Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খুনি স্বদেশী উইনসন শিং ইউএসটিসির ভারতীয় শিক্ষার্থী খুন

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৩ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

অবশেষে ডিএনএ পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়া গেছে চট্টগ্রামের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউএসটিসির ভারতীয় শিক্ষার্থী মোঃ আতেফ শেখের (২৪) খুনি অন্য কেউ নয়, স্বদেশী মাইসনাম উইনসন শিং (২৪)। সহপাঠী এমবিবিএসের শিক্ষার্থী আতেফ শেখকে উপর্যপুরি ছুরিকাঘাতে গলা কেটে হত্যা করে সে। এরপর সিলিং ফ্যানের সাথে প্যান্টের বেল্ট গলায় বেঁধে আত্মহত্যার চেষ্টা করে একই বিভাগের ওই শিক্ষার্থী। দুই দফায় ডিএনএ পরীক্ষার পর মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই নিশ্চিত হয় আলোচিত এ খুনের একমাত্র খুনি উইনসন শিং।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) পিবিআই পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা গতকাল (সোমবার) ইনকিলাবকে বলেন, সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত রিপোর্ট, পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য-প্রমাণে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে এ খুনের মূলহোতা প্রধান সন্দেহভাজন আসামি মাইসনাম উইনসন শিং। কিন্তু এর দায় স্বীকার করছিল না উইসন শিং। অবশেষে ডিএনএ পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়া যায় সেই খুনি। ঘটনাস্থল থেকে জব্দকৃত ছোরা ব্যবহার করে সহপাঠী আতিফ শেখকে উপর্যপুরি আঘাত করে গলা কেটে হত্যা করার পর আবেগতাড়িত হয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে সে। তিনি বলেন, নানা টালবাহানায় উইনসন খুনের দায় এড়িয়ে গেলেও সর্বশেষ ডিএনএ পরীক্ষায় সে যে খুনি তা নিশ্চিত হওয়া গেছে। আর এরমধ্য দিয়ে হত্যাকাÐের ৯ মাস পর খুনি চিহ্নিত করা গেছে। এখন তাকে রিমান্ডে এনে খুনের মোটিভ বা কি উদ্দেশে এ হত্যাকাÐ তা বের করা হবে। তথ্য পাওয়া গেলে স্বল্প সময়ে আদালতে চার্জশিট দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
ইউএসটিসির এমবিবিএসের শিক্ষার্থী মোঃ আতেফ শেখ নগরীর খুলশী থানার লেকভিউ সোসাইটির হাজী ইউসুফ ম্যানশনের বাসায় থাকতেন। গত বছরের ১৪ জুলাই রাতে তার বাসায় স্বদেশী সহপাঠীদের নিয়ে একটি পার্টির আয়োজন করেন আতেফ শেখ। ওই রাত সাড়ে ১০টায় পাশের ফ্ল্যাটে আসামি উইনসন শিংয়ের বাসা থেকে আতেফ শেখকে গলা কাটা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। উইনসন শিংকে উদ্ধার করা হয় ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায়। হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসকেরা আতেফকে মৃত ঘোষণা করেন। উইনসন শিংকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনার খবর পেয়ে ভারত থেকে ছুটে আসেন আতেফ শেখের বাবা আব্দুল খালেক। তিনি আকবর শাহ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। প্রথমে মামলাটি থানা পুলিশ তদন্ত করে। এসময় ওইদিন পার্টিতে থাকা কয়েকজন সহপাঠীকে আটক করে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তবে শুরু থেকেই পুলিশের সন্দেহ হয় উইনসন শিংকে।
গত বছরের ২০ জুলাই মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পান পিবিআই পরিদর্শক সন্তোষ চাকমা। এরমধ্যে হাসপাতালে সুস্থ হয়ে উঠে উইনসন শিং। তাকে গ্রেফতার করে পিবিআই। গ্রেফতারের পর তাকে রিমান্ডে এনে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু সে নানা কৌশলে ঘটনা এড়িয়ে যায়। একপর্যায়ে সে দাবি করে তার স্মৃতিভ্রম রোগ হয়েছে। পিবিআই বিষয়টি তদন্ত করতে আদালতের দ্বারস্ত হন। তার মানসিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে আদালতের নির্দেশে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ৬ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করে। নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে মেডিকেল বোর্ড নিশ্চিত হয় তার কোন মানসিক সমস্যা নেই। বরং দায় এড়াতে উইনসন শিং স্মৃতিভ্রমের অভিনয় করছে।
এরপর তাকে ফের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু স্মৃতিভ্রম বলে আগের অবস্থানে অটল থাকে সে। এপর্যায়ে আদালতের অনুমতি নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধারকৃত আলামত রক্ত, ছুরি, ছুরির বাট, চাদর ডিএনএ প্রোফাইলিংয়ের জন্য ঢাকাস্থ ডিএনএ ফরেনসিক ল্যাবে প্রেরণ করা হয়। ফরেনসিক ল্যাব থেকে দেয়া প্রতিবেদনে বলা হয়, ছুরির বাট থেকে ভিন্ন একজন পুরুষের ডিএনএর সাথে মাইসনাম উইনসন শিংয়ের ডিএনএর মিল পাওয়া গেছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ