Inqilab Logo

সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সিলেট শহরে এবারও পানিবদ্ধতার শঙ্কা

| প্রকাশের সময় : ১১ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

দুই দফা মেয়াদ বাড়লেও অনিশ্চয়তায় সুরমা নদীর চর খনন প্রকল্প
হাসান সোহেল, সিলেট থেকে ফিরে : জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবেলায় সিলেট শহরের কানিশাইল ছড়ার মুখে সুরমা নদীর চর খনন প্রকল্পের কাজ শেষ করা নিয়ে নিয়ে আবারো অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। সঠিক সময়ে কাজ শেষ না হলে এবারও চরের কারণে সিলেটে পানিবদ্ধতার শঙ্কা রয়েছে।
কারণ বৃষ্টি শুরু হলে অথবা ভারত থেকে পাহাড়ের ঢল থেকে নদীতে পানি চলে আসলে চর খনন কাজ যে কোন সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে। তাতে আগামি ৬ মাসেও কাজ শুরু করা যাবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রাথমিক মেয়াদ ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত থাকলেও তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু ডিসেম্বরের মধ্যেও কাজ শেষ করা নিয়েও কিছুটা সংশয় রয়েছে। তাই প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর জন্য নতুন করে আবেদন করা হয়েছে।
যদিও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিলেট বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ও চর খনন কাজের প্রকল্প পরিচালক মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেছেন, বৃষ্টি না হলে মার্চ মাসের মধ্যেই কাজ শেষ হয়ে যাবে। তবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, চর খনন প্রকল্পের কাজ ৬০ শতাংশ শেষ হয়েছে। আবহাওয়া স্বাভাবিক থাকলে এপ্রিল মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে বাকি কাজ শেষ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সূত্র মতে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে ৬০০মিটার চর খনন প্রকল্প। প্রকল্প প্রস্তাবটি ট্রাস্ট ফান্ডের ৩৫তম সভায় ৩ কোটি প্রাক্কলিত ব্যয়ে অনুমোদিত হয়। পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ২৮ অক্টোবর পূর্বের টাকার সাথে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সুপারিশে আরও ৬ কোটি ৬৭ লাখ ২৭ হাজার টাকা যোগ করে ৯ কোটি ৬৭ লাখ ২৭ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় অনুমোদন করা হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রকল্পটি বাপাউবো বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পের মেয়াদ রাখা হয় ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত।
পরবর্তীতে প্রকল্পের কাজকে দুটি প্যাকেজে ভাগ করা হয়। একটি ৬০০মিটার চর খনন প্রকল্প। যার কার্যাদেশ প্রদান করা হয় ২০১৭ সালের ২০ মার্চ। এক্ষেত্রে ব্যয় ধরা হয় ৮৬০ কোটি ২৫ লাখ। প্রকল্পটির কার্যাদেশ পায় মেসার্স মহিউদ্দিন আহমেদ। অপরদিকে ২০০ মিটার ছড়ার তীর সংরক্ষণের কার্যাদেশ প্রদান করা হয় ২০১৭ সালের ১০ জানুয়ারি। সিলেট সিটি কর্পোরেশন এই কাজটি বাস্তবায়ন করে।
চর খনন কাজের প্রকল্প পরিচালক স্বাক্ষরিত প্রকল্প বাস্তবায়নের সমস্যার এক চিঠিতে জানা যায়, ২০১৭ সালের মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে আগাম বন্যার ভয়াবহতায় নদী খনন কাজ শুরু করা যায়নি। তিনি ২০১৮ সালের শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই খনন কাজ আরম্ভ করার প্রস্তুতির কথা জানান। তিনি আরো জানান, ২০১৭ সালের জুলাই থেকে একই বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ১৫ শতাংশ।
সূত্র মতে, এই চরের কারণে সিলেটে পানিবদ্ধতা ও নদীর সাথে শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। মালনিছড়া, ওসমানি মেডিকেল ছড়া ও হাউজিং এস্টেট এই তিনটি ছড়ার মাধ্যমে ময়লা এসে এখানে জড়ো হচ্ছে। দীর্ঘদিনে ময়লা জমতে জমতে চর সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ ১০ বছর থেকে সিলেটের সাথে নদী পথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন সুরমা নদী। আগে নদী থেকে বড় বড় জাহাজ এবং নৌ-যানের মাধ্যমে মালামাল আনা-নেওয়া হতো। সিলেটের সাথে সড়ক পথের চেয়ে নৌ-পথে বেশি ব্যবসা-বাণিজ্য চলতো। সঠিকভাবে চর খনন করা গেলে নৌ-যান স্বাভাবিকভাবে চলতে পারবে বলে এবং আবারো জাহাজ চলবে ও নদী পার্শ্ববর্তী এলাকার ভাঙন রোধ হবে। পানিও নেমে যাবে।
সামান্য বৃষ্টিতেই সিলেটে পানি দেখা দেয়। এই পানিবদ্ধতার কারণ নদীতে আসা সিলেট শহর ও এর আশপাশে প্রায় ১৮ থেকে ২০টি ছড়া। অনেক ছড়া দখল হওয়ায় আবারো চর পড়ার শঙ্কা রয়েছে। তবে ছড়া উদ্ধারে কাজ করছে সিটি কর্পোরেশন। এদিকে সিলেট শহরে পানি যাতে না জমে সে জন্য ইতোমধ্যে গবেষণা করা হয়েছে। গবেষণার সুপারিশ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ঠিক করা গেলে এবং চর পুরোপুরি কাটা গেলে নদী থেকে স্বাভাবিকভাবে পানি প্রবাহিত হবে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কানিশাইল ছড়ার মুখে সুরমা নদীর ৬০০ মিটার চর খনন কাজ শুরু হয়েছে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে। আগামী এপ্রিলের মধ্যে কাজ শেষ করার প্রত্যয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের। এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, নদীর পার্শ্ববর্তী প্রায় ৭০টি পরিবার বসবাস করে। চর খননের পর যদি বøক না বসানো হয় তাহলে নদীর তীর ভাঙনের শঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি নদীর দক্ষিণ পাড়ে মাটি রাখা হচ্ছে। চর খনন করা ময়লা-আবর্জনা ও মাটি নদীর তীর থেকে সরিয়ে না নিলে আবারও নদী ভরাট হয়ে চর সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনার কথা জানান এলাকাবাসী। নদীর পাশে বসবাসকারি তাজউদ্দিন বাবর জানান, ভাঙন রোধে চরের পার্শ্ববর্তী এলাকায় কয়েকশ মিটার এলাকায় বøক দরকার।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী ও ঠিকাদার মেসার্স মহিউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, চরের ময়লা-আবর্জনা নদীর পাশে থাকবে না। এই ময়লা ট্রাক দিয়ে সিটি কর্পোরেশনের নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে রাখা হচ্ছে।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, সড়ক ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় মাটি এবং ময়লা আনা নেয়া সমস্যা হচ্ছে। পাশাপাশি চর খনন করা ময়লা সিটি কর্পোরেশনের নির্দিষ্ট স্থানে রাখা হচ্ছে। প্রকল্পের অর্থায়ন নিয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জানায়, প্রকল্পে প্রথম কিস্তির অর্থ পাওয়া গেছে। পরের ৩ কিস্তির টাকা এখনও পাওয়া যায়নি। এমনকি দ্বিতীয় কিস্তির টাকাও মিলেনি।
প্রকল্পের কাজ বিলম্ব হওয়া এবং অর্থায়ন সম্পর্কে পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম জানান, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, পরিবেশ মন্ত্রণালয় এবং সিসিটিএফ’র অনুমোদন হয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডে আসে। তাই একটু দীর্ঘায়িত হয়। নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, চর পুরোপুরি খনন করা হলে পানি স্বাভাবিকভাবে প্রবাহিত হওয়ার সুযোগ পাবে। চর খনন হলে আবার চর পড়ার শঙ্কা নিয়ে তিনি বলেন, আগামী ১০ বছরে এখানে চর হওয়ার সুযোগ খুবই কম। পাশাপাশি ছড়া থেকে যাতে ময়লা কম আসে সে জন্য সিটি কর্পোরেশন থেকে সচেতনতা কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে যদি চর বড় না হয় এবং দখল না হয় তাহলে নতুন করে চর সৃষ্টির সম্ভাবনা খুবই কম। একই সঙ্গে ছড়া উদ্ধারে ডিপিপি প্রণয়নের কাজ চলছে। আগামী অর্থবছরে একটি প্রকল্প পাশ হওয়ারও সম্ভাবনা আছে। তিনি বলেন, সুরমা নদীতে এ রকম আরও চর এবং ডুবো চর আছে। সবগুলো নিরসন করতে পারলে স্টিমার, জাহাজ চলাচল সম্ভব হবে। স্বাভাবিক হবে নদী পথে ব্যবসা বাণিজ্য।##



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ