পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ১২ মার্চ রাজধানীতে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। অনুমতির জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশের (ডিএমপি) কাছে আবেদন করলেও গতকাল (শনিবার) পর্যন্ত অনুমতি পায়নি দলটি। তবে অনুমতি না পেলেও রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ব্যাপক জনসমাগমের প্রস্তুতি নিয়ে রাখছেন দলের নেতাকর্মীরা। এ নিয়ে ঢাকাসহ আশাপাশের জেলাগুলোর বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে কয়েক দফা বৈঠকও করেছেন সিনিয়র নেতারা। সমাবেশের অনুমতি না পাওয়ার বিষয়ে গতকাল দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, জনসভার ব্যাপারে আমরা এখনো কিছু জানি না। দেখা যাক, আজকে-কালকের দিন আছে। যখনই তারা (পুলিশ) বলবে, আমাদের সকল প্রস্তুতি রেখেছি। বিশাল মানুষের ঢল হবে এই জনসভায়। তিনি জানান, দলীয় নেত্রীর মুক্তির দাবিতে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরে জনসভা করছে বিএনপি। গতকাল শনিবার খুলনায় প্রথম সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশের অনুমতি দিয়ে ১৪৪ ধারা জারি করলেও তা ভঙ্গ করে ওই জনসভায় ব্যাপক মানুষের উপস্থিতিও হয়।
রিজভী জানান, খুলনার পর ঢাকায় ১২ মার্চ, চট্টগ্রামে ১৫ মার্চ এবং ৩১ মার্চ রাজশাহীতে জনসভা হবে। অন্য বিভাগীয় শহরগুলোতে স্থানীয় নেতারা বসে দিন ঠিক করবেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে বেসামাল মিথ্যাবাদী উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, নারী দিবসে প্রধানমন্ত্রী বলছেন নারীদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতার কথা, তাদের কাজের কথা, তাদের শিক্ষার কথা। অথচ তার দলের সোনার ছেলেদের উৎপীড়নে ‘নারী উন্নয়নের বিভৎস রূপটি’ ৭ মার্চ দেশবাসী প্রত্যক্ষ করল। ‘৭ মার্চ নারী লাঞ্ছনা আওয়ামী উন্নয়নের’ একটি নমুনা। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারীর বাবা হতাশায় নিজের মেয়েকে নিয়ে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। তিনি বলেন, স্ববিরোধীতায় ভরা আওয়ামী রাজনীতি। তারা মুখে যেটি বলবে, কাজ করবে তার বিপরীত। এরা বিএনপির কর্মসূচির অনুমতি দেয়ার পর পুলিশকে বলবে, পিস্তল নিয়ে কর্মসূচির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে। এরা সভা চলাকালীন অবস্থায় বিএনপি নেতাদের টেনে-হিঁচড়ে গাড়িতে তুলবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব একজন বেসামাল মিথ্যাবাদী। তিনি বলেছেন-বিএনপি বেআইনিভাবে সমাবেশ করেছেন। এত বড় টাটকা মিথ্যা কথা তিনি কিভাবে বললেন? তাকে বেসামাল মিথ্যাবাদী ছাড়া আর কী বা বলতে পারি? একজন রাজনীতিবিদ যদি এভাবে অবলীলায় মিথ্যা কথা বলেন, তাহলে দেশের জনগণ ও শিক্ষার্থীরা কী জানবে যে রাজনীতিবিদরা অনর্গল মিথ্যা কথা বলেন, সত্যের অপলাপ ঘটান। আমরা পুলিশকে অবহিত করেছি এবং পুলিশের অনুমতি নিয়েই সমাবেশ শুরু হয়েছিল। আমরা যে কর্মসূচির অনুমতি চেয়ে পুলিশকে চিঠি দিয়েছি, তার রিসিভড কপি আমাদের কাছে আছে। পুলিশ কমিশনার আমাদের মহাসচিবকে মৌখিকভাবে অনুমতির কথা বলেছেন। আমরা তো অবস্থান কর্মসূচি আমাদের দলীয় কার্যালয়ের সামনে করতে চেয়েছি। পুলিশ আমাদের বলেছে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে করতে। আমরা তাদের কথা অনুযায়ী প্রেসক্লাবের সামনে করেছি। আওয়ামী নেতারা নিজেদের পাপ ঢাকতেই মিথ্যা কথা বলেন। বৃহস্পতিবারের অবস্থান কর্মসূচি থেকে ‘নির্মমভাবে টেনে-হিঁচড়ে’ নিয়ে যাওয়া ছাত্রদল নেতা মিজানুর রহমান রাজকে রিমান্ডে নেয়ার নিন্দাও জানান রিজভী।
সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের জন্য কোনো উদ্যোগ নেয়া হবে না প্রধান নির্বাচন কমিশনারের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, তাহলে কী প্রধান নির্বাচন কমিশনার একতরফা নির্বাচনের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছেন? তাহলে নির্বাচন নির্বাচন জিকিরের তো দরকার নেই। নির্বাচনী সিডিউল ঘোষণা করে পরের দিনেই ক্ষমতাসীন দলকে বিজয়ী ঘোষণা করলেই তো পারেন। নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দল যে অনাচার শুরু করেছে সে সম্পর্কে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিশ্চুপ মন্তব্য করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সরকারি খরচে হেলিকপ্টারে করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছেন, আর এদিকে নির্বাচন কমিশন দেখেও না দেখার ভান করে আছে। জাতীয় নির্বাচনে সকল দলকে সমান সুযোগ এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। প্রধান নির্বাচন কমিশনার তার বক্তব্য ও আচরণে একটা অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন করতে আগ্রহী বলে মনে হয় না। তিনি তার মালিক পক্ষের অনুগত থেকে তাদের স্বার্থ রক্ষা করতেই যেন উঠেপড়ে লেগেছেন। সরকারি দলের নেত্রী ও নেতাদের আইন ভঙ্গের ব্যাপারে আসলে সিইসির কিছুই করার নেই। তিনি আরো বলেছেন, তফশিল ঘোষণার আগে এ বিষয়ে যদি কিছু করার থাকে না, যদি নাই থাকে তাহলে তফশিল ঘোষণার পরেও উনি কিছু করতে পারবেন না। দায়িত্বের চেয়ে চাকরি রক্ষা বড় হলে তার দ্বারা কিছু করা সম্ভব নয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার শেখ হাসিনার দুর্বিনীত দুঃশাসনকে প্রলম্বিত করার ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে গেলে দেশে চরম অরাজকতা সৃষ্টি হবে। আর এজন্য দায়ী থাকবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। সর্বপ্রথম দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সহায়ক সরকারের মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার মধ্যেই কেবলামাত্র নির্বাচনী মাঠ সমতল হওয়ার প্রথম শর্ত পূরণ হবে বলে মনে করেন রুহুল কবির রিজভী।
নিম্ন আদালতে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের জামিন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে অভিযোগ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, দেশ আজ দু’ভাগে বিভক্ত। একদিকে সংখ্যাগরিষ্ঠ গণতন্ত্রকামী জনগণ, অন্যদিকে মানুষের অধিকার কেড়ে নেয়া ভোটারবিহীন ক্ষমতাসীনরা। ভোটারবিহীন সরকার নিজেদের নিষ্কণ্টক করতে হাজার হাজার নেতাকর্মীকে কারাগারে আটকিয়ে রেখেছে। তাদেরকে কোনোভাবেই মুক্তি দেয়া হচ্ছে না। বেগম জিয়ার রায়কে কেন্দ্র করে দেড় মাসে প্রায় ছয় হাজারের মতো নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের জামিন পাওয়ার যে অধিকার সেটিও সরকার নিম্ন আদালতকে কব্জা করে বন্ধ করে রেখেছে। জেলখানাগুলো এখন নাৎসীদের গ্যাস চেম্বারে পরিণত হয়েছে। বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি থেকে টেনে-হিঁচড়ে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। নেতাকর্মীদের বাড়িতে হানা দিয়ে তাদের না পেয়ে স্ত্রী-সন্তান, বাবা-মা কিংবা ভাইবোনকে গ্রেফতার করা হচ্ছে, থানায় নিয়ে তাদের ওপর চালানো হচ্ছে নির্যাতন। বাড়িতে বাড়িতে হুমকি দিয়ে তল্লাশি চালিয়ে বিএনপি নেতাদের গ্রাম-শহর থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। প্রচলিত আইনেও গ্রেফতারকৃতদের যতটুকু অধিকার আছে, আদালতে যতটুকু প্রতিকার পাবার বিধান আছে সেটিও আজ খর্ব করা হয়েছে। আদালতের দুয়ার যেন বিএনপি, বিরোধী দল ও মতের মানুষদের জন্য বন্ধ। বাংলাদেশকে এক দুর্বিষহ নরমুÐের অরণ্য বানানো হয়েছে। আতঙ্কময় সময়ের মধ্যে বিএনপি নেতাকর্মীসহ দেশের জনগণ দিনযাপন করছে।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আতাউর রহমান ঢালী, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদ প্রমুখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।