Inqilab Logo

শুক্রবার ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ২৮ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্যাকেটজাত চাল আটা ময়দায় খাদ্যমান নিশ্চিতে দরকার নীতিমালা

অটোরাইস মিলের ‘রাইস ব্রান’ দেশে ব্যবহার হচ্ছে ২৫ ভাগ : বাকিটা যাচ্ছে ভারতে

| প্রকাশের সময় : ২৭ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

মহসিন রাজু, বগুড়া ব্যুরো : গত দশক জুড়ে দেশে অটোরাইস ও ফ্লাওয়ার মিলে ব্যাপক উৎপাদিত চাল ও আটার প্যাকেটজাতকরণ শিল্পের ব্যপক বিস্তারের পাশাপাশি ‘রাইস ব্রান ওয়েল’ শিল্পের সম্প্রসারণ ঘটে চলেছে। শিল্পমন্ত্রলায় ও ব্যাংক খাত থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, ইতোমধ্যে এই শিল্পে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হয়েছে। দেশে এখন প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫’শ মেট্রিক টন ‘রাইস ব্রান’ উৎপাদন হচ্ছে। আর বছরে অটো ও সেমিঅটো রাইস মিল থেকে প্রায় ৪০ লাখ মেট্রিক টন ‘রাইস ব্রান’ পাওয়া যাচ্ছে। তবে এর মধ্যে মাত্র ৬ লাখ মেট্রিকটন ‘রাইস ব্রান’ থেকে তেল উৎপাদন করা হলেও বাকি ২৫ শতাংশ মাছ ও পোল্ট্রি ফিডমিলের কাঁচামাল হিসেবে দেশীয় শিল্পে ব্যবহৃত হলেও রাইস ব্রানের বেশির ভাগই বৈধ অবৈধ দুই ভাবেই চলে যাচ্ছে ভারতে। ভারতের শিল্প কারখানায় বাংলাদেশী ‘রাইস ব্রান’ দিয়ে তৈরী ‘ব্রান ওয়েল’ সেদেশের স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রফতানী হচ্ছে বিদেশেও ! সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রাইস ব্রান হলো ধানের উপরের তুষ বা খোসা ছাড়ানোর পর চালের উপরিস্তরের লাল আবরন যাকে মেমব্রেন বলা হয়। চালের এই লাল আবরণেই থাকে মূল্যবান খাদ্য প্রাণ ওমেগা ৩ ও ৬। থাকে ‘অ্যান্টি অক্সিডেন্ট’ যা শরীরের ক্ষতিকর কোলেস্টেরলকে তাড়িয়ে উপকারি কোলেস্টরলের জন্য জায়গা করে দেয়ার পাশাপাশি হৃদপিÐকে সুস্থ রাখতে ভূমিকা রাখে। এটি শরীরের ওজন কমাতেও সাহায্য করে বলে জানিয়েছেন সাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। বিশেষজ্ঞরা বলেন, মেমব্রেনে আছে ভিটামিন-ই সমৃদ্ধ অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যা ক্যান্সার প্রতিরোধ ও প্রজনন ক্ষমতাবৃদ্ধি করে। সে কারণেই ঢেঁকিছাঁটা চাল খাওয়া আগের প্রজন্মেও মানুষের মধ্যে রোগ বালাইয়ের পরিমাণ কমছিল বলেও অভিমত বিশেষজ্ঞদের। এখন এই লাল উপাদান ছেঁটে ফেলায় ভাত দ্রæত হজম হয়ে যাচ্ছে। রক্তে দ্রæত মিশে যাচ্ছে শর্করা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই মুহুর্তে দেশের রাইস ব্রান ওয়েল মিলগুলোতে তেল উৎপাদনের জন্য রাইস ব্রানের চাহিদা বছরে ৬ লাখ মেট্রিক টন। অথচ ‘রাইস ব্রান’ উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ৪০ লাখ মেট্রিক টন। চালকে সুন্দর ও দৃষ্টি নন্দন করতে গিয়ে নিস্প্রাণ করে এই বাড়তি ‘রাইস ব্রান’ উৎপাদনের প্রয়োজন আছে কিনা সেটা ভেবে দেখা উচিৎ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। নাগরিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি মাথায় রেখে প্রধানতম এই খাদ্যের মেমব্রেন ন্যূনতম কী পরিমাণ রাখতে হবে তা গবেষণা করে দেখা উচিৎ বলেও মনে করেন তারা। এদিকে চালের পর দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদান হলো গম ও ভুট্টা। আগেকার দিনে গম ও ভুট্টা গ্রামের সাধারণ চাকী দিয়েই ভাঙানো হতো। এতে এসবের উপরিস্তরের মূল্যবান ফাইবার বা আঁশ অটুট থাকতো। এসব আটা-ময়দায় এখন খাদ্যপ্রাণ হিসাবে থাকা মূল্যবান ফাইবার ছেঁটে আগেই বের করে নেয়া হচ্ছে। ভূষি হিসেবে বস্তায় ভরে স্বাস্থ্যের জন্য মহামূল্যবান এই সম্পদ চলে যাচ্ছে বাজারে গো-খাদ্য হিসেবে। ভোক্তা হিসেবে মানুষ গম ও ভুট্টার ভেতরের শুধু শর্করাগুলো খাচ্ছে আর ফাইবারগুলো যাচ্ছে গবাদিপশুর পেটে। একটি বেসরকারি গবেষনায় গবেষণায় দেখা গেছে, গম থেকে আটা উৎপাদন ও পরিশোধনের ফলে প্রায় ১৪ রকমের ভিটামিন, ম্যাগনিসিয়ামসহ ১০ রকমের খনিজ উপাদান ও বিদ্যমান আমিষ নষ্ট হয়ে যায়। অথচ লাল ফাইবারযুক্ত আটা খাওয়ার পর তা ধীরে ধীরে হজম হয় বিধায় রক্তে গøুকোজ ধীরে ধীরে বাড়ে। যার ফলে শরীরের প্যানক্রিয়া গ্রন্থি স্বাভাবিকভাবে ইনসুলিন তৈরি করে রক্তের শর্করাকে যথাযথভাবে কোষে পৌঁছাতে পারে। এতে ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের মতো জটিল রোগ বালইয়ের ঝুঁকি থাকেনা।
সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, প্রযুক্তির অগ্রগতির কারণে সনাতনী ঢেঁকি ও চাকিতে চাল ছাঁটাই ও গম ভুট্টা ডাইল জাতীয় শস্য দানা ভাঙানোর বদলে এখন অটোমেটিক মেশিনারিজ ব্যবহ্যত হওয়াটাই স্বাভাবিক হলেও এ ব্যাপারে জন স¦াস্থ্য সুরক্ষার কার্যকরি নীতিমালা থাকাট জরুরী। পাশাপাশি বাংলাদেশে উৎপাদিত রাইস ব্রাণের শতভাগ যেন দেশেই ব্যবহার হতে পারে সেটাও নিশ্চিত করা জরুরী বলে মনে করেণ সংশ্লিষ্ট মহল।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ