Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভাষণটি ছিল দীর্ঘ ২৩ বছরের লাঞ্ছনা-বঞ্চনা ও প্রতিবাদের কণ্ঠস্বর প্রধানমন্ত্রী

৭ মার্চের ভাষণ লিখিত বা রিহার্সেল দিয়ে তৈরি ভাষণ ছিল না

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১০ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ৭ মার্চের ভাষণ কোনও লিখিত ভাষণ না, কোনও রিহার্সেল দিয়ে তৈরি করা ভাষণও ছিল না, এই ভাষণ দীর্ঘ ২৩ বছরের লাঞ্ছনা-বঞ্চনা ও প্রতিবাদের কণ্ঠস্বর। এই ভাষণের আবেদন যুগ যুগ ধরে থাকবে।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণকে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার বিকালে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর যে কোনও ভাষণের চেয়েও এই ভাষণ সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমধর্মী। এর কোনও তুলনা হয় না। এটি অতুলনীয় ভাষণ। ১৯৭৫ সালের পর ২১ বছর সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল এ ভাষণ বাজানো। কিন্তু আন্তার্জাতিকভাবে এ ভাষণ আজ স্বীকৃতিপ্রাপ্ত। মুক্তিযুদ্ধে সম্পূর্ণ দিক নির্দেশনা ছিল এ ভাষণ। এ ভাষণটি মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রতিদিন বাজানো হতো। ১৯৭৫ সালের পর হারিয়ে গিয়েছিল এ ভাষণ, বাঙালি জাতি তা আবারও ফিরে পেয়েছে। শুধু বাংলাদেশ না, সারা বিশ্ব এ ভাষণ নিয়ে গর্বিত।
এসময় ছয় দফাকে মুক্তির সনদ হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছয় দফার বিপরীতে একটি আট দফা দেয়া হয়েছিল। এর মাধ্যমে দলের মধ্যে দ্বিধা-দ্ব›দ্ব সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু পরে সিদ্ধান্ত হয় ছয় দফা থেকে আমরা বিচ্যুত হবো না।
আগরতলা মামলা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ১৫ ফেব্রæয়ারি আগরতলা মামলার আসামি সার্জেন্ট জহুরুল হককে হত্যা করা হয়। এ হত্যাই ছিল বঙ্গবন্ধুকে হত্যা-পরিকল্পনার একটা অংশ। এরপর উত্তাল হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। ফলে বঙ্গবন্ধুকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তান সরকার। এরপর তিনি লন্ডনে যান। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে মিটিং করেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ জিতবে কিন্তু পাকিস্তানীরা ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না। তাই তিনি সেখানে বসেই সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেন।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আগরতলা মামলায় বঙ্গবন্ধু জেল থেকে বের হয়ে আসার পর প্রায়ই বলতেন- আমার ছয় দফা মানে বলেই তিনি একটা আঙুল দেখাতেন। তখন এই কথা মুখ দিয়ে উচ্চারণ করা নিষেধ ছিল। আমরা এ কারণে ইশারাতেই সব বুঝে যেতাম। তিনি বলেন, ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানে মার্শাল-ল দেয়ার সময়েই তিনি স্বাধীনতার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। ছাত্রলীগকে দিয়ে ১৯৬২ সালের পর থেকেই একটা ‘নিউক্লিয়াস’ তিনি ফর্ম করেছিলেন। প্রতিটি জেলায়-মহকুমায় তিন সদস্যের কমিটি ছিল। স্বাধীনতার প্রস্তুতি অনেক আগেই নেয়া হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধ শুরুর সময় তাদের নিয়েই মুজিব বাহিনী গঠন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করে সহযোগীতা চাইলেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী
ত্রিপুরার নবনির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব টেলিফোন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলার সময় তার রাজ্যের উন্নয়নে বাংলাদেশের সহযোগিতা চেয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন, ত্রিপুরার নবনির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী শুক্রবার সকালে তার শপথগ্রহণের আগে প্রধানমন্ত্রীকে টেলিফোন করেন। তিনি বলেন, ফোনালাপে বিপ্লব দেব ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এ রাজ্যের উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা চান।
ত্রিপুরার নবনির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীকে বাংলাদেশের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ত্রিপুরার উন্নয়নে বাংলাদেশের পারস্পরিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। তিনি ত্রিপুরা সরকার ও জনগণকে অভিনন্দন জানান। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ত্রিপুরার সরকার ও জনগণের সহযোগিতা ও সাহায্যের কথা কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
৪৮ বছর বয়সী বিপ্লব দেব ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন এবং তার দল বিজিপি ওই রাজ্যে সা¤প্রতিক নির্বাচনে বড় ধরনের বিজয় লাভ করে।
উল্লেখ্য, গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টার দিকে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন বিপ্লব কুমার দেব। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বিপ্লব দেবই প্রথম বিজেপি নেতা, যিনি ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীত্বের ক্ষমতা নিয়েছেন। আগরতলায় আসাম রাইফেলসের মাঠে শপথ অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয়।
বিপ্লব কুমার দেবের পরিবারের আদি নিবাস বাংলাদেশের চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলায়। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বাবা হিরুধন দেব এবং মা মিনা রানি দেব ত্রিপুরায় চলে যান। বিপ্লবের শৈশব ও স্নাতক পর্যন্ত শিক্ষাজীবন কেটেছে ত্রিপুরায়। পরে দিল্লিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী নেন তিনি। কৈশোর থেকেই আরএসএসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল তার। পরে তিনি ধীরে ধীরে বিজেপি নেতা হয়ে ওঠেন। সর্বশেষ ত্রিপুরার বিধানসভা নির্বাচনে বিপ্লব কুমার দেবের নেতৃত্বে বিজেপি বিশাল জয় পেয়েছে। নির্বাচনে বিপ্লব দেবের নেতৃত্বে বিজেপি ৬০টির মধ্যে ৪৩টি আসন পায়। বিপ্লব নিজেও একটি আসনে জয়লাভ করেছেন। রাজ্য বিজেপির সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে মাত্র দুই বছরের মধ্যেই দলটিকে ঐতিহাসিক বিজয় এনে দিয়েছেন বিপ্লব।
এদিকে, বিপ্লবের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার খবরে চাঁদপুরের কচুয়ায় আনন্দ শুরু হয়েছে। শনিবার থেকেই কচুয়া উপজেলার সহদেবপুর পূর্ব ইউনিয়নের মেঘদাইর গ্রামের দেববাড়িতে (মাস্টারবাড়ি) ভিড় বাড়তে থাকে উৎসুক জনতার। আত্মীয়-স্বজন ও শুভাকাঙ্খীদের মধ্যেও চলে মিষ্টি বিতরণ।



 

Show all comments
  • বুলবুল আহমেদ ১০ মার্চ, ২০১৮, ৫:৩১ এএম says : 1
    একদম ঠিক কথা বলেছেন।
    Total Reply(0) Reply
  • মারুফ ১০ মার্চ, ২০১৮, ৫:৩২ এএম says : 1
    এমন ভাষণ একমাত্র তাঁর পক্ষেই দেয়া সম্ভব।
    Total Reply(0) Reply
  • ইসমাইল ১০ মার্চ, ২০১৮, ৫:০৪ পিএম says : 0
    শুধু বাংলাদেশ না, সারা বিশ্ব এ ভাষণ নিয়ে গর্বিত।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ