পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা, অধিকারকর্মী, ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। কিডনি ও হৃদরোগের জটিলতা নিয়ে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে তিনি ইন্তেকাল করেছেন বলে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত এই মুক্তিযোদ্ধার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। তার ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর মেয়ে ফুলেশ্বরী প্রিয়নন্দিনী জানান, গত বছরের নভেম্বরে বাথরুমে পড়ে গোড়ালিতে চোট পান তার মা। হাসপাতালে ভর্তি করার পর হার্ট অ্যাটাক হলে তার হৃদযন্ত্রে স্থায়ীভাবে পেসমেকার বসাতে হয়।
এরপর ডিসেম্বরের শেষে আবারও গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ভর্তি করা হয় ল্যাব এইড হাসপাতালে। সেখানে কিছুদিন চিকিৎসার পর গত ২২ ফেব্রæয়ারি আবারও তাকে ওই হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়।
ফুলেশ্বরী জানান, কয়েক দিন আগে তার মায়ের গোড়ালিতে অস্ত্রোপচার করা হয়। কিন্তু রক্তচাপ ঠিক থাকছিল না। অবস্থা খারাপ হলে গতকাল মঙ্গলবার সকালে তাকে ল্যাবএইডের সিসিইউতে নেওয়া হয়। বেলা পৌনে ১টার দিকে সেখানেই তিনি ইন্তেকাল করেন বলে ল্যাব এইড হাসপাতালের কর্মকর্তা সাইফুর লেনিন জানান।
ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর ইন্তেকালের খবরে দেশে নেমে আসে শোকের ছায়া। শিল্পী, সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রতিনিধি এবং অধিকারকর্মীদের অনেকেই ছুটে যান হাসপাতালে। গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার হাসপাতালে সাংবাদিকদের জানান, বিকালে প্রিয়ভাষিনীর মরদেহ বসুন্ধরা পিংক সিটিতে তার বাসায় নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে তাকে গোসল করিয়ে রাতে মরদেহ রাখা হবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেলের হিমঘরে।
পরিবারের পক্ষে কবি মোহাম্মদ সামাদ বলেন, প্রিয়ভাষিনীর ছেলে কাজী মহম্মদ শাকের তূর্য আগামীকাল (আজ বুধবার) অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরবেন। তারপর আগমীকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে এক ঘণ্টা কফিন রাখা হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। ওইদিন জোহরের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা হবে। পরে তাকে মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হবে। আগামী ১০ মার্চ বিকাল ৪টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এই মুক্তিযোদ্ধার জন্য নাগরিক শোকসভার আয়োজন করা হবে বলে জানান তিনি।
১৯৪৭ সালের ১৯ ফেব্রæয়ারি খুলনায় ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর জন্ম। তার নানা অ্যাডভোকেট আব্দুল হাকিম ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের সরকারের সময় স্পিকার হয়েছিলেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে নির্যাতিত হতে হয় এই বীর নারীকে। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার অবদানের জন্য ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে মুক্তিযোদ্ধা খেতাব দেয়। তার আগে ২০১০ সালে তিনি পান স্বাধীনতা পুরস্কার।
ছয় সন্তানের জননী ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর পুরো জীবন কেটেছে সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে। ১৯৭৭ সাল থেকে দুই দশকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তিনি কাজ করেছেন, যার শুরু হয়েছিল স্কুল শিক্ষকতা দিয়ে। পরে মন দেন শিল্পের সাধনায়; ঝরা পাতা, শুকনো ডাল, গাছের গুঁড়ি দিয়ে তার তৈরি গৃহসজ্জার উপকরণ ও শিল্পকর্ম তাকে ধীরে ধীরে করে তোলে ভাস্কর।
২০১৪ সালে একুশের বইমেলায় ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর আত্মজৈবনিক গ্রন্থ ‘নিন্দিত নন্দন’ প্রকাশিত হয়। তার তিন ছেলে কারু তিতাস, কাজী মহম্মদ নাসের ও কাজী মহম্মদ শাকের তূর্য্য; আর রাজেশ্বরী প্রিয়রঞ্জিনী, রতেœশ্বরী প্রিয়দর্শিনী, ফুলেশ্বরী প্রিয়নন্দিনী তার তিন মেয়ে। ###
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।