পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মুন্সী কামাল আতাতুর্ক মিসেল : সমান ট্যাকা তো দেয় না, ওর চেয়ে ৫০ টাকা কম দেয়। নারী দিবস কি? কারে কয়। কি হয় এই দিনে? কথাগুলো বলছিলেন চান্দিনার মরিয়ম নেছা। সেই কাকডাকা ভোরেই মরিচা পোড়া পান্তাভাত খেয়ে নিত্যদিন কাজের সন্ধানে ছুটতে হয়। তার মতো আরো অনেকে ক্লান্তিহীনভাবে রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে রুটি-রুজির পথ বেছে নিতে হয়েছে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার অসংখ্য নারী শ্রমিককে। এসব মহিলা শ্রমিক একজন পুরুষ শ্রমিকের মতোই দিনভর হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে। কিন্তু মজুরিরর ক্ষেত্রে তারা বৈষ্যমের শিকার হয়। প্রতিদিনের জন্য তাদের শ্রম বিক্রি করতে হয়। প্রতিদিন ৪০০ টাকা দেয়া হয় একজন পুরুষ কর্মীকে। আর নারী হলে দেয়া হয় ৩৫০ টাকা। কেন ৫০ টাকা কম দেয় জানতে চাইলে মরিয়ম নেছা জানান, দেয় না তো কি করুম। কাজ তো একই। বইল্যাও লাভ নাই। প্রতিনিয়ত নারী শ্রমিকদের ঠকানো হলেও কেউ তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়ে ন্যায্য পাওনা আদায়ের ব্যাপারে সোচ্চার ভূমিকা রাখছে না। ফলে বরাবরই এসেব নারী শ্রমিক ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
বিশ্ব নারী দিবস আজ। নারীর জন্য মজুরি বৈষম্য, শ্রম ঘণ্টা নির্ধারণ, প্রাপ্য ছুটি ও পুরুষ সহকর্মীর মতো কর্মক্ষেত্রে সমান সুযোগ-সুবিধা এবং সমাজে প্রাপ্য সম্মান পাওয়ার জন্য আজ থেকে ১০২ বছর আগে দীর্ঘ আন্দোলনের পর অর্জিত হয়েছিল বিশ্ব নারী দিবস। তারই ধারাবাহিকতায় নারীদের প্রাপ্য অধিকার রক্ষায় বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে বিশ্ব নারী দিবস। কিন্তু শত বছরপার হলেও এখনো পরিবারে, সমাজে, কর্মক্ষেত্রে সমানভাবে অর্জিত হয়নি নারীর অধিকার। রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ক্ষেত্রে নারীরা এগিয়ে এলেও তাদের অবস্থার তেমন একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় না। সেই সমস্ত প্রাপ্য অধিকার পাওয়ার জন্য এবং অবস্থার পরিবর্তনের জন্যই এ সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তর বলে জানান নারী নেত্রীরা।
শ্রমিক হিসেবে মহিলাদের কদর বেশি চান্দিনায়। কারণ পুরুষ শ্রমিকের চেয়ে একদিকে যেমন মহিলা শ্রমিকদের মজুরী কম, অপরদিকে তাদের কাজে কোন ফাঁকি-ঝুঁকি নেই। এসব মহিলা শ্রমিক ইট ভাঙা, মাটি কাটা, ধান সিন্ধ ও শুকানো কাজ বিভিন্ন বাসাবাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করে দিনমজুর স্বামীকে সহযোগীতা করা ছাড়াও কোন কোন ক্ষেত্রে পুরো পরিবারের ভরণপোষণ চালিয়ে আসছে। বর্তমানে উপজলোর বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা মেরামতের কাজে অংশগ্রহণ লক্ষ্য করা যায়। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এসব নারী শ্রমিক উল্লেখযোগ্য অবদান রাখলেও তারা কাজ শেষে মজুরি পায় পুরুষ শ্রমিকদের তুলনায় অনেক কম।
মজুরি কেন কম এ ব্যাপারেও নেই তাদের কোন ক্ষোভ বা অভিযোগ। পুরুষ শ্রমিকের মতো সকাল থেকে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে কম মজুরি পেলেও তারা সন্তুষ্টচিত্তে ফিরে যায় বাড়ি। জড়িনা বেগম (৩২), মরিয়ম নেছা (৩০), হাসনাহেনা বেগম (৩৫), জেসমিন আক্তার (৩৮) আমেনা বেগম (৩৩) কম মজুরি পেলেও পেটের তাগিদে তাদের গতরে খাততে হয়। এদের অনেকেরই স্বামী থাকলেও অসচ্ছল পরিবার। আবার কেউ অল্প বয়সেই বিধবা কিংবা স্বামী পরিত্যক্তা হয়েছে। এদের একজন মরিয়ম নেছা জানান, সারাদিন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে মজুরি পায় ৯০ টাকা। একদিন কাজে না গেলে স্বামী নির্যাতন চালায় খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয়। রোগে দুঃখে কাতর এসব মহিলা শ্রমিক এরপরেও প্রতিনিয়ত হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে জীবিকা নির্বাহী করে চলছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।