Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রূপগঞ্জে বালুবাহী বাল্কহেডের ধাক্কায় নৌকা ডুবি শীতলক্ষ্যায় নিখোঁজ ৫ এখনও উদ্ধার হয়নি

| প্রকাশের সময় : ২৫ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

মোঃ খলিল সিকদার, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে : নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে বালুবাহী বাল্কহেডের ধাক্কায় একটি যাত্রীবাহী ইঞ্জিনবিহীন নৌকা মাঝিসহ ১৪ জন যাত্রী ডুবে গেছে। এতে ১০ জন সাঁতরিয়ে প্রাণে বাঁচলেও অপর পাঁচ জন নিখোঁজ রয়েছেন। গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার রুপসী কাজীপাড়া এলাকার শীতলক্ষ্যা নদীতে ঘটে এ দুর্ঘটনা। পরবর্তীতে রাত ৩টা পর্যন্ত ডেমরা ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল নিখোঁজদের সন্ধানে নদীর তলদেশে উদ্ধার তৎপরতা চালালেও রাতের গভীরতা ও গ্যাস সংকট দেখিয়ে বন্ধ রাখা হয় উদ্ধার কাজ। পরের দিন শনিবার সকাল ৯টায় উদ্ধার কাজ শুরু হলেও সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নিখোঁজদের সন্ধান মেলেনি।
নিখোঁজরা হলেন, রাজধানীর কদমতলী থানার দক্ষিণ দনিয়ার আজিজুল মিয়ার ছেলে কারখানা শ্রমিক লতিফ (১৮), পূর্ব ধোলাইরপার এলাকার রবিউল মিয়ার ছেলে টেইলার্স শ্রমিক শরীফ (২৮), একই এলাকার নাসির উদ্দিনের ছেলে জুতা ব্যবসায়ী তুষার (২৬), জয়নাল মিয়ার ছেলে নাট বল্টু ব্যবসায়ী বাবু (২০) ও রূপগঞ্জের তারাব পৌরসভার দক্ষিন মাসাবো এলাকার সিরাজুল ইসলামের ছেলে জাসিম(২৮)।
এছাড়া প্রাণে বেঁচে যাওয়ারা হলেন, যাত্রাবাড়ি এলাকার শেখ মিরাজ রহমান, গোলাম মোক্তাদীর, জাহিদুল আলম , সিদ্দিরগঞ্জ থানার চিটাগাং রোড এলাকার কনক মজুমদার, মুন্সিগঞ্জের লৌহজং থানার বাবু, দনিয়ার ইব্রাহিম , বিল্লাল হোসেন, মোহাম্মদ আলী, জসিম মিয়া, নৌকা মাঝি কালিমুল্লা(৫৫)।
ডেমরা ফায়ার সার্ভিসের ষ্টেশন কর্মকর্তা শাহরিয়ার রহমান জানান, দুর্ঘটনাস্থল সঠিক ভাবে দেখাতে পারছেননা কেউ। এতে উদ্ধার কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। ডুবুরিদল কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
দুর্ঘটনাকবলিত নৌকার মাঝি কালিমুল্লাহ জানান, বাল্কহেডের কোন বাতি ছিলোনা। হঠাৎ করে অন্ধকারের মধ্যে তাদের যাত্রীবাহী নৌকায় ধাক্কা মারলে নৌকাটি ডুবে যায়। পরে দ্রæত বেগে বাল্কহেডসহ চালক পালিয়ে যায়।
এদিকে, শীতলক্ষ্যা তীরে নিখোঁজদের স্বজনরাসহ শত শত নারী-পুরুষ ভীর জমাচ্ছেন নিখোঁজদের সন্ধানে। নদীর তীর স্বজনদের কান্নায় ভারি হয়ে উঠে। নিখোঁজদের স্বজন নয়ন, আদর, তুষারসহ অনেকেই জানান, নিখোঁজের পর থেকেই শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে নিখোঁজদের সন্ধানে অপেক্ষায় রয়েছেন তারা। প্রশাসন আরো তৎপর হলে দ্রæত নিখোঁজদের সন্ধান পাবে বলে দাবি করেন তারা।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে তারাব পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হামিদুল্লাহ জানান, রাজধানীর ডেমরা থেকে ১৪ জনের একদল যুবক একটি নৌকা ভাড়া নিয়ে শীতলক্ষ্যা নদীতে ঘুরতে আসেন। রাত সাড়ে ৯টার দিকে রূপসী কাজীপাড়া এলাকার শীতলক্ষ্যা নদীর মাঝপথের দিকে গেলে একটি বালুবাহী বাল্কহেড পেছন থেকে এসে ওই নৌকাটিকে ধাক্কা মারে। এতে সঙ্গে সঙ্গে নৌকাটি ডুবে যায়। এসময় নৌকাতে থাকা মাঝিসহ ১৫ জনের মধ্যে ১০ জন সাঁতার কেটে তীরে আসতে পারলেও অপর পাঁচ জন নিখোঁজ রয়েছেন। তবে মাঝিসহ ১০ জনই শীতলক্ষ্যার পচাঁ ও দূর্গন্ধযুক্ত পানিতে সাঁতার কাটতে যেয়ে অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। এদের মধ্যে আলী হোসেন ও আরিফ হাসান গুরুতর অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। স্থানীয়দের সহযোগীতায় তারা রূপসীর একটি বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
এলাকাবাসী অভিযোগ করে জানিয়েছেন, শীতলক্ষ্যা নদীর রূপসী, তারাব, মুড়াপাড়া, দড়িকান্দি, ডেমরা, চনপাড়া, পুর্বগ্রামসহ আশ-পাশের এলাকা গুলো একটি শিল্প এলাকা। এসব শিল্প প্রতিষ্ঠাতা হাজার হাজার শ্রমিক কাজ করেন। এছাড়া কয়েক লাখ লোকের বসবাস। এসব মানুষ শীতলক্ষ্যা নদী পথে ইঞ্জিনবিহীন নৌকা যোগে চলাচল করতে হয়। প্রায় সময় অনুমতিবিহীন বাল্কহেড শীতলক্ষ্যায় দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে। এসব বাল্কহেডে নেই বাতি, নেই চালকদের লাইসেন্স। প্রভাবশালীরা প্রভাব খাটিয়ে এসব অনুমতিবিহীন নৌযান চালাচ্ছেন। অনুমতিবিহীন নৌযানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে দুর্ঘটনা কমবে।
রূপগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আমিনুল হক বলেন, এ ঘটনায় ঘাতক বালুবাহী বাল্কহেডটি ঘটনা ঘটিয়ে চালকসহ পালিয়ে যাওয়ায় এখনো তা শনাক্ত করা যায়নি। তবে ডুবে যাওয়া নৌকাটি উদ্ধার করা হয়েছে।
বাংলাদেশ নৌ পুলিশ সুপার ঢাকা অঞ্চল কেএম এহসানুল্লাহ বলেন, ডুবুরি দিয়ে নিখোঁজদের খোঁজা হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি, নিখোঁজদের উদ্ধার করে স্বজনদের হাতে তুলে দেয়ার জন্য।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ