Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০২৪, ০৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৪ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

শিশুরা যেন সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এবং মাদকে আসক্ত না হয়

জাতীয় দিবসে শিশু-কিশোর সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৭ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

শিশু-কিশোরদের দেশের প্রতি গভীর ভালোবাসা ও মমত্ববোধ নিয়ে বেড়ে উঠে বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্বে আত্মমর্যাদা নিয়ে চলার আহŸান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শিশু-কিশোরদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সব সময় নিজেদের বিজয়ী জাতি হিসেবে চিন্তা করে আত্মপ্রত্যয় নিয়ে চলবে, তোমরাই এ দেশকে গড়ে তুলবে, এগিয়ে নিয়ে যাবে। তিনি আরো বলেন, এই দেশকে গভীরভাবে ভালোবাসবে। আগামী দিনে এই দেশকে তোমরা গড়ে তুলবে। আমরা যেখানে রেখে যাব সেখান থেকে তোমরাই দেশকে আরো উন্নতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে। শিশু-কিশোরদের লেখাপড়া শিখে মানুষের মতো মানুষ হয়ে বাবা-মায়ের মুখ উজ্জ্বল করার এবং শিক্ষকদের কথা মেনে চলারও আহŸান জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অভিভাবক, শিক্ষক এবং মসজিদের ইমামরা সবসময় একটা বিষয় লক্ষ্য রাখবেনÑ আপনাদের সন্তানরা কোনোভাবেই যেন সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এবং মাদকে আসক্ত না হয়। তারা যেন মন দিয়ে লেখাপড়া শেখে। মানুষের মতো মানুষ হয়। এই প্রচেষ্টা প্রত্যেকটি অভিভাবক, পিতা-মাতাকেই করতে হবে।
গতকাল সোমবার সকালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস-২০১৮ উপলক্ষে ঢাকা জেলা প্রশাসন আয়োজিত শিশু-কিশোর সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
সরকার শিক্ষার্থীদের আধুনিক প্রযুক্তি শিক্ষায় দক্ষ করে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, আজকের শিশু তোমরা, যারা এখানে উপস্থিত এবং যারা সারাদেশে রয়েছে সবাইকে আমি এটাই বলব, আজকের শিশুই তো আগামীর দিনের ভবিষ্যৎ। তিনি বলেন, তার মতো প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে বড় বড় বিজ্ঞানী, খেলোয়াড়, সংস্কৃতি কর্মী-অনেক কিছুই এই শিশুরা হতে পারবে। আজকের শিশু-কিশোরদের ভবিষ্যৎ যাতে সুন্দর হয় ও উজ্জ্বল হয় সেই কামনা করে তিনি বলেন, এটা স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠারও অন্যতম লক্ষ্য ছিল।
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। এখন আমাদের লক্ষ্য এই বাংলাদেশকে বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে নিয়ে আসা। ইতোমধ্যে আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হতে পেরেছি। কারো কাছে হাত পেতে নয়, কারো কাছে মাথানত করে নয়, আমরা মর্যাদার সঙ্গে বিশ্বে চলব। কারণ, আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের স্বাধীনতার লক্ষ্য ছিল, যেটা জাতির পিতা চেয়েছিলেন- বাংলাদেশের সকল মানুষ উন্নত জীবন পাবে। সুন্দর জীবন পাবে এবং ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। জাতির পিতা মাত্র সাড়ে ৩ বছর সময় হাতে পেয়েছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই সময়ের মধ্যে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে দেশকে তিনি স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা দিয়ে যান।
’৭৫-এর বিয়োগান্তক অধ্যায় স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দুঃখের বিষয় ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তিনি এবং তার ছোট বোন শেখ রেহানা বিদেশে অবস্থান করায় সে সময় প্রাণে বেঁচে যান এবং ৬ বছর রিফিউজি হিসেবে বিদেশে কাটাতে হয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তাকে (শেখ হাসিনা) ১৯৮১ সালে দলের সভাপতি নির্বাচিত করায় তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে আসার পর বাংলাদেশের জনগণের দুঃখ-দুর্দশা ঘোচানো আর আমাদের ছোট্ট ছোট্ট শিশু-কিশোরদের জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তোলাই ছিল তার লক্ষ্য। যে লক্ষ্য বাস্তবায়নেই কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। তিনি বলেন, আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। আজকে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার কমেছে।
এ সময় শিশুদের বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, ২ কোটি ৩ লাখ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি-উপবৃত্তি প্রদান, প্রাইমারি পর্যায়ে ১ কোটি ৩০ লাখ শিক্ষার্থীর বৃত্তির টাকা মায়েদের মোবাইল ফোনে পাঠিয়ে দেয়া, সারাদেশে নতুন নতুন স্কুল-কলেজ স্থাপন এবং পুরনোগুলোর সংস্কার ও আধুনিকায়ন, কম্পিউটার ল্যাব ও মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুম স্থাপনসহ শিক্ষার স¤প্রসারণ ও মানোন্নয়নে সরকারের নানা উদ্যোগ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০২১ সালে যখন আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করব তখন বাংলাদেশ হবে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত দেশ। ২০২০ সালে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালন করব, আর ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ায় উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ। আর সেই দেশ আমরা ইনশাল্লাহ গড়ে তুলব।
শিশু-কিশোর সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের আদর, দোয়া এবং আশীর্বাদ জানিয়ে সকলের সুস্থ ও সুন্দর জীবন প্রত্যাশা করেন এবং দেশকে উন্নত সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলতে সকলের সহযোগিতাও কামনা করেন।
প্রধানমন্ত্রীকে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ থেকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানানো হয়। তিনি সালাম গ্রহণ করেন এবং কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন। এ সময় গ্যালারিতে মনোমুগ্ধকর ডিসপ্লে প্রদর্শিত হয়।
মঞ্চে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক উপস্থিত ছিলেন। ঢাকার জেলা প্রশাসক আবু সালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। অনুষ্ঠানে সারাদেশের স্কুল-কলেজ এবং মাদ্রাসা পর্যায়ে শুদ্ধ সুরে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যেও পুরস্কার বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে আন্তঃশ্রেণী প্রতিযোগিতা থেকে শুরু করে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, জেলা এবং জাতীয় পর্যায়ে অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতায় প্রতিযোগীর সংখ্যা ছিল প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ। ৩টি ক্যাটাগরিতে বিজয়ী ১১০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী দলগতভাবে স্বর্ণ, রোপ্য এবং ব্রোঞ্জপদক প্রদান করেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে শিশু-কিশোর সমাবেশের উদ্বোধন করেন। এরপরই সমবেত কন্ঠে শুদ্ধ সুরে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হয়।
বঙ্গবন্ধুর প্রতি প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা
দেশের ৪৮তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সোমবার সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ থেকে ফিরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান তিনি। পুষ্পার্ঘ্য প্রদানের পর প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির সামনে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা এরপর দলের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে আরেকবার পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান।
মুক্তিযোদ্ধাদের প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা উপহার
দেশের ৪৮তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে দেশের সকল মুক্তিযোদ্ধাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুভেচ্ছার নিদর্শন হিসেবে অন্যান্য বছরের মতো এবারও স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে মোহাম্মদপুরের গজনভী রোডে শহীদ পরিবার ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে (মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ার-১) যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য ফুল, ফল ও মিষ্টি পাঠিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর এপিএস সাইফুজ্জামান শিখর, ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আশরাফুল আলম খোকন, প্রটোকল অফিসার খুরশিদ-উল-আলম ও অ্যাসাইনমেন্ট অফিসার গাজী হাফিজুর রহমান গতকাল সোমবার সকালে উপহার সামগ্রী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে হস্তান্তর করেন। মুক্তিযোদ্ধারা স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, ঈদ ও পয়লা বৈশাখের মতো প্রত্যেক জাতীয় দিবস ও উৎসবে তাদের স্মরণ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যরা, মোহাম্মদপুরে ১৩ তলার আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ার-১সহ মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসনে নেয়া ব্যাপক পদক্ষেপের জন্যও প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যরা বলেন, আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকার কারণেই তারা এই সম্মান পাচ্ছেন।
তারা শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘ জীবন কামনা করেন।



 

Show all comments
  • babar ali ২৭ মার্চ, ২০১৮, ৭:৪৭ এএম says : 0
    Every parents should be very careful
    Total Reply(0) Reply
  • Nannu chowhan ২৭ মার্চ, ২০১৮, ১২:৩৬ পিএম says : 0
    If aslike mr.bodi is mp there will be so many drug Drug addicts in the country no doubt at all....
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ