Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিকদের অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে বিতর্ক খ্রিস্টান জাতীয়তাবাদের অপ্রতিহত শক্তি

| প্রকাশের সময় : ১১ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

মিক : বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউফাউন্ডল্যান্ডের পেনসিলভানিয়া শহরে শত শত খ্রিস্টান ইউনিফিকেশন স্যাংচুয়ারি নামে পরিচিত একটি বিতর্কিত গির্জায় জড়ো হয়। তারা প্রভুর সামনে তাদের অক্ষয় ভালোবাসার কথা ঘোষণা করে। এ মানুষগুলোর অনেকের কাছেই ছিল এআর-১৫ আধা স্বয়ংক্রিয় রাইফেল, হাতে শক্ত করে চেপে ধরা, কারো কারো বুকে ঝোলনো ছিল গুলির মালা।
ফ্লোরিডার পার্কল্যান্ডে গুলিতে ১৭ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় রেভারেন্ড সিন মুন সমবেত জনতার সামনে শান্তি পুলিশ ও শান্তি মিলিশিয়া সমন্বয়ে একটি দেশের জন্য প্রার্থনা করেন যেখানে নাগরিকরা সর্বশক্তিমান প্রভু কর্তৃক তাদেরকে দেয়া অস্ত্র রাখা ও বহনের অধিকারের বলে একে অন্যকে রক্ষা ও মানুষের বিকাশকে রক্ষা করতে পারবে।
সিবিএস নিউজ জানায়, চার্চের এক পরিচালক টিম এল্ডার অস্ত্রগুেেলাকে বাইবেলের উল্লেখ মোতাবেক ‘লোহার রড’-এর সাথে তুলনা করেন। কাছের একটি স্কুল নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে সেদিন সব ক্লাস বাতিল করে।
পার্কল্যান্ড গুলির ঘটনার পর রিপাবলিকান ও অস্ত্র প্রবক্তারা দ্বিতীয় সংশোধনী রক্ষায় পবিত্র ধর্মযুদ্ধে নেমেছে। ন্যাশনাল রাইফেল এসোসিয়েশনের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়েন লাপিয়েরে রক্ষণশীলদের এক গুরুত¦পূর্ণ সম্মেলনে বক্তৃতা করেন। তিনি বলেন, অস্ত্রের মালিকানার অধিকার মানুষ কর্তৃক প্রদত্ত হয়নি, আমাদের ্আমেরিকান জন্মের অধিকার বলে ঈশ^র কর্তৃক সকল আমেরিকানের জন্য তা প্রদত্ত হয়েছে। সাবেক ইউটাহ কংগ্রেস সদস্য জেসন চ্যাফেৎজ ফক্স নিউজকে বলেন, পার্কল্যান্ড গুলির ঘটনায় প্রাণে বেঁচে যাওয়াদের ঈশ^রে ও যিশুখ্রিস্টে বিশ^াস করা প্রয়োজন। এ সপ্তাহে অ্যালাবামা সিনেট একটি বিল অনুমোদন করেছে যা সরকারী স্কুলগুলোতে টেন কমান্ডমেন্টস প্রদর্শন বিষয়ে গণভোট নেয়ার বিষয় অনুমোদন করেছে। বিলটির সমর্থনকারী অঙ্গরাজ্য সিনেটর বলেন, এতে স্কুলে হামলাকারীদের হামলা বন্ধ হতে পারে
গবেষণায় দেখা যায়, খ্রিস্টান জাতীয়তাবাদ এক দশক আগের মতই এখনো শক্তিশালী। প্রকৃতপক্ষে খ্রিস্টান জাতীয়তাবাদ আজ অস্ত্র থেকে কর সংস্কার পর্যন্ত রক্ষণশীল রাজনীতির উদ্দীপনা উপেক্ষা করার একটি উপাদান হতে পারে। উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট জর্জ ডবিøউ.বুশকে তার প্রেসিডেন্টের মেয়াদকালে খ্রিস্টান ধর্মবিশ^াসে ব্যাপকভাবে অনুপ্রাণিত গণ্য করা হত। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইভানজেলিকাল খ্রিস্টানদের সর্বোচ্চ সংখ্যক ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন।
শীঘ্রই সোসিওলজি অব রিলিজিয়ন-এ প্রকাশিতব্য একটি প্রবন্ধে ক্লেমসন বিশ^বিদ্যালয়ের অ্যান্ড্রু হোয়াইটহেড ও তার সহযোগীদের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতি খ্রিস্টান জাতীয়তাবাদীদের সমর্থন পরীক্ষা করার কথা বলা হয়েছে। আয়, গ্রামীণতা, রাজনৈতিক মতাদর্শ, ধর্মীয় অন্তর্ভুক্তি, ধর্মীয় সেবা উপস্থিতি, বাইবেলের আক্ষরিকতার মত বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে তারা দেখতে পেয়েছেন যে ইসলামোফোবিয়ার বাইরে অন্য যে কোনো সাংস্কৃতিক বিষয়ের চেয়ে খ্রিস্টান জাতীয়তাবাদীরা ট্রাম্পকে সমর্থন করে এবং তা যৌনতাবাদ, কৃষ্ণাঙ্গ বিরোধী কুসংস্কার , বিদেশী আতংক ও অর্থনৈতিক অসন্তোষের ক্ষেত্রে সমর্থনের চেয়েও অনেক বেশি।
অর্থনৈতিক বিষয়, বিদেশী ভীতি বা বর্ণ বিদ্বেষী অবস্থান ট্রাম্পের নির্বাচনী বিজয়ে সাফল্যের কারণ কিনা তা নিয়ে বিতর্ক আছে। তবে কারণ যেটাই হোক, ২০১৬ সালে ইভাঞ্জেলিস্টদের ৮০ শতাংশই ট্রাম্পের পক্ষে ভোট দিয়েছে। এ সংখ্যা বুশকে দেয়া তাদের ভোটের চেয়ে বেশি।
তবে খ্রিস্টান জাতীয়তাবাদের পরিমাপ খ্রিস্টানত¦ বা চার্চে উপস্থিতির হার বা নিয়মিত উপাসনা করার সমার্থক নয়। পরিবর্তে হোয়াইটহেড ও তার সহযোগী গবেষকগণ ‘ ফেডারেল সরকারের উচিত যুক্তরাষ্ট্রকে একটি খ্রিস্টান দেশ ঘোষণা করা’ এবং ‘ যুক্তরাষ্ট্রের সাফল্য ইশ^রের পরিকল্পনার অংশ’ -্এর মত অবস্থানের প্রতি সমর্থনের ভিত্তিতে খ্রিস্টান জাতীয়তাবাদের জন্য একটি সূচক তৈরি করেছেন।
হোয়াইটহেড বলেন, খ্রিস্টান জাতীয়তাবাদ ধর্মপ্রীতির অভিন্ন ব্যবস্থা বা রাজনৈতিক মতের সাথে জোরালোভাবে সম্পৃক্ত, এ সব বিষয়ের কাছে নমনীয়তা যোগ্য নয়। তিনি বলেন, আমরা যা দেখতে পেয়েছি তা হচ্ছে খ্রিস্টান জাতীয়তাবাদ একটি পৃথক, স্বতস্ত্র বিশ^াসের গুরুত¦পূর্ণ নক্ষত্রপুঞ্জ। এটা হচ্ছে নমনীয় প্রতীকগুচ্ছ, ধর্মীয় প্রথার ভিতরে ও বাইরে এ সব লোক কিভাবে বিশ^কে দেখে, অস্ত্র বহনের অধিকার, কাদের ভোট দেয়া উচিত।
হোয়াইটহেড বলেন, যেহেতু বুশ জামানার পর খ্রিস্টান জাতীয়তাবাদ সম্প্রসারিত হয়নি, তেমনি আন্দোলনেও তেমন তাৎপর্যপূর্ণ অবনতি ঘটেনি। তিনি বলেন, যদি কিছু হয়ে থাকে তা হচ্ছে খ্রিস্টান জাতীয়তাবাদীরা তাদের রাজনীতিতে দশ বছর আগের চাইতে আরো শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।
হোয়াইটহেড ইতোমধ্যেই অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে খ্রিস্টান জাতীয়তাবাদীদের বিরোধিতা বিষয়ে একটি গবেষণার কাজ করছেন। তিনি তার পরিসংখ্যানের কিছু তথ্য মিক-এর সাথে শেয়ার করেছেন। ২০০৭ সাল থেকে তথ্য বিশ্লেষণ করে হোয়াইটহেড দেখেছেন যে খ্রিস্টান জাতীয়তাবাদ তাৎপর্যপূর্ণ ও নেতিবাচক ভাবে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সমর্থনের সাথে যুক্ত। অন্য কথায়, যে সব খ্রিস্টান সুনির্দিষ্ট ভাবে একটি খ্রিস্টান জাতি হিসেবে ফেডারেল সরকারের নিয়তিতে বিশ^াসী তারা অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনের বিরোধিতা করতে পারে।
অবশ্যই বাইবেলীয় ব্যাখ্যা হিসেবে মুষ্টিমেয় কিছু ছোট অনুচ্ছেদ রয়েছে যা একসাথে করলে অপেক্ষমাণ অস্ত্রশস্ত্রে সুসজ্জিত খ্রিস্টান মিলিশিয়া বাহিনীর যৌক্তিকতা প্রতিপন্ন করে। যাত্রাপুস্তক ২২.২, রাতে আসা একজন চোর হত্যা ক্ষমা করার একটি আইন প্রায়শই ২৩টি রাজ্যে আত্মরক্ষার যৌক্তিকতা প্রদর্শনে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তারপর রয়েছে লুকের লাস্ট সাপারের বিবরণ যেখানে যিশু তার শিষ্যদের আগামী দিনগুলোতে আত্মরক্ষার জন্য পোশাক বিক্রি করে অস্ত্র কেনার নির্দেশ দিয়েছেন্
তবে খ্রিস্টান জাতীয়তাবাদ কিভাবে এত শক্তিশালী হয়ে রয়েছে, বাহ্যিক ধর্মীয় যৌক্তিকতা তা ব্যাখ্যা করে না। আসলে হোয়াইটহেড ও সহযোগী গবেষকরা যেমন দেখেছেন, ধর্মীয় অংশগ্রহণ জাতীয়তাবাদী বিশ^াসকে পুরোপুির ব্যাখ্যা করে না। যুক্তরাষ্ট্রের পরিচিতি ও বিশ^ ঘটনাবলীতে তার ভবিতব্যের ব্যাপারে, তা সে জাতি বা সংস্কৃতি যে ভিত্তিই হোক না কেন, খ্রিস্টান জাতীয়তাবাদ যে কোনো জাতীয়তাবাদী গল্পের মতই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ