পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী ও গণহত্যাকারীদের যারা মন্ত্রী-এমপি বানিয়ে মদদ দিয়েছেন, পুরস্কৃত করেছেন তাদেরও বিচার হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল রবিবার বিকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস’ উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, যারা যুদ্ধাপরাধী ও গণহত্যাকারীদের মদদ দিয়েছে, মন্ত্রী-এমপি বানিয়েছে তারাও তো সমান অপরাধী। অপরাধীদের যারা পুরস্কৃত করেছে, তাদেরও সমানভাবে বিচার হওয়া দরকার বলে আমি মনে করি। এরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা চায়নি, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন চায়নি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের কোনো নেতা-নেত্রী, খালেদা জিয়া নিজেই সন্দিহান ৩০ লাখ লোক নাকি মরে নাই। তারা তো নিজেরাই মানুষ খুন করে অভ্যস্ত, তারা তো নিজেরাই মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে। তার কাছে মানুষের কোন দাম নেই। তাদের পক্ষে এটা বলাটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশের স্বাধীনতায় আদৌ তারা বিশ্বাস করে কি-না? আমার সন্দেহ। তিনি বলেন, প্রত্যেক জায়গায় যারা গণহত্যায় শামিল ছিল তাদের মন্ত্রী, এমপি, উপদেষ্টা বড়বড় পদ দিয়ে পুরস্কৃত করেছিল জিয়াউর রহমান। এই হত্যার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের মন্ত্রী বানানো, জিয়াউর রহমানও বানিয়েছিল, আবার খালেদা জিয়াও বানিয়েছিল। তারা আর লোক খুঁজে পায় না। ওই গণহত্যাকারীরাই ছিল তাদের পেয়ারের লোক। কারণ তাদের পেয়ারে পাকিস্তান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, গণহত্যাকারী ও সহায়তাকারী উভয়ই সমান অপরাধী। এটা যেন আমাদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম ভুলে না যায়। গণহত্যাকারীদের বিচার চলছে। পাকি প্রেমীদের উপযুক্ত জবাব দিতে হবে, তাদের পাকি প্রেম ভুলিয়ে দিতে হবে। তা না করতে পারলে বাঙালি জাতির অস্তিত্ব থাকবে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবনা’। আমরা তা প্রমাণ করেছি। স্বল্পন্নোয়ন দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় আসিন হয়েছি। আগামী ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশত বার্ষিকী ও ২০২১ সালে বাংলাদেশের সুর্বণ জয়ন্তী পালন করবো। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। কি পেলাম কি পেলাম না, তার জন্য রাজনীতি করি না। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্যই আমরা রাজনীতি। দেশবাসীকে বলবো- যারা পাকি প্রেম এখনো ভুলতে পারেনি, যাদের অন্তরে এখনো পাকিস্তান তাদের পাকি প্রেম ভুলিয়ে দিতে হবে। তারা পাকি প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে খাক-ডুবে যাচ্ছে যাক। তিনি বলেন, ৭৫’র পর যারাই ক্ষমতায় এসেছিলো, তারা দেশের উন্নয়ন করেনি। কারণ দেশের উন্নয়ন করলে পাকিস্তান অখুশি হবে। তাদের অন্তরে পাকিস্তান। সে কারণে জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়া দেশের উন্নয়ন করেনি। কারণ তাদের একই এজেন্ডা ছিল পাকিস্তানকে খুশি করা। দীর্ঘ ২১ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে বুঝতে পারে দেশের সরকার মানুষের উন্নয়ন করে। প্রচেষ্টা থাকলে, লক্ষ্য স্থির করে কাজ করলে যে দেশের উন্নয়ন করা যায় আমরা তা প্রমাণ করেছি।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা স্বাধীনতার পর আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছিলেন। পাকিস্তানের পাসপোর্টসহ বাংলাদেশ থেকে চলে গিয়েছিল গোলাম আযম, জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে সেই গোলাম আযমকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনে। পাকিস্তানি পাসপোর্ট হাতেই কিন্তু গোলাম আযম বাংলাদেশে ফিরে আসে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান সংশোধন করে ওই যুদ্ধাপরাধী, গণহত্যাকারীদের রাজনীতি করার সুযোগ তৈরি করে দেয় জিয়াউর রহমান।
শেখ হাসিনা বলেন, ইয়াহিয়া খান গণহত্যার হুকুম দেন, মেজর জেনারেল টিক্কা খানকে পূর্ববাংলার গণহত্যার দায়িত্ব দেন। আলবদর, আলশামস, রাজাকার এই বিভিন্ন বাহিনী গড়ে তুলে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পথ দেখিয়ে দেয়া হয় আর গণহত্যা চালানো হয়।
পিলখানার ওয়ার্লেসের মাধ্যমে জাতির পিতার স্বাধীনতার ঘোষণা সারা বাংলাদেশের মানুষের কাছে পৌঁছে যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ দেশের মানুষ কিন্তু প্রতিরোধ শুরু করে। ২৫ মার্চের গণহত্যার আগে থেকেই কিন্তু তারা গণহত্যা করেছে। আন্দোলনের সময়ও তারা হত্যা করেছে।
২৫ মার্চের নির্মম চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের বাড়ির আশপাশে সব বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়। জাতির পিতা স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ৩২ নম্বরের বাড়িতে আক্রমণ করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। জাকির খান সাহেব এসে আমাকে, রেহানাকে নিয়ে যান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যখন বের হই তখন রাস্তায় রাস্তায় লাশ পড়ে থাকতে আমি নিজে দেখেছি। ধানমন্ডি, মিরপুর রোড থেকে শুরু করে ঢাকা শহরে শুধু লাশ আর লাশ। বস্তিতে আগুন দিয়েছিল, মানুষের চিৎকার আর দাউ দাউ করা আগুন। সমস্ত জায়গায় বাড়িতে বাড়িতে ছিল বাংলাদেশের পতাকা, যে বাড়িতে পতাকা দেখেছে সে বাড়িতেই হামলা করেছে। ২৬ মার্চ আমাদের একটি বাড়ীতে আটক রাখা হয়। বাড়ীর উপরে কামান ফিট করে রাখা হয়। বাড়ীর পাশ দিয়ে যারাই যান তাদের উপর চালানো হয় গুলি। ওইদিন হায়দার আকবর খান রনোর মা, বোনকে গুলি করা হয়। গাড়ীর ডাইভার ঘটনাস্থলে নিহত হন। মা বোনের হাতে গুলি লেগে আহত হন। নারায়নগঞ্জের শামসুজ্জামান এবং কাদের সিদ্দিকীর ওই বাসার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় গুলি করা হয়। কিন্তু তারা দ্রæত গাড়ী চালিয়ে যাওয়ার কারণে প্রাণে বেচে যান। তিনি বলেন, ২৫ মার্চ থেকে শুরু করে পুরো ৯টা মাস গণহত্যা চালিয়েছে। আত্মসমর্পণ করার আগে আমাদের আটক করা হয়। মিত্র বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করার পর অনেকেই ভেবেছিল আমরা বুঝি মুক্ত হয়ে গেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যা তৎকালীন বিশ্বের সমস্ত মিডিয়াতে এসেছে। অল্প সময়ে এত মানুষ হত্যা এ রকম গণহত্যা কিন্তু আর কোনো দেশে ঘটে নাই। সেই গণহত্যা গ্রিনিজ বুক অব রেকর্ডেও উঠে এসেছে। এটা ছিল সব থেকে ভয়াবহ, মারাত্মক এবং অধিক সংখ্যার গণহত্যা। ইউটিউবে গিয়ে যদি সার্চ করা যায় অনেক তথ্য এখন পাওয়া যায়। পৃথিবীর এমন কোনো পত্রিকা নাই যেখানে এই গণহত্যার কথা ওঠে নাই।
২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস পালনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, ২৫ মার্চ রাতে আমাদের দেশে গণহত্যা শুরু হয়। গত বছর জাতীয় সংসদে একটি প্রস্তাব এসেছিল আমরা ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ২৫ মার্চকেই আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ে ৭৫’র পর যারাই ক্ষমতায় এসেছে, তারা কোন কাজ করেনি। সে কারণেই আমরা এই দিনকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করছি।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনা সভার সূচনা বক্তব্য দেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। দলের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ও উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিনের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন, দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক কর্নেল (অব.) সাজ্জাদ জহির বীর প্রতীক, দলের কেন্দ্রীয় সদস্য নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ ও উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।