Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তবুও সংস্কার হয় না শুভাঢ্যা খাল

কচুরিপানা, ময়লা-আবর্জনা আর দখলের কবলে ঢাকার জলাশয় ৫

সায়ীদ আবদুল মালিক | প্রকাশের সময় : ২৮ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

খাল নাকি ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়, দুর থেকে দেখে বুঝার উপাই নেই। দুই পাশ থেকে দখলদারদের কবলে পড়ে দেড়শ ফুটের খালটি এখন ১০ থেকে ১৫ ফুটের একটি সরু ড্রেনে পরিণত হয়ে গেছে। বুড়িগঙ্গা থেকে উৎপত্তি হওয়া রাজধানীর নিকটবর্তী থানা দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা ও আগানগর ইউনিয়নের বুক চিরে বয়ে যাওয়া এই খালটির নাম শুভাঢ্যা খাল। ঢাকা জেলা পরিষদের তত্ত¡াবধায়নে থাকা এই খালটির দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে কেরানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ।
বুড়িগঙ্গা নদীর সংযোগস্থল দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চর কালীগঞ্জ, কালীগঞ্জ বাজার জোড়া সেতু এলাকায় গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিন গেয়ে দেখা যায়, এক সময়ের খর¯্রােতা এ খালটির কোথাও কাদা-পানি, কোথাও মায়লা-আবর্জনার স্তূপ, আবার কোথায়ও কচুরিপানাসহ বিভিন্ন আগাছা ও লতাপাতার জঙ্গল হয়েছে আছে। গত ১০ বছরেও খালটি পরিষ্কার করা হয়েছে বলে মনে হয় না। ময়লা আবর্জনা, কচুরিপানা ও আগাছা জন্মে পুরা খালটিই এখন পরিত্যাক্ত খালে পরিণত হয়ে আছে। এলাকাবাসীর কাছে এ খালটি এখন মশা উৎপাদনের খামার বলেই বেশি পরিচিত। মশার যন্ত্রণায় শুভাঢ্যা খালের আশেপাশের এলাকার মানুষসহ পুরা কেরানীগঞ্জবাসী অতিষ্ঠ। মশার উৎপাতে দিনের বেলাতেও একটু স্বস্তিতে স্থির হয়ে বসা যায় না। দিনে রাতে ২৪ ঘণ্টাই এখন মশার যন্ত্রণা সহ্য করতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে। কেরানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ গতকাল মঙ্গলবার ইনকিলাবকে বলেন, শুভাঢ্যা খালের কচুরিপানা ও ময়লা আবর্জনা পরিষ্কারের জন্য বর্তমানে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে মশা নিধনে কোন প্রকার কর্মসূচি কিংবা বাজেট কোনটিই নেই। তিনি বলেন, খালটির আবস্থা অত্যন্ত নাজুক এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। মশার বিষয়টি আমি এমন করে ভেবে দেখিনি। এই মৌসুমেই খালটি পরিষ্কার করে মশার যন্ত্রণা থেকে এলাকাবাসীকে সস্তি দেয়া জন্য যতদ্রæত সম্ভব ব্যবস্থা নিব।
শুভাঢ্যা খালের দুই পাশ ঘুরে ও স্থানীয় বাসিন্দারে সাথে কথা বলে জানা গেছে, সম্প্রতি সময়ের মধ্যে জলবায়ু ট্রাস্টের ১০ কোটি টাকা, জেলা পরিষদের ৬০ লাখ টাকসহ কাবিখা ও টাবিখার কয়েক দফায় ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেলেও খালটির আজও কাক্সিক্ষত সংস্কার হলো না। একসময় ঢাকার কেরানীগঞ্জে মানুষের সুপেয় পানির অন্যতম উৎস ছিল এ খাল। এতে মাছ শিকার করে চলত অনেকের জীবন। খালে চলত বড় বড় যাত্রীবাহী, মালবাহী নৌ-যান। এখন খালে চলাচল তো দূরের কথা, পাশ দিয়েও হাঁটা দায়। সাত কিলোমিটার খালটির প্রায় অর্ধেক পরিণত হয়েছে ময়লার ভাগাড়ে।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চর কালীগঞ্জ, কালীগঞ্জ বাজার জোড়া সেতু এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গার্মেন্টসের টুকরো কাপড় ও বাজারের বর্জ্যে অনেকটাই ভরাট হয়ে গেছে খাল। নয়া শুভাঢ্যা, কদমতলী, চরকুতুব, ঝাউবাড়ি, বেগুনবাড়ি, গোলামবাজার ও শুভাঢ্যা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-সংলগ্ন শমসেরপুর এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ময়লা-আবর্জনা ও গৃহস্থালির বর্জ্য ফেলায় খালের অস্তিত্ব হারিয়ে যাচ্ছে।
উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ আরও বলেন, কেরানীকগঞ্জ উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত কয়েক দফায় খালটির সংস্কারের কাজ করা হয়েছে। সংকারের জন্য যে পরিমাণ অর্থনৈতিক সাপোর্ট দরকার তা আমাদের নেই। তাই খালটি সংস্কারের জন্য পনি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের কাছে বাজেট ছেয়ে আবেদন করেছি। মন্ত্রণায় থেকে খালটি সংস্কারের জন্য ৫২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে বলে তিনি জানান। প্রকল্প অনুমোদন হয়ে গেলে টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষে খালটির যথাযথ সংস্কার কাজ শুরু হবে।
জানা গেছে, ২০০৭ সালে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের আমলে শুভাঢ্যা খালে বুড়িগঙ্গা নদীর মুখ থেকে চর কালীগঞ্জ এলাকা হয়ে গোলাম বাজার এলাকা পর্যন্ত উচ্ছেদ অভিযান চালায় যৌথ বাহিনী। খালের ৩ কিলোমিটার অংশের উভয় পাশের ১৮৬টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। পাশাপাশি খাল পুনরায় খনন করে সেখানে নাব্যতা সৃষ্টি করা হয়। পরে ২০১২ সালের জুলাইয়ে কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন ৫৪ লাখ ৮৮ হাজার টাকা ব্যয়ে খালটি খনন ও উদ্ধারের কাজ শুরু করে। ২০১৫ সালের মার্চে পুনরায় খালের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, পুনঃখনন ও তীর সংরক্ষণ কাজ শুরু হয়। ওই সময় পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড থেকে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে খালের ১ দশমিক ৩ কিলোমিটার এলাকার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, পুনঃখনন ও তীর সংরক্ষণসহ খালের দুই পাশে বøক বসিয়ে পানিপ্রবাহ সৃষ্টির প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। চলতি বছরের শুরু থেকে কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি এবং কাবিখা প্রকল্পের আওতায় খালের একই অংশে প্রায় ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে বর্জ্য অপসারণ ও নাব্যতা সৃষ্টির কাজ করা হয়। তবে ভরাট-দূষণ থামছে না।
আগানগর ইউনিয়নের জোড়া ব্রিজ এলাকার প্রবিণ বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা ছোট বেলায় এই খালে গোসল করেছি, খালের পানি পান করেছি। গত ১০/১২ বছর আগেও এ খালে ¯্রােত ছিল এবং নৌ-যান আসা যাওয়া করতে পারতো। এলাকাবাসীর স্বার্থেই সরকারের উচিত খালটি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা।
পূর্ব আগানগর গুদারাঘাটের খেয়া নৌকার মাঝি আবদুর রহিম বখস বলেন, এই খালটিতে নৌকা চালিয়ে একসময় জীবিকা নির্বাহ করতাম। এ খাল দিয়ে গোলাম বাজার হয়ে যাত্রী নিয়ে রাজেন্দ্রপুর বাজারে যেতাম। বর্তমানে খাল এমনভাবে ভরাট হয়েছে, যে এতে প্রবেশ করাই মুশকিল।
আগানগর ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নং ওয়ার্ড মেম্বার দেলোয়ার হোসেন দিলু বলেন, এই খালটি এই এলাকার মানুষের কাছে আশীর্বাদ স্বরূপ ছিল। বড় বড় নৌ-যান এই খাল দিয়ে ধলেশ্বরী নদীতে যেত। কিন্তু এখন আর সেই অবস্থায় নেই। তিনি বলেন, আমরা এ খালটিকে আগের আবস্থানে ফিরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। দখলদার উচ্ছেদের কাজ চলছে। উচ্ছেদ শেষ হলে খালটির সংস্কার কাজ শুরু হবে বলে তিনি জানান। ###

 

 



 

Show all comments
  • Nadir ২৮ মার্চ, ২০১৮, ৬:৪২ পিএম says : 0
    Please try to make all City bigger by Dirt.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ