পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : মাছের বে-আইনি ও অবৈধ ঘের (স্থানীয় ভাষায় খাইর) দেশের প্রধান খরস্রোতা নদী মেঘনার সর্বনাশ ঘটাচ্ছে। প্রভাবশালী মহল গাছের ডালপালা দিয়ে এসব অবৈধ ঘের ফেলে মাছ ধরে কোটি কোটি টাকার মালিক হচ্ছে। পক্ষান্তরে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মেঘনা ও মেঘনা অববাহিকার হাজার হাজার মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে হাজার হাজার জেলে পরিবার। ধ্বংশ হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির মা মাছ ও জলজ প্রাণী। ৪৫ কিলোমিটার মেঘনা নদীর দুই পাড়ে অবৈধ ঘের স্থাপনের কারণে দুই দিকে চর পড়তে পড়তে নদীর প্রশস্ততা কমে যাচ্ছে। কমে যাচ্ছে নদীর পানি সীমা। মূল স্রোত বাধাগ্রস্ত হয়ে বিভিন্ন মুখী স্রোতের কারণে সারা মেঘনায় অসংখ্য ডুবোচরের সৃষ্টি হচ্ছে। বিনষ্ট হচ্ছে মেঘনার নাব্যতা। হুমকির মুখে পতিত হয়েছে দেশের অষ্টম বৃহত্তম নদীবন্দর নরসিংদী। মেঘনার পানি দূষিত হয়ে পড়ছে। মেঘনার সুস্বাদু ইলিশ মাছের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে। বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বহু প্রজাতির মাছ। জানা গেছে, মেঘনার ১৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে মধ্যে ৪৫ কিলোমিটার নদী বয়ে গেছে নরসিংদী জেলার উপর দিয়ে। এরমধ্যে ভৈরব ও নরসিংদী অংশে নদীটির প্রস্থ হচ্ছে ১৫০০ মিটার। গভীরতা হচ্ছে ২৫ মিটার। বর্ষাকালে এই মেঘনা দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে ১৬ হাজার ৫ শত ৬৮ ঘনমিটার পানি প্রবাহিত হয়। শুষ্ক মৌসুমে প্রবাহিত হয় ১ শত ৫ ঘনমিটার পানি। জেলেরা এ মেঘনা থেকে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতো। ৮০ দশকের পর থেকে মেঘনা নদী একচেটিয়া দখল করে নেয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি। তারা নদীর দুই পাড় স্থায়ীভাবে দখলে নিয়ে নরসিংদীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গাছের ডালপালা ও বাঁশ কিনে নিয়ে মেঘনায় একচেটিয়াভাবে মাছের ঘের ফেলতে থাকে। প্রতিবছর অবৈধ ঘেরের মালিকরা প্রতি সপ্তাহে ঘের থেকে রুই, কাতল, মৃগেল, বোয়াল, আইর, শোল, গজার, কালিবাউশ, ইত্যাদিসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। আর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মানুষের জীবন জীবিকার উৎস মেঘনা। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ ও জীবন বৈচিত্র। গত ৪ দশকে মেঘনা থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে টাকা মাছ, এলগোনা, বড় পটকাসহ কমবেশী অর্ধশত প্রজাতির প্রাকৃতিক গোড়া মাছ। মেঘনার গভীরতা কমে যাওয়ায় হো মাছ, ডলফিন, কুমির, ঘড়িয়ালসহ বিভিন্ন গভীর পানির মাছ ও জলজ প্রাণী বিলুপ্ত প্রায় হয়ে গেছে। মেঘনার আলোকবালীর মাধবপুর, মুরাদনগর, মরিচাকান্দি ইত্যাদি এলাকায় প্রচুর পরিমাণে ইলিশ মাছ পাওয়া যেতো। এখন নদীর গভীরতা কমে যাওয়ায় ইলিশ মাছের সংখ্যা কমে গেছে। এসব মাছ মেঘনার লোয়ার অংশ থেকে আপার অংশে আসতে পারছে না। প্রতিবছর যার যার এলাকায় একই স্থানে বাঁশ, গাছের ডালপালা ও কচুরীপানা আটকে মাছের ঘের স্থাপনের কারণে পানির স্রোত বাধাগ্রস্ত হয়ে চর পড়তে শুরু করে। দীর্ঘ প্রায় ৪ দশকে এই অবৈধ ঘেরের কারণে মেঘনার দুই পাড়ে চর পড়তে পড়তে অংশভেদে কমবেশী ৮০ মিটার পানি সীমা কমে গেছে। মেঘনার বিভিন্ন অংশে ভেসে উঠছে অসংখ্য ডুবোচর। শুষ্ক মৌসুমে মেঘনার গভীরতা কমবেশী ১০ মিটারে নেমে আসছে। একই মৌসুমে মেঘনা একটি শীর্ণকায়া নদীতে পরিণত হচ্ছে। কোন কোন এলাকায় বিশেষ করে চরমধুয়া এলাকায় মেঘনা একটি সংকীর্ণ খালের আকার ধারণ করছে। প্রভাবশালী মহলের এই মেঘনা দখলের কারণে মেঘনার জীব বৈচিত্র বিনষ্ট হচ্ছে। সামগ্রিক পরিবেশে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। মেঘনাকে উৎস করে অববাহিকায় চিল, বাজ, পানকৌড়ি, গাংচিল, মাছরাঙা, ডাহুক, কোরা, বিভিন্ন প্রজাতির বক ইত্যাদি গগণচারী ও জলচর পাখীদের আনাগোনা ছিল। বসবাস ছিল সাপ, গুইসাপ, ব্যাঙ ভোদরসহ বিভিন্ন সরীসৃপ জাতীয় উভচর প্রাণীর। কিন্তু প্রভাবশালী মহলের মেঘনা দখল ও অবৈধ মাছের ঘেরের কারণে এসব গগণচারী পাখী, জলচর ও উভচর প্রাণীরা মেঘনা অববাহিকা ছেড়ে চলে গেছে। শুধু তাই নয় অবৈধ ঘেরেরআটকে রাখা কচুরীপানা ও ডালপালা পঁচনের কারণে মেঘনা পানি দিন দিন দূষিত হয়ে পড়ছে। চোখের সামনে দেশের প্রধান নদী মেঘনার এই সর্বনাশ দেখেও স্থানীয় প্রশাসন অবৈধ দখলদার ও ঘেরের মালিকদের বিরুদ্ধে কোন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। ২০০৫ সালে নরসিংদীর তৎকালীন জেলা প্রশাসক ফিরোজ সালাহ উদ্দিন অভিজ্ঞ মহলের নিকট থেকে মেঘনার দুরাবস্থার কথা শোনে এবং সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। তিনি দীর্ঘ ৪৫ মিটার মেঘনা পরিদর্শন করে মেঘনা পাড়ের মানুষের কথা শোনে ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ নিয়ে মেঘনার সমস্ত অবৈধ মাছের ঘের ভেঙ্গে দেন। বিভিন্নমুখী তদবির সত্বেও তিনি কারো কথা কানে না তুলে ঘের ভেঙ্গে দেন। এরপর তিনি যতদিন নরসিংদীর জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেছেন, ততদিন কোন প্রভাবশালী ব্যক্তি মেঘনায় আর কোন ঘের ফেলার কথা চিন্তাও করতে পারেনি। এরপর কয়েকবছর মেঘনা ঘেরমুক্ত থাকায় বিভিন্ন প্রজাতির মাছের আধিক্য বেড়ে যায়। পর পর কয়েক বছর ঘেরেরমালিকরা ডিমওয়ালা মা মাছ ধরতে না পারায় সু-স্বাদু গোড়া মাছে মেঘনা সয়লাব হয়ে যায়। সারা মেঘনা মাছে মাছে ভরে যায়। আকাশে গগণচারী পাখীদের আনাগোনা বেড়ে যায়। মেঘনা অববাহিকার বাজারগুলোতে প্রতিদিন শত শত ডালা ভর্তি মাছের আমদানী ঘটে। মাছের মুখে মুখে উঠে যায় ঘের ভেঙ্গে দেয়ার কথা। জেলে পরিবারগুলোতে আনন্দ দেখা দেয়। ঘের না থাকায় সাধারণ জেলেরা মেঘনা থেকে অবাধে মাছ শিকারের সুযোগ পায়। কিন্তু ২০০৮ সালের পর থেকে মেঘনা আবার প্রভাবশালীদের দখলে চলে যায়। স্থানীয় প্রশাসন চোখের সামনে মেঘনার এই করুণ অবস্থা দেখেও মাছের অবৈধ ঘেরের মালিকদের বিরুদ্ধে কোন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।