Inqilab Logo

বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৬ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

দুর্বল হচ্ছে কৃষি অর্থনীতি

দক্ষিণ-পশ্চিমে কৃষি উন্নয়ন ঢিলেঢালা, মধ্যস্বত্বভোগী ও সুদের কারবারীদের তৎপরতা

| প্রকাশের সময় : ৫ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

মিজানুর রহমান তোতা : কৃষিক্ষেত্রে বিরাট সম্ভাবনাময় দক্ষিণ-পশ্চিমের অঞ্চলটি দিনে দিনে এগিয়ে যাবার চেয়ে পড়ছে পিছিয়ে। বর্তমানে গ্রামীণ অর্থনীতির প্রাণশক্তি কৃষিতে বিরাজ করছে দারুণ নাজুক অবস্থা। মাঠে মাঠে বিভিন্ন ফসলের সবুজের অপরূপ সৌন্দর্য তৈরী করার ধারক কৃষককুল ফসল উৎপাদনে বিরাট সফলতা আনতে সক্ষম হলেও আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারছেন না। লাভবান হচ্ছেন কৃষকের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমে উৎপাদিত ফসলে মধ্যস্বত্বভোগীরা। তাছাড়া সরকারের কৃষি উন্নয়ন একেবারেই ঢিলেঢালা। পরিকল্পনা আছে, নেই বাস্তবায়ন। রয়েছে বাজার ব্যবস্থাপনার অভাব। যার জন্য কৃষক পাচ্ছেন না কৃষিপণ্যের উপযুক্ত মূল্য। দিনে দিনে এগিয়ে যাবার চেয়ে তারা অভাবগ্রস্ত ও দায়দেনায় জড়িয়ে পড়ছেন। ফলে দুর্বল হয়ে পড়ছে কৃষিনির্ভর অর্থনীতির ভিত।
কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত একাধিক সুত্র জানায়, অর্থনীতির ভিত দুর্বল হওয়ায় অস্থিরতার সৃষ্টি হচ্ছে। অর্থনীতিবিদরা এর জন্য ফসলের উপযুক্ত মূল্যপ্রাপ্তির অনিশ্চয়তা, মধ্যস্বত্বভোগীদের বেপরোয়া দাপট ছাড়াও সুদের কারবারি ও ক্রেডিট প্রোগ্রামের এনজিওদের অপতৎপরতাকে দায়ী করেছেন। কারণ এমন কোন গ্রাম খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখানে ক্রেডিট প্রোগ্রাম নেই। গরীব কৃষক ও স্বল্প আয়ের মানুষকে ঋণ দিয়ে তারা অস্থিরতার মাঝে রেখেছে। ব্যাঙের ছাতার মতো প্রতিটি গ্রাম এমনকি পাড়া মহল্লায় গজিয়ে উঠেছে এনজিও। যাদের কারো রেজিস্ট্রেশন আছে, কারো নেই। তার উপর রয়েছে মহাজনী সুদ ব্যবসা। শুধু কৃষক নন, গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার এবং খেটে খাওয়া মানুষের কথা, অনেক জমিজমা আছে কিংবা বিদেশে রয়েছেন এমন কেউ কেউ আর্থিকভাবে ভালো আছেন এটি সত্য কিন্তু সিংহভাগই মানুষই আর্থিক কষ্টে রয়েছেন। তারা দেখছেন ঘোর অন্ধকার।
কৃষি বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতি বিশারদগণ বলছেন, এমনিতেই কৃষিখাতে সরকারের বহুমুখী পরিকল্পনা আছে কিন্তু যখাযথ বাস্তবায়নের অভাব রয়েছে। যার জন্য কৃষিতে শতভাগ সাফল্য আসছে না । সরকারের নির্দেশনাও ছিল কৃষিনির্ভর তৃণমূল অর্থনীতির কাঠামো মজবুত করার। কিন্তু বাস্তবে কৃষির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগের সকল কর্মকর্তা একযোগে আন্তরিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হওয়া এবং সমন্বয়ের অভাবে কৃষকের সার্বিক স্বার্থ সংরক্ষিত হচ্ছে না বলে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। যশোরের শার্শার ডিহির কৃষক মোঃ জসিম উদ্দীন দৈনিক ইনকিলাবকে জানালেন, কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বাস্তবে কৃষকের সমস্যা কোথায়, সমাধানের পথ কি তার খোঁজ খবর তেমন রাখেন না বললেই চলে। কৃষক দিনে দিনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। গ্রামগঞ্জে কৃষির অর্থনীতির উপরই নির্ভরশীল সিংহভাগ মানুষ।
এ অঞ্চলের গ্রামীণ অর্থনীতি মূলত কৃষির উপর নির্ভরশীল। যশোর, খুলনা, মাগুরা, নড়াইল, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া ও মেহেরপুর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এই ১০ জেলায় মোট আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ১৩ লাখ ১৪ হাজার ৬৫ হেক্টর। ভূমিহীন, প্রান্তিক, ক্ষুদ্র, মধ্যম ও বড় চাষীর সংখ্যা প্রায় ২৭ লাখ। অঞ্চলটির সিংহভাগ ভূমি উচু ও বন্যামুক্ত। বিভিন্ন ফসল উৎপাদনের জন্য মাটি সমৃদ্ধ। সূত্র আরো জানায়, এ অঞ্চলে সাময়িক পতিত ও স্থায়ী পতিতসহ অনাবাদী জমি রয়েছে ১ লাখ হেক্টরেরও বেশী জমি। যার পুরোটা আবাদের আওতায় আনার ক্ষেত্রে কোন পরিকল্পনা নেই কৃষি বিভাগের। অর্থনৈতিক অঞ্চল অথচ অবহেলিত হিসেবে পরিচিত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে কৃষিখাতের উন্নয়নে সরকারকে মাষ্টার প্লান করা দরকার। দরকার কৃষকের উৎপাদিত কৃষিপণ্যে ন্যায়্য ও উপযুক্ত মূল্য নিশ্চিত করা। পাশাপাশি কোথায় কি সমস্যা আছে তা চিহ্নিত করে সমাধান করা এবং এনজিও, সুদের কারবারি ও মধ্যস্বত্বভোগীদের লাগাম টেনে ধরা জরুরি। তা না হলে গ্রামীণ অর্থনীতি আরো দুর্বল হয়ে চরম নাজুক অবস্থায় পৌছাবে বলে আশঙ্কা কৃষি অর্থনীতির ধারক বাহকদের।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ