পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের দিনে আওয়ামী লীগের জনসভাকে কেন্দ্র গতকাল পুরো রাজধানী পরিণত হয়েছিল মিছিলের নগরীতে।
আনুষ্ঠানিকভাবে জনসভা শুরু হওয়ার অনেক আগেই থেকেই ঢাকা ও তার আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে রঙ-বেরঙের পোশাক পড়ে অনুষ্ঠানস্থলে মিছিলসহ আসতে থাকেন নেতাকর্মীরা। গতকাল বুধবার সোহরাওয়াদী উদ্যানে আয়োজিত এই জনসভাকে কেন্দ্র করে জনসভা স্থান ও আর আশপাশের এলাকা ও রাস্তা যেন পরিণত হয় জন¯্রােতে। সকাল থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও এর আশপাশের এলাকাসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এবং খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, নেতাকর্মীদের লাল-সবুজের টি-শার্ট ও মাথায় ক্যাপ পরে পায়ে হেঁটে বা পিকআপ ভ্যান, ট্রাক ও বাসযোগে বিভিন্ন সড়ক ধরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে আসছেন। মিছিলে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, শ্রমিক লীগের নেতাকর্মী-সমর্থকরা আসেন।
রাজধানী ঢাকা ছাড়াও আশপাশের জেলা গাজীপুর, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও নরসিংদী থেকেও নেতাকর্মীরা বাস, ট্রেন ট্রাকযোগে ঢাকায় আসেন। পরে জয় বাংলা শ্লোগান দিতে দিতে এবং বাদ্যযন্ত্র নিয়ে নেচে-গেয়ে জনসভাস্থলে যান তারা। তাদের হাতে বিভিন্ন ব্যানার-ফেস্টুন, অনেকের গায়ে লাল-সুবুজের টি-শার্ট, মাথায় টুপি দেখা গেছে। বাংলা একাডেমির বিপরীত দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশের জন্য যে গেট করা হয়েছিল তাতে মানুষের দীর্ঘ লাইন ছিল সকাল থেকেই।
এছাড়া, নের্তীকর্মীদের বড় একটা অংশ মূল সমাবেশস্থলে প্রবেশ না করে শাহবাগ হয়ে টিএসসি, বাংলা একোডেমী, দোয়েল চত্তর, শিক্ষাভবনের রাস্তায় মিছিল নিয়ে শোডাউন করেছে। এসময় তারা ¯েøাাগানে সেøাগানে মুখরিত করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের চারপাশ। ঢোল-তবলাসহ বিভিন্ন ধরনের বাদ্যযন্ত্রের ব্যঞ্জনায় পুরো এলাকায় বিরাজ করে উৎসবের আমেজ।
সমাবেশে নৌকার ঢেউ: এদিকে ৭ মার্চের এই জনসভায় ব্যতিক্রমী মহড়া দেয় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ। লাল-সবুজের রঙে তৈরী হাজার হাজার নৌকা নিয়ে তারা হাজির হন। জনসভাকে ভিন্নরূপ দিতে জনসভা থেকে নৌকার ঢেউ তোলেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। ৩৫ হাজার সবুজ গেঞ্জি, সুবজ ক্যাপ পরিহিত যুব নেতারা মাঠে নৌকার মাঝি সেজে বসে থাকেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রীসহ দলের সিনিয়র নেতাদের বক্তব্যের সময় নৌকা উপরে তুলে ধরে ঢেউ তোলেন তারা। তাদের এই দৃষ্টিনন্দন কর্ম মুদ্ধ করে সবাইকে।
মনোনয়ন প্রত্যাশীদের শোডাউন: এদিকে জনসভাকে কেন্দ্র করে আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ব্যপক শোডাউন করতে দেখা গেছে। জনসভায় নিজ নিজ অনুসারী ও সমর্থকদের নিয়ে মিছিলসহ প্রবেশ করেন তারা। তাদের ব্যানার, ফেস্টুন, টি-শার্ট টুপিতে বঙ্গবন্ধু শেখ হাসিনার পাশাপাশি নিজেদের ছবি শোভা পায়। নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁও) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত নেতাকর্মীকে নিয়ে শোডাউন করেন। তাদের প্রত্যেকে নৌকার ছবি দিয়ে হাফ গেঞ্জি-মাথায় টুপি এবং প্রত্যেকের হাতে হাতে জাতীয় পতাকা-বর্ণিল ও ব্যানার-ফেস্টুন ছিল। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের মহাসচিব প্রার্থী সফিকুল বাহার মজুমদার উপস্থিত হন মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে। এছাড়া লক্ষীপুর ২ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল, কুমিল্লার মেঘনার নারী নেত্রী সেলিনা ইসলামসহ আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশীরাদের পোস্টার-ব্যানার নিয়ে শাহবাগ ও দোয়েল চত্তরের আশপাশের এলাকায় শোডাউন করতে দেখা গেছে। সচিবালয়ের সামনে থেকে দোয়েল চত্তর-বাংলা একাডেমির চারপাশে ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও এমপি পুত্র মশিউর রহমান মোল্লা সজলের অনুসারিরা দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত মিছিল করেন। এভাবে ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের জেলার মনোনয়ন প্রত্যাশীরা বিভিন্নভাবে শেখ হাসিনার দৃষ্টি আর্কষণের চেষ্টা করেন।
মঞ্চে ছিল বঙ্গবন্ধুর অস্থায়ী ভাস্কর্য: এই জনসভায় ঐতিহাসিক ৭ মার্চের পরিবেশ এবং ভাষণের আবহ ফুটিয়ে তুলতে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভা মঞ্চে বঙ্গবন্ধুর একটি অস্থায়ী ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যটির পরনে সাদা পাঞ্জাবি আর তার ওপর কালো কোট। সেই সঙ্গে সেদিনের তার সেই অঙ্গভঙ্গি। মঞ্চে স্থাপিত ভাস্কর্যটিতে বঙ্গবন্ধুর সেদিন (৭ই মার্চ) আঙ্গুল উঁচিয়ে বাংলার আপামর জনতাকে স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত হতে আহŸান জানানোর পাশাপাশি পাকিস্তানি সরকারকে কড়া হুঁশিয়ারি দেয়া শেখ মুজিবের অবিকল ব্যক্তিত্ব তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়।
কোথাও যানজট কোথাও ফাঁকা, জনমানুষের ভোগান্তি: এদিকে জনসভাকে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়। সড়কে বাসের সংখ্যাও ছিল অন্য দিনের চেয়ে কম। এতে বিপাকে পড়ে বিভিন্ন গন্তব্যের মানুষ। গাড়ির অপেক্ষায় রাস্তায় দীর্ঘ সময় গাড়ির অপেক্ষায় রাস্তায় দীর্ঘ সময় বিভিন্ন পরিবহনের বাস সমাবেশে নেয়ার কারণে তাদের দুর্ভোগ আরো বেড়ে যায়। বাধ্য হয়ে লোকজন হেঁটেই রওনা হন গন্তব্যে।
এছাড়া সমাবেশস্থল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশের রাস্তা সমাবেশে লোকজন আসার সুবিধার্থে সকাল ১১টা থেকে যেমন শাহবাগের রূপসী বাংলা সিগন্যাল, কাটাবন মার্কেট মোড়, নীলক্ষেত মোড়, চানখাঁরপুল, জিপিও ও মৎস্য ভবন মোড় থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানমুখী সব রাস্তা বন্ধ করে দেয় পুলিশ। জনসভায় কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে আসা বাসগুলো বিভিন্ন সড়কে রাখায় এবং বিভিন্ন এলাকা থেকে সমাবেশগামী মিছিল যানজটের তীব্রতা বাড়ায়। সেগুনবাগিচা, বিজয় নগর, কাকরাইলসহ সমাবেশস্থলের কাছাকাছি বিভিন্ন এলাকার অলিগলিতেও ছড়িয়ে পড়ে যানজট। তবে কোথাও কোথাও রাস্তার একপাশে যানজটের বিপরীতে অন্যপাশে ফাঁকা সড়কের চিত্রও দেখা গেছে।
জনভোগান্তিতে ওবায়দুল কাদেরের দু:খ প্রকাশ: এদিকে আওয়ামী লীগের জনসভা শুরুতেই সৃষ্ট যানজটের জন্য দলটির সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নগরবাসীর কাছে দু:খ প্রকাশ করে তাদের সহনশীল হওয়ার অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, আমরা আমাদের অন্যান্য জনসভাগুলো ছুটির দিনে শুক্রবার ও শনিবার করেছি। কিন্তু এই দিনটি সকল বাঙালির সম্পদ। এই দিনটি পরিবর্তন করা যায় না। আপনাদের একটু কষ্ট হলেও সহনশীল হওয়ার জন্য অনুরোধ জানাই। স্বাধীনতাবিরোধীরা এই দিনটি মুছে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু এখন আর এটি কেবল বাঙালির ইতিহাস নয়, সারা বিশ্বের সম্পদে পরিণত হয়েছে।
এর আগে ভোরে বঙ্গবন্ধু ভবন ও দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় এবং দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে এ দিনের কর্মসূচি শুরু করে আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল ৭টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি। পরে আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসাবে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিযে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন শেখ হাসিনা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।