Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বাস্থ্য খাতে একচল্লিশ হাজার জনবল নিয়োগ করা হবে

বিএইচআরএফ’র ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী

| প্রকাশের সময় : ৫ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : বর্তমান সরকারের আমলেই স্বাস্থ্য খাতে আরো একচল্লিশ হাজার জনবল নিয়োগ দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। তিনি বলেন, আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেক্টরের বেশ অগ্রগতি হয়েছে। পদশের সর্বত্র বিস্তার লাভ করেছে ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবার নেটওয়ার্ক। এমন মজবুত অবকাঠামোর ওপর দাাঁড়িয়ে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের মাত্রার ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবার অবকাঠামো বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশের মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে । অবকাঠামোর উন্নয়ন, মাতৃ ও শিশু মৃত্যু হ্রাস, ওষুধের সরবরাহ বৃদ্ধি, কমিউনিটি ক্লিনিক চালু, স্বাস্থ্য খাতে ডিজিটাল বাংলাদেশ কার্যক্রম ইত্যাদি উন্নয়নমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করে সরকার। তবে এই সেক্টরে জনবল সংকট রয়ে গেছে। তাই চলতি বছরেই ১০ হাজার চিকিৎসক এবং ৪০ হাজারের বেশি তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারি নিয়োগ দেবে সরকার।
গতকাল রোববার রাজধানীর বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের (বিএমএ) সম্মেলন কক্ষে দেশের স্বাস্থ্য সেক্টরের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএইচআরএফ) আয়োজিত ‘ মিট দ্য প্রেস ’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি তৌফিক মারুফ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিএমএ সভাপতি প্রফেসর ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ও মহাসচিব প্রফেসর ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী, স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হাসপাতাল) হাবিবুর রহমান, হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের মহাসচিব নিখিল মানখিন প্রমুখ।
স্বাস্থ্য সেক্টরের উন্নয়নের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের স্বাস্থ্য সেক্টরের উন্নয়ন আজ দৃশ্যমান। দেশের ৯৯ ভাগ উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে রয়েছে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিসেবার ব্যবস্থা। বর্তমানে প্রতি মাসে ৮০ থেকে ৯০ লাখ মানুষ কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে সেবা নেন। দেশে অনুর্ধ ১২ মাস বয়সের শিশুদের সকল টিকা প্রাপ্তির হার ৮১ ভাগ। ধনুষ্টংকার ও পোলিওমুক্ত হয়েছে দেশ।
মোহাম্মদ নাসিম বলেন, দেশব্যাপী ডিজিটালভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হয়েছে। জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে সরকারের সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা রয়েছে। একটি সুস্থ জাতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে ক্লিনিক চালু করা হয়েছে। এসব ক্লিনিকে প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাদেরকে দেয়া হয়েছে ল্যাপটপ ও ইন্টারনেট সংযোগ। রোগীদের বিনামূল্যে ওষুধ দেয়া হচ্ছে। আর চালু করা হয়েছে ই-হেলথ ও টেলিমেডিসিন সেবা কার্যক্রম। স্বাস্থ্যসেবা নেটওয়ার্কের স্তরগুলো উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্যকর্মী, প্রাইমারী, সেকেন্ডারী, টারসিয়ারী ও বিশেষায়িত হাসপাতাল এবং উভয়মুখী রেফারেন্স পদ্ধতি প্রবর্তন করেছি। যা বিশ্বে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত বিষয়গুলোকে কর্মপরিকল্পনায় গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। দেশে গড়ে উঠেছে ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবার মজবুত অবকাঠামো। স্বাস্থ্যখাতে সাফল্য অর্জনের মাধ্যমে দেশের জনগণের প্রতি নিজেদের অঙ্গীকার পূরণ করছে বর্তমান সরকার। আর সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা করতে নিজেদের দেয়া প্রতিশ্রæতি বাস্তবায়নেও সরকার সব সময় আন্তরিক। দেশের সাধারণ মানুষ আজ ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবার সুবিধা পাচ্ছে। ডিজিটাল বাংলদেশ এখন আর শুধু শ্লোগান নয়, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এর সুবিধা পৌঁছে গেছে। দেশের সকল পর্যায়ের হাসপাতালে বেডের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। স্থাপন করা হয়েছে আধুনিক যন্ত্রপাতি। নির্মাণ করেছি নতুন নতুন জেনারেল হাসপাতাল ও বিশেষায়িত হাসপাতাল। সরকার নতুন নতুন মেডিক্যাল কলেজ, ডেন্টাল কলেজ, হেলথ টেকনোলজি ইনস্টিটিউট, নার্সিং কলেজ এবং নার্সিং ট্রেনিং ইনস্টিটিউট স্থাপন করেছে। আর ডাক্তার, নার্সসহ স্বাস্থ্যখাতের প্রতিটি বিভাগেই জনবল বাড়ানো হয়েছে। দারিদ্র বিমোচন, শিক্ষা, জেন্ডার সমতা, নারীর ক্ষমতায়ন এবং পরিকল্পিত পরিবার নিশ্চিত করতে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। নারী ও শিশু স্বাস্থ্য উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে নারী ও শিশুর স্বাস্থ্য এবং জীবনমান সহায়ক নানামুখী সেবা ও সহায়তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে সরকার। জাতিসংঘের মা ও শিশু স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশ্ব কৌশলপত্র বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দেশব্যাপী মা ও শিশুর নিবিড় পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে জাতিসংঘের ‘কমিশন অন ইনফরমেশন এন্ড এ্যাকাউন্টেবিলিটি অন উইমেন’স এন্ড চিল্ড্রেন’স হেলথ’ এর ১১টি সূচক ব্যবহার করা হচ্ছে। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই ইলেক্ট্রনিক নিবন্ধন পদ্ধতি নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন বর্তমানে সরকারি হাসপাতালের সংখ্যা ৫৯৩টি। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তরের রয়েছে ১২৬টি। এই দু’টি স্তরে চালু রয়েছে ২৬ হাজার ৮৪১টি শয্যা। যা সরকারি শয্যার ৫৯ ভাগ। শয্যা সংখ্যা স্নাতকোত্তর হাসপাতাল পর্যায়ে ২ হাজার ৩শ’ মেডিক্যাল/ডেন্টাল কলেজ হাসপাতাল পর্যায়ে ১১ হাজার ৯৬০ এবং জেলা ও সদর হাসপাতাল পর্যায়ে রয়েছে ৯ হাজার ২শ’টি। কর্মস্থলে চিকিৎসকদের উপস্থিতি নিশ্চিতকরণে ‘বৈদ্যুতিক হাজিরা মনিটরিং ব্যবস্থা ’ চালু করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এ লক্ষ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতরাধীন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রসমূহে ইতোমধ্যে স্থাপন করা হয়েছে বায়োমেট্রিক যন্ত্র। অভিযুক্ত কয়েকশ’ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে বিভিন্ন ধরনের শান্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারবর্গের চিকিৎসাসেবা প্রদানে বিশেষ ব্যবস্থা করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ফ্রি এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের বাস্তবায়ন শুরু করেছে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
বেশ কয়েকটি সরকারি হাসপাতালের সেবার মান নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের প্রেক্ষিতে অনুষ্ঠানে বসেই সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সমস্যাসমূহ সমাধান করার নির্দেশ দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। কিছু সংখ্যক নি¤œমানের মেডিক্যাল কলেজের সমালোচনা করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের কিছু সংখ্যক বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের অবকাঠামো ও শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কয়েকটি কলেজের নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। শর্ত পূরণের প্রতিশ্রæতির প্রেক্ষিতে শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমতি দেয়া হলেও তাদের কোন পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়নি। এমন কলেজ থেকে দক্ষ ও যোগ্য চিকিৎসক বের হয়ে আসতে পারে না ।
স্বাস্থ্য সেক্টরের বড় ধরনের কোন দূর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যায়নি জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবার ক্ষেত্রে অন্য কিছুর সঙ্গে আপোষ করেনি, বাকি সময়েও করব না। অনিয়ম ও দূর্নীতির বিষয়ে সব সময় কঠোর অবস্থান নিয়েছি। তাই এই সেক্টরে কেউ বড় ধরনের দূর্নীতির কোন অভিযোগ আসেনি।

 



 

Show all comments
  • Nur ৫ মার্চ, ২০১৮, ৯:০৩ এএম says : 0
    Sasto kat sompurno osusto .seba kutaw nae.ja ase sob kaguje.r seba to onek agee mara gese .bebosa akon ar asol nam .a obosta sobai jane ami aka noi .এখানে আপনি আপনার মন্তব্য করতে পারেন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ