Inqilab Logo

শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের ইবাদত-বন্দেগিতে ফুরফুরা পবিত্র পুণ্যভ‚মিতে পরিণত

১২৭তম ঈসালে সাওয়াবের মাহফিলের দ্বিতীয় দিন

| প্রকাশের সময় : ৮ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

কলকাতা থেকে আবু হেনা মুক্তি : এ এক অন্যরকম দৃশ্য। লাখ লাখ মুসল্লির ঢল। আল্লাহ ভীরু মানুষের জিকির আসকারের যেন এক জনস্রোত। মুজ্জাদ্দেদে জামান হজরত আবু বক্কর সিদ্দিকী রহ.-এর মাজার জিয়ারতে গতকাল ফুরফুরায় ছুটে আসেন দেশ-বিদেশ থেকে লাখ লাখ মানুষ। কলকাতার ফুরফুরা দরবার শরিফে তিন দিনব্যাপী ১২৭তম ঈসালে সাওয়াবের দ্বিতীয় দিনে কয়েক লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান ফুরফুরা দরবার শরিফে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সাথে আদায় করেন। দিনব্যাপী সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে ইবাদাত-বন্দেগি ও জিকির আসকার। নামাজ আদায় করার জন্য হুগলী জেলা, কলকাতাসহ আশপাশের জেলা এমনকি দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন নানা বয়সী মানুষ। দীর্ঘ পথ হেঁটে আসেন অনেকে। তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না ৮-৯ কিলোমিটার সুদীর্ঘ এলাকা। জোহরের নামাজ শুরুর আগ পর্যন্ত পুরো ফুরফুরার ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। নামাজের কাতার ছাপিয়ে যায় নদীর তীর, সড়ক-মহাসড়ক থেকে শিয়াখালা বাজার পর্যন্ত। এমনকি যানবাহনের ওপরও। বহু মুসল্লিকে জায়গা না পেয়ে রাস্তায় খবরের কাগজ, পলিথিন বিছিয়ে নামাজ আদায় করতে দেখা যায়। ঈসালে সাওয়াবের দ্বিতীয় দিন বুধবার সকাল থেকেই শিয়াখালা এবং তালতলা বাজার ও আশপাশের এলাকার কয়েক লাখ ধর্মপ্রাণ মানুষ নামাজ ও জিকির আসকারে অংশ নিতে হেঁটে ফুরফুরা ময়দানে আসতে শুরু করেন। ফজর থেকেই ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের জিকির-আসকার, ইবাদত-বন্দেগিতে ফুরফুরা এক পবিত্র পুণ্যভ‚মিতে পরিণত হয়।
আল্লামা পীরজাদা হজরত মাওলানা জাবিউল্লাহ সিদ্দিকী (মাদ্দা:) হুজুর বলেন, ‘লা ইলাহা ইল্লালাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ এই কলেমার বার্তা নিয়ে পৃথিবীতে আগমন করেন সর্বশেষ্ঠ রাসূল, আমাদের প্রিয় নবী হজরত মোহাম্মদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি এসে তার স¤প্রদায়কে কলেমার দাওয়াত দেন। সারা বিশ্বকে জানিয়ে দেন, আল কুরআন হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। সেই প্রিয় নবীর আহŸান অনুযায়ী, অর্থাৎ কুরআন ও হাদীসের আলোকে আমাদের জীবন পরিচালনা করতে হবে। হুজুর বলেন, ইলমে মারেফত, শরিয়ত, তরিকত ও হাকিকত হাসিলের মাধ্যমে একজন মানুষ সঠিক ও সুন্দরভাবে জীবন পরিচালনা এবং এশকে ইলাহি ও হুববে রাসূল অর্জন করতে পারেন। মুজাদ্দেদে জামান পীর আবু বক্কর (রহ:) নীতি ও আদর্শকে সামনে নিয়ে যদি কোনো সালেক জীবন পরিচালনা করেন, তাহলে সকল সমস্যার সমাধান উক্ত নীতি ও আদর্শের মধ্যে খুঁজে পাবেন। সিলসিলায় ফুরফুরা শরিফে মত ও পথের উপর ভিত্তি করে অসংখ্য মানুষ আল্লাহর ওলির দফতরে নাম লেখাতে সক্ষম হয়েছেন। যেমনÑ আল্লামা রুহুল আমীন (রহ:), নেছার উদ্দীন (রহ:), ময়েজ উদ্দীন হামিদী (রহ:), আব্দুল মাবুদ মেদেনীপুরী (রহ:), সুফি সদর উদ্দিন (রহ:) প্রমুখ। এই দরবারেরই দীক্ষা নিয়েই এই বুজুর্গরা বাংলাদেশ ও ভারতীয় উপ-মহাদেশে ইসলামের বাণী প্রচার করেছেন।
আল্লামা পীরজাদা হজরত মাওলানা জাবিহুল্লাহ সিদ্দিকী (মাদ্দা:) আরো বলেন, পরকালের চিরস্থায়ী সুখ-শান্তির জন্য আমাদের প্রত্যেককে দুনিয়াতে জীবিত থাকা অবস্থায় কালেমার দাওয়াতের কাজে কঠিন মেহনত করতে হবে। ঈমান-আমলের মেহনত ছাড়া কেউ হাশরের ময়দানে কামিয়াব হতে পারবে না।
হুজুর আরো বলেন, ঐতিহাসিক এ মাহফিলে সঠিক নিয়তে একমাত্র আল্লাহকে রাজি-খুশি করার জন্য আসতে হবে। কোনো মাজারকে সিজদাহ নয়, সিজদাহ করতে হবে একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামিনকে। দুনিয়া অতি ক্ষণস্থায়ী, আর আখিরাত অনন্তকাল। আখিরাতের জন্য এখান থেকে সঠিক সওদা করতে হবে। হুজুর বলেন, বুখারি শরিফের প্রথম হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, নিয়তের উপর সকল কাজের ফলাফল নির্ভর করে। তাই রোগ ভালো হবে, অর্থ-বিত্ত বৃদ্ধি পাবে বা নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া ইত্যাদির নিয়তে কেউ এসে থাকলে ভুল করেছেন। কারণ এখানে শুধু দুনিয়া নয়, বরং আখেরাতের ওষুধ বাতানো হয়। আল্লাহকে রাজি-খুশি করে কিভাবে কবরে যাওয়া যাবে, সেই পথ খুঁজে পেতে চার দিনের এই মাহফিলে ওলামায়ে কেরামের বয়ান মনোযোগ সহকারে শোনার জন্য তারা সকল মুসল্লির প্রতি আহŸান জানান। পীরজাদা পিতা-মাতার খেদমতের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন।
দিনব্যাপী আলোচনা ও বয়ান হয়। মাগরিব থেকে এশা পর্যন্ত জিকির আসকার হয় এবং মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনা করে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। ঈসালে সাওয়াবে ভারতবর্ষে বিভিন্ন ভাষাভাষী ও ধর্ম-বর্ণের লোক উপস্থিত হন।
বিভিন্ন ভাষায় বয়ান অনুবাদ : ফুরফুরার ঈসালে সাওয়াবে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের ১৫-২০ জন বিশিষ্ট আলেম বয়ান পেশ করবেন। মূল বয়ান বাংলাতে হলেও উর্দু, ইংরেজি, আরবি, তামিল, মালয়, তুর্কি ও ফরাসি ভাষায় তাৎক্ষণিক অনুবাদ হচ্ছে। বিদেশি মেহমানরা মূল বয়ান মঞ্চের উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব পাশে হোগলা-পাটিতে বসেন। বিভিন্ন ভাষাভাষী মুসল্লিরা আলাদা আলাদা বসেন এবং তাদের মধ্যে একজন করে মুরব্বি মূল বয়ানকে তাৎক্ষণিক অনুবাদ করে শোনান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ