পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্বাধীনতার আগে সত্তর সালের নির্বাচন আন্দোলনের অংশ ছিল মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আব্বার (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) মাঝে দূরদৃষ্টি ছিল। কী হবে, তা জানতেন। তিনি জানতে পেরেছিলেন, ’৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করবে। কিন্তু পাকিস্তান আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যেতে দেবে না। আল্টিমেটলি যুদ্ধ করে আমাদের দেশ স্বাধীন করতে হবে।
এ জন্য তিনি জাতীয় পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত ও বাংলাদেশের নামও ঠিক করে রেখেছিলেন। সব কিছু তিনি পরিকল্পিতভাবেই করেছিলেন। এ জন্যই আমাদের সফলতা এসেছিল’। সত্তরের নির্বাচন বানচাল ও ছয় দফা নিয়ে ষড়যন্ত্রের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ওই সময় অনেকে অনেক নাটক করেছেন। অনেক খেলাও খেলেছেন। আওয়ামী লীগের বোধহয় একটা দুর্ভাগ্য আছে যে, দল যখন খুব ক্রাইসিসে (সঙ্কটে) পড়ে, তখন বড় নেতারা মাথা ঠিক রাখতে পারেন না। কোনো মতে ওখান থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করেন। আমাদের অনেক নামী-দামী নেতা নেমে পড়লেন। ছয় দফা না আট দফা, তা নিয়ে বিরাট বিতর্ক। পাকিস্তান থেকে আসা আওয়ামী লীগের অনেক নেতা আট দফা হলে কী কী হবে, তার পক্ষে যুক্তি দিতে থাকলেন।
আট দফার লাভ-লোকসান নিক্তির ওজনে মাপা হলো। ওই সময় আমাকেও তর্ক করতে হয়েছে। আমি নিজেও প্রতিবাদ করেছিলাম ছয় দফা ছাড়া কিছু চলবে না। আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে এটা নিয়ে তুমুল বিতর্ক হলো। সেখানে মুষ্টিমেয় কয়েকজন ছাড়া অধিকাংশই ছয় দফার পক্ষে ছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধীদের ষড়যন্ত্রের ফলেই ’৭৫-এ জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, আর এ হত্যাকাÐের পর থেকে বাংলাদেশ আর এগোতে পারেনি। গতকাল রোববার বিকেলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৮তম জন্মবাষির্কী ও জাতীয় শিশু-কিশোর দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর শেরেবাংলানগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সত্তর সালের নির্বাচনেও তৎকালীন ২০-দলীয় জোট জয়ী হবে বলে মনে করত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সত্তরের নির্বাচনে ২০-দলীয় জোট ছিল, ইয়াহিয়া খানরা করেছিল। তারা ভাবত, ২০-দলীয় জোট যেহেতু আছে, নিদেন পক্ষে ৪০-৫০টি সিট তো তারা পাবেই। কাজেই আওয়ামী লীগ কিছুতেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না। আব্বা কিন্তু জানতেন, তিনি বলতেনÑ আমি দুইটা সিট হারাতে পারি।
বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর সময়েই (১৯৭৫) বাংলাদেশ স্বল্পন্নোত দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পায়। তার ৩৭ বছর পর আমরা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছি। এ অর্জন বাংলাদেশ করতে পারত অনেক আগে, যদি বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৫ আগস্টের মতো কাল রাত বাঙালির জীবনে না আসত। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের দেখলে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের চিত্র চোখে ভেসে ওঠে। কিভাবে শিশু ও অন্তঃসত্ত¡া নারীদের হত্যা করা হয়েছিল। সেদিন বাঙালিকে দমাতে পারেনি। বাঙালি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে মেনে যুদ্ধ করে জয়ের মধ্য দিয়ে একটি স্বাধীন দেশ এনেছিল।
স্বাধীনতার প্রস্তুতির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বিদেশে যেতে হলে করাচি গিয়ে ভিসা, পাসপোর্ট ও ফ্লাইট ধরতে হতো। অথচ সবই আমাদের ছিল। কিন্তু সব কাজেই তাদের কাছে ধর্না দিতে হতো। এই যন্ত্রণাটা তিনি (বঙ্গবন্ধু) সহ্য করতে পারেননি। এ জন্য মানুষকে মুক্তির দিকে ধাবিত করেন। বঙ্গবন্ধুর দেয়া ছয় দফার মধ্যেই ছিল জাতির মুক্তির সনদ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭০ সালের ৫ ডিসেম্বর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকীর আলোচনা সভায় বঙ্গবন্ধু ঘোষণা দিয়েছিলেনÑ এই ভ‚খÐের নাম হবে বাংলাদেশ। সব কিছু পরিকল্পিতভাবেই তিনি করেছেন। জাতির পিতা ৭ মার্চের ভাষণে স্বাধীনতার যুদ্ধের সকল দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। সেভাবে এই ভ‚খÐের স্বাধীনতা আনতে তার অনুসারীরা কাজ করেছে। তারা তার নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, দাদির কাছে শুনেছিÑ বঙ্গবন্ধুর নানা উনাকে কোলে নিয়ে বলেছেনÑ তোর ছেলের নাম শেখ মুজিবুর রহমান। দেখবি, একদিন জগতজোড়া নাম হবে তার। সে কথাই সত্যি হয়েছে। শুধু নিজের নাম নয়, বাঙালিকে বিশ্বসভায় পরিচিত তিনিই করে দিয়েছেন। বাংলার মানুষকে স্বাধীন করার জন্য বঙ্গবন্ধু জন্মগ্রহণ করেছিলেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, সেই পাকিস্তান আমল থেকে দেখে আসছি, এক শ্রেণির মানুষকে ‘আ..তু’ করে ডাক দিলেই ছুটে যেতেন একটু মন্ত্রী হওয়ার লোভে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে কখনো লোভ দেখিয়েও নিতে পারেনি, শত প্রলোভন দিয়েও তাকে কিনতে পারেনি। তিনি মানুষের অধিকারের কথা বলে গেছেন। অধিকারের জন্য সংগ্রাম করে গেছেন।
সাত মার্চের ভাষণেই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা যুদ্ধের ডাক দেন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু যে স্বাধীনতার কথা বলে গেছেন, তা পাকিস্তানিরা ধরতে না পারলেও বঙ্গবন্ধু যাদের নির্দেশনা দিয়ে যান, তারা ঠিকই বুঝতে পারেন। তিনি এত কায়দা করে স্বাধীনতার কথা বলতেন, যেন তিনি দেশদ্রোহী না হন। কারণ তিনি জানতেন, দেশদ্রোহীর অভিযোগ উঠলে আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থন পাবেন না।
স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর কর্মকাÐের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিধ্বস্ত অর্থনীতি নিয়ে, একটি প্রদেশকে রাষ্ট্রে পরিণত করা, মাত্র ৯ মাসের মাথায় সংবিধান দেয়া আর এক বছরের মধ্যে নির্বাচন দেয়া সহজ কাজ ছিল না। আজ যখন যে কাজে হাত দিতে যাই, দেখি তিনি (বঙ্গবন্ধু) তা করে দিয়ে গেছেন। মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে দেশ স্বল্পোন্নত দেশে পরিচিত পায়। আজ সেখান থেকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেলাম।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতির সুখবর পেয়েছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশে। স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে যারা করুণার চোখে আমাদের দিকে তাকাত, ঋণ নিতে গেলে হাজার রকম শর্ত জুড়ে দিত, দুর্নীতি না করলেও অপবাদ দিয়ে প্রজেক্টের টাকা বন্ধ করত, এখন আর এটা করতে পারবে না। সেই সাহস আর পাবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন আমাদের ঋণ পেতে অসুবিধা হবে না। হয়তো একটু সুদ বেশি দিতে হবে। তাতে কিছু আসে-যায় না। ওইটুকু আমরা দিতে পারি। উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জাতির পিতার জন্ম হয়েছিল বলেই আমরা দেশ পেয়েছি, স্বাধীনতা পেয়েছি। মর্যাদা পেয়েছি। আজকে তার জন্মদিনে আমাদের জন্য সুখবর এসেছে আমরা উন্নয়নশীল দেশ। এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আমাদের জন্য আর কিছু হতে পারে না। এবারের স্বাধীনতা দিবসও আমরা ভিন্ন আকারে করব। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে মর্যাদার সঙ্গে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করব। যারা একসময় বলত বাংলাদেশ বটমলেস বাক্সেট হবে, আজ উন্নয়নশীল দেশে উন্নত হয়ে তাদের জবাব দিয়ে দিয়েছি। জাতির পিতার জন্মদিনের প্রতিজ্ঞা হবে, এই দেশকে নিজেদের জীবনের সব কিছু ত্যাগের বিনিময়ও আমরা উন্নত সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলব।
দেশে ফিরে রাজনীতি করতে গিয়ে নানা বাধার প্রসঙ্গ টেনে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৮১ সালে বাংলাদেশে এসে যখন রাজনীতি শুরু করি, তখন পদে পদে বাধার সম্মুখীন হই। তবে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সমর্থন পেয়েছি সবসময়। হয়তো ওপরে কিছু কিছু মাঝে মধ্যে একটু টালমাটাল হয়েছে, কিন্তু আমার তৃণমূলের নেতাকর্মীরা কখনো আমার থেকে দূরে যায়নি।
শেখ হাসিনা বলেন, আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করলে মানুষের জন্য কিছু করা যায়, আমরা তা প্রমাণ করেছি। আমরা ২০১৪ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়েছি বলেই আজকে উন্নয়ন মানুষ পাচ্ছে। আমরা আসতে না পারলে তারা এই কাজগুলো আবার নষ্ট করে দিত, যেটা ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট করেছিল।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন দলের সিনিয়র নেতা আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, ওবায়দুল কাদের, মতিয়া চৌধুরী, আব্দুল মান্নান খান, আবদুল মতিন খসরু, মাহবুব-উল আলম হানিফ, আব্দুস সোবহান গোলাপ, শিল্পী হাশেম খান, সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন প্রমুখ। যৌথভাবে সভা পরিচালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ এবং উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।