পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ওয়ান ইলেভেনের সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নির্যাতনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তখন ক্ষমতায় থেকে অত্যাচার নির্যাতন করেছে বিএনপি সরকার। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসার পর প্রথম গ্রেফতার করা হলো আমাকে। আমি তো সরকারের ছিলাম না। কারা এই কাজ করেছে, করিয়েছে; তা অন্তত এখন আমি জানি। তাদের হিসাব-নিকাশ পরে করবো।
গতকাল মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্বাধীনতা দিবসের আলোচনায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ৪৯ মিনিটের বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশ গঠনে জাতির জনকের ভূমিকা, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে কী কী ষড়যন্ত্র হয়েছে তার বিস্তারিত বর্ণনা দেন। এর সূত্র ধরেই সেনাসমর্থিত ততত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে তাকে গ্রেফতারের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। সংবিধান স্থগিত করে জরুরি অবস্থা জারি করে ২০০৭ সালের জানুয়ারি থেকে দুই বছর দায়িত্ব পালন করা ফখরুদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার সেনা সমর্থিত বলে পরিচিত হলেও ওই সরকারের আমলে বাংলাদেশের কয়েকজন সম্পাদক এবং নাগরিক সমাজের সদস্যরা নেপথ্যে ভূমিকা রাখেন বলে গুঞ্জন উঠে। কেউ কেউ ওই সরকারকে ‘আমাদের সরকার’ বলেও পরিচয় দিতেন। সেই সরকারের মেয়াদ শেষে ফখরুদ্দীন আহমদ এবং চাকরির মেয়াদ শেষে মঈন উ আহমেদ বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যান। তবে তাদের বিরুদ্ধে এবং ‘আমাদের সরকার’ দাবি করা লোকদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এই প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসাব-নিকাশের কথা বললেন।
পদ্মা সেতুর চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে কারো নাম না নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, একটা ভদ্রলোক, বিশে^র অনেক নামকরা প্রাইজ পেয়েও তার মন ভরেনি। ক্ষুদ্র একটি ব্যাংকের এমডির পদের লোভে পদ্মা সেতু বন্ধ করার জন্য আমেরিকায় লবিং করে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক থেকে টাকা বন্ধ করে দেয়। আমি আগেই বলেছি, জাতির পিতা বলেছেন, কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না। আমরা বাঙালি, আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা। আমিও চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম। দুর্নীতির অভিযোগ আনার বহু চেষ্টা করা হয়েছিল। আগে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে এজেন্সি হায়ার করে এনে আমার বিরুদ্ধে, আমার বোনের বিরুদ্ধে এবং আমার ছেলের বিরুদ্ধে তদন্ত করেছিলেন যে কোন দুর্নীতি পায় কিনা? কিন্তু পায়নি। আমার সেই এমডি সাহেবও আমেরিকাকে দিয়ে তদন্ত করিয়েছে। দুর্নীতি না পেয়ে ওয়ার্ল্ড ব্যাংককে দিয়ে পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করিয়েছে। কানাডার ফেডারেল কোর্টে মামলা হয়েছিল। কিন্তু মামলায় দুর্নীতির প্রমাণ পায়নি। অভিযোগটি ছিল ভূয়া। তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এসেছিল, দেশ ৫ বার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ান হয়েছে। আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে, আমরা যে দুর্নীতি করিনি, এটা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। বাংলাদেশের মানুষের মুখ উজ্জল হয়েছে।
১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর দেশের উন্নয়ন করলেও ষড়যন্ত্রের কারণে ২০০১ সালের নির্বাচনে জয়ী হতে পারেননি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ সালে ষড়যন্ত্র হলো। ভোট বেশি পেয়েও ক্ষমতায় আসতে পারিনি। ওই সময় বিএনপি-জামায়ত জোট ক্ষমতায় এসে শুরু করলো জুলুম-অত্যাচার। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মতো তারা গ্রামের পর গ্রাম নির্যাতন চালিয়েছে। মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে, মানুষের চোখ তুলে নিয়েছে, হাত-পা ভেঙে দিয়েছে, ক্ষেতের ফসল নষ্ট করেছে, ঘর পুড়িয়ে দিয়েছে, পুকুর কেটে দিয়েছে, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ মেরেছে। ভোট দেয়ার অপরাধে এমন কোনও অত্যাচার নেই, তারা করেনি। ছয় বছরের শিশুকে পর্যন্ত ধর্ষণ করেছে। প্রতিহিংসার বশে তারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পদাঙ্ক অনুসরণ করে এসব করেছে। পাঁচ পাঁচটি বছর দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করেছে বাংলাদেশকে। তাদের দুর্নীতি আর অপশাসনের কারণেই ইমার্জেন্সি সরকার আসে। ক্ষমতায় থেকে দুর্নীতি আর অত্যাচার করে বিএনপি। আর প্রথমেই আমাকে গ্রেফতার করা হয়। কারা এই কাজ করেছে, তা আমি জানি, সে হিসাব-নিকাশ পরে করবো। তিনি বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনেও যেন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না আসতে পারে, তার জন্যও ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু সব ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, লাখো শহীদ রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা ব্যর্থ হতে দেব না। আর যারা স্বাধীনতাকে ব্যর্থ করতে চায় তারা যেন আর কোনদিন ক্ষমতায় আসতে না পারে সেজন্য দেশবাসীকে সজাগ থাকতে হবে। এই দেশ জঙ্গিদের হবে না। এই দেশ স্বাধীনতা বিরোধীদের হবে না। এই যুদ্ধাপরাধীরদের হবে না। এই দেশ হবে মুক্তিযোদ্ধাদের দেশ। সেই দেশ হিসেবেই আমি গড়ে তুলতে চাই।
বিএনপি-জামায়াত জোটের সময়ের বিবরণ তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, তারা বাংলা ভাই সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশকে সন্ত্রাসের দেশে পরিণত করেছে। গ্রেনেড হামলা তো আছেই। এইভাবে অত্যাচার করে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার চেষ্টা করেছে তারা। ইতিহাসকে মুছে ফেলার চেষ্টা করেছে। তিনি বলেন, আমরা ১৯৯৬ সালে যখন সরকার গঠন করলাম, আমাদের লক্ষ্য ছিল, দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তুলব। যে মুক্তিযোদ্ধারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করলেন, তারা ভিক্ষা করবে বা রিকশা চালাবে, এটা অপমানজনক। তাদের সন্তানেরা পড়ালেখার সুযোগ পাবে না, সেটা হতে পারে না। তাই আমরা ক্ষমতায় এসে তাদের জন্য কোটার ব্যবস্থা করলাম। আমরা চেষ্টা করছি, সবার মধ্যে ইতিহাসকে ছড়িয়ে দেয়ার। তরুণ প্রজন্ম ধীরে ধীরে উজ্জীবিত হচ্ছে, তারা সঠিক ইতিহাস জানতে পারছে। অথচ ইতিহাসকে মুখে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তারা জানে না, ইতিহাসকে কেউ মুছে ফেলতে পারে না।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ২০০৮ সালে সরকার গঠন করেছি। এরপর ২০১৩ সালে তারা এক দুর্বিষহ অবস্থা তৈরি করে। সেই অবস্থা আমরা সামাল দিয়েছি। ২০১৪ সালে আবার নির্বাচন হয়, মানুষের ভোটে ক্ষমতায় আসি। কিন্তু তারা ২০১৫ সালে অগ্নিসন্ত্রাস করে। সাড়ে ৩ হাজার মানুষ পুড়িয়েছে। হাজার হাজার গাড়ি, বাস, ট্রাক, লঞ্চ আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে। সরকারি অফিসে আগুন দিয়েছে। কেন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলো এটাই তাদের অন্তর্জ্বালা। তারা তো ক্ষমতায় থেকে ভোগ-বিলাস করেছে, মানি লন্ডারিং করে ধরা পড়েছে। এতিম খানার টাকা পর্যন্ত আত্মসাৎ করেছে। সবকিছু ধরা পড়েছে। এতে আমাদের কোনও হাত নেই। কিন্তু আদালত তাদের সাজা দিলে তারা মানে না। তারা কিছুই মানে না। তারা ক্ষমতায় থেকে মানুষকে হত্যা করেছে, এখনও তাই করতে চায়। দেশের কোনও উন্নয়ন তারা চোখেই দেখে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ক্ষমতায় আসার পর দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। জাতির পিতা মাত্র সাড়ে ৩ বছরে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশে রূপ দেন। এর ৪৩ বছর পর আজ দেশ উন্নয়নশীল হয়েছে। আমরা জনগণের কল্যাণে কাজ করেছি। আমরা বাজেট বাড়িয়েছি, দেশের জনগণের মাথাপিছু আয় বাড়িয়েছি।
এ সময় বিএনপি জোটের ক্ষমতায় থাকাকালে ২০০৫-০৬ অর্থবছরের বিভিন্ন তথ্যের সঙ্গে বর্তমান সরকারের মেয়াদের একই খাতের বিভিন্ন তথ্যের তুলনা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে জনগণের দোড়গোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিচ্ছি। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশের ঘোষণা দিয়েছি। মানুষ এখন সেবা পাচ্ছে, কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছে, মানুষ কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে। বাংলাদেশ এখন স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করতে যাচ্ছে। এই স্যাটেলাইটের পর পর্যায়ক্রমে আরও স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হবে। আমরা মেট্রোরেল নির্মাণ করছি। আমরা ফ্লাইওভার তৈরি করেছি, হাইওয়েগুলো চার লেন করে দিচ্ছি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ উন্নত জীবন পাক, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। স্বাধীনতার সুফল বাংলার ঘরে ঘরে পৌছে দিব। অর্থ সম্পদ চিরদিন থাকে না। কেউ কবরে নিয়েও যেতে পারে না। অর্থ সম্পদের জন্য মারামারি-কাটাাকাটি করে, কিন্তু মরে গেলে সবই পড়ে থাকে। মানুষের জন্য কাজ করে যাওয়া একজন রাজনীতিবিদের লক্ষ্য। জাতির পিতার সন্তান হিসেবে আমি সেটাই করতে চাই। নিজেদের সম্পদ করতে আসিনি। দেশের একটা মানুষও না খেয়ে থাকবে না, একটা মানুষও গৃহহীন থাকবে না। আমাদের উন্নয়ন হচ্ছে তৃণমূল পর্যায় থেকে উন্নয়ন করা।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সভায় শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক হারুন-উর রশিদ, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সামাজিক অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম, মুক্তিযুদ্ধ সম্পাদক এ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম, স্বাস্থ্য সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, কেন্দ্রীয় সদস্য এসএম কামাল হোসেন, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম রহমতউল্লাহ বক্তব্য দেন। দলের প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদের পরিচালনায় সুচনা বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।