খুব কম, তবে যখন যাই
উত্তর: কোনো ব্যক্তির অমঙ্গল কিংবা অনিষ্ট চেয়ে প্রার্থণা করাই হলো বদ দোয়া। একে অপরের সাথে সামান্যে বিষয়ে মনোমালিন্যে হলে বা আচরণ দ্বারা মনে কষ্ট পেলে অনেকে অভিসম্পাত বা বদ দোয়া করে থাকেন। হযরত সামুরা ইবনে জুনদুব (রা) হতে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল (সা) এরশাদ করেছেন, তোমরা একে অপরকে এভাবে অভিসম্পাত করবে না যে, তোমার উপর আল্লাহর অভিসম্পাত, আল্লাহর গজব পতিত হউক এবং তুমি দোজখি হও। এবং তোমাকে অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করা হউক বলে বদ দোয়াও করবে না। (তিরমিযি ও আবু দাউদ)।
আমাদের মহানবী (সা) কাফের মোনাফিক দ্বারা অনেক দু:খ কষ্ট লাঞ্চনা পেয়েছেন। এরপরও হযরত রাসূল (সা) কাফেদের উপর অভিসম্পাত করেনি। হযরত রাসূল (সা) দু:খ যাতনার বিষয়ে যদি উহ পরিমান শব্দ করতেন, তাহলে কাফেরের বংশ বলে কিছুই থাকতো না। মন্দ আচরণকারী ব্যক্তির হেদায়াত লাভের জন্যে আল্লাহর নিকট প্রার্থণা করাই হলো মোমিনের কাজ। অহেতুক কারো উপর অভিসম্পাত করলে তা নিজের উপর এসে পড়ে। হযরত আবু দারদা (রা) হতে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল (সা) এরশাদ করেছেন, যখন বান্দা কোন কিছুর উপর অভিসম্পাত করে তখন সে অভিসম্পাত বাক্যটি আসমানের দিকে উড়ে যায়; কিন্তুু এর জন্য আসমানের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। তারপর তা যমীনের দিকে ফিরে আসে এবং যমীনের দরজাগুলোও বন্ধ করে দেয়া হয়। অতঃপর তা ডান দিকে যায় এবং পুণরায় বাম দিকে ফিরে আসে। আর যখন এভাবে কোন দিকেই স্থান না পায় তখন অভিসম্পাত দানকারীর দিকে ফিরে আসে। যার উপর অভিসম্পাত করা হয়েছে যদি সে অভিসম্পাতের উপযোগী না হয়। অভিসম্পাত তার দিকেই প্রত্যাবর্তন করে। ( আবু দাউদ)।
হযরত রাসূল (সা) এর চলাফেরার পথে আরবের এক বুড়ি কাটা পুঁতে রাখত। হঠাৎ একদিন রাসূল (সা) রাস্তায় কাটা দেখতে না পেয়ে বুড়ি অসুস্থ ভেবে বুড়িকে দেখতে তার বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন। আবু জেহেল হযরত রাসূল (সা) এর উপর সীমাহীন বর্বরোচিত নির্যাতন করেছে। এতো কিছুর পরও রাসূল (সা) আবু জেহেলকে চাচা হিসেবে সম্বোধন করতেন। আবু জেহেলকে একটি বারের জন্যেও গালমন্দ করেন নাই। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) হতে বর্ণিত হয়েছে, একদিন বাতাসে এক ব্যক্তির চাদর উড়িয়ে নিল। তখন সে ব্যক্তি বাতাসকে অভিসম্পাত করল। ইহা শুনে হযরত রাসূল (সা) বললেন, ‘ বায়ুকে অভিসম্পাত করো না কেননা বায়ু আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত। বস্তুুত, যে ব্যক্তি এরূপ কোন কিছুকে অভিসম্পাত করল যা অভিসম্পাতের উপযোগী নয়। তবে ঐ অভিসম্পাত তার নিজের উপরই ফিরে আসবে। (তিরমিযি, আবু দাউদ)।
বিপদে আপদে অভিসম্পাত না করে আল্লাহর নিকট ধৈর্য্য ধারণ করার শক্তি চাইতে হবে। কারণ যে ব্যক্তিকে উদ্দেশ্যে করে বদদোয়া করা হচ্ছে। তারও একজন মালিক রয়েছেন। হযরত আয়উব (আ) অসুস্থায় কষ্ট পেতেছিলেন। এরপরও তিনি প্রার্থনা করেছিলেন, ‘(হে আল্লাহ!) আমার কষ্ট হচ্ছে, আর আপনি সকলের চেয়ে অধিক দয়ালু।’ (সূরা আম্বিায়া: ৮৩)। হযরত ইয়াকুব (আ) প্রার্থনা করেছিলেন,‘আমি আমার শোক ও দূ:খের অভিযোগ কেবল আপনার সমীপেই পেশ করছি।’ (সূরা ইউসূফ: ৮৬)। অভিসম্পাত দানের ন্যায় মন্দ কাজ বেঁচে থাকার জন্যে আল্লাহ সকলকে তৌফিক দান করুক। আমীন।উত্তর দিচ্ছেন: ফিরোজ আহমাদ
ইসলামিক প্রশ্নোত্তর বিভাগে প্রশ্ন পাঠানোর ঠিকানা
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।