Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তীব্র কালবৈশাখী ঝড় বজ্রসহ শিলাবৃষ্টি মাঝারি তাপপ্রবাহ

দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার শঙ্কা এ মাসে : ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে আম-লিচুর

| প্রকাশের সময় : ৫ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

শফিউল আলম : জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কায় আবহমান বাংলাদেশের ষড়ঋতুর চরিত্র ও বৈশিষ্ট্যগুলো একে একে পাল্টে যাচ্ছে। অতীতে কালবৈশাখী ও বজ্রঝড় হওয়ার পঞ্জিকার ছকে বাঁধা ‘নিয়ম’ ছিল বৈশাখ মাসেই। সেই ছক যাচ্ছে ভেঙে। মধ্য-ফাল্গুন মাসে এসেই গত ফেব্রæয়ারির শেষ দিকে পর পর দুই দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে অকাল কালবৈশাখী ঝড়, শিলাবৃষ্টি ও বজ্রপাত আঘাত হানে। বৈশাখ অগমনের অনেক আগেই চলতি মার্চ মাসে অর্থাৎ ফাল্গুন-চৈত্রের বসন্তকালেই ঋতুর ছক ভেঙে দেশে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার শঙ্কার পূর্বাভাস দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞগণ। পূর্বাভাসে আরও জানা গেছে, মার্চ মাসে মাঝারি থেকে তীব্র আকারের কালবৈশাখী ঝড়, বজ্রসহ ঝড়, শিলাবৃষ্টি এবং মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। যা কৃষি-খামার ফল-ফসল আবাদ ও উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে শিলাবৃষ্টি, বজ্রবৃষ্টির সাথে মাঝারি থেকে তীব্র ধরনের কালবৈশাখী ঝড়ের আশঙ্কা রয়েছে এবং এর কারণে রাজশাহী ও দিনাজপুর অঞ্চলে আম-লিচুর ক্ষয়ক্ষতির শঙ্কা থেকেই যায়।
সমগ্র দেশের আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাস প্রদানের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির বৈঠকে চলতি মার্চ মাসের উপরোক্ত পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। গত ১ মার্চ আবহাওয়া বিভাগের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্র ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক ও কমিটির চেয়ারম্যান সামছুদ্দিন আহমেদ। সমন্বিত এই সভায় আবহাওয়া-জলবায়ু সম্পর্কিত সর্বশেষ তথ্য-উপাত্ত, মডেল-মানচিত্র, আন্তর্জাতিক আবহাওয়া পরিস্থিতি, এল নিনো/ লা নিনা’র অবস্থা ইত্যাদি বিশ্লেষণ করে উপরোক্ত দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাস দেয়া হয়।
এতে আরও জানা গেছে, মার্চ (ফাল্গুন-চৈত্র) মাসে দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলে ১ থেকে ২দিন শিলাবৃষ্টি সেই সাথে মাঝারী থেকে তীব্র ধরনের কালবৈশাখী ঝড় এবং বজ্রপাতের সঙ্গে ঝড় সংঘটিত হতে পারে। দেশের অন্যত্র ৪ থেকে ৫ দিন শিলাবৃষ্টির সাথে হালকা থেকে মাঝারী ধরনের কালবৈশাখী ঝড় এবং বজ্রপাতের সঙ্গে বজ্র-ঝড় সংঘটিত হতে পারে। মার্চ মাসে দিনের বেলায় তাপমাত্রা স্বাভাবিক হারের চেয়ে ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশী থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। বসন্ত মওসুমে এ সময়ের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৩৪ থেকে ৩৬ ডিগ্রি সে.। তাছাড়া এ মাসের শেষের দিকে দেশের পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের উপর দিয়ে একটি মৃদু (৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সে.) থেকে মাঝারি (৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সে.) ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
পূর্বাভাসে জানা গেছে, মার্চ মাসে দেশের প্রধান নদ-নদী সমূহের পানির প্রবাহ স্বাভাবিক থাকবে। মাসজুড়ে সার্বিকভাবে স্বাভাবিক হারে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে পূর্বাভাস অনুযায়ী গত ফেব্রæয়ারি মাসে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে বৃষ্টিপাত হয়েছে কম। এ সময় প্রায় ৭১ শতাংশ কম পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয়েছে। এরমধ্যে বরিশাল বিভাগে কোনো বৃষ্টিপাত হয়নি। রাজশাহী ছাড়া অন্য সবক’টি বিভাগে বৃষ্টিপাত হয় স্বাভাবিকের চেয়ে নীচে। রাজশাহী বিভাগে গত মাসে স্বাভাবিকের তুলনায় ২৬ দশমিক ৬ ভাগ বেশী বৃষ্টিপাত (২২.৬ মিলিমিটার) হয়। তাছাড়া ফেব্রæয়ারিসহ বিগত মাসগুলোতে বৃষ্টিপাতের ক্ষেত্রে ব্যাপক অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। গত জানুয়ারি মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে ৬৫ দশমিক ৪ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়। বিগত ডিসেম্বর’১৭ইং মাসে স্বাভাবিক হারের তুলনায় ৩৮৫ শতাংশ ‘অস্বাভাবিক’ বেশি বৃষ্টিপাত হয়। আবার নভেম্বর’১৭ইং দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ৭০ ভাগ কম বৃষ্টিপাত হয়। অক্টোবর’১৭ইং ৭৬ ভাগ বেশি বৃষ্টিপাত হয়।
এদিকে গত ফেব্রæয়ারি মাসের সার্বিক আবহাওয়া পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন করে উক্ত বিশেষজ্ঞ কমিটির সভায় জানানো হয়েছে, ফেব্রæয়ারি মাসে সারাদেশে স্বাভাবিকের নীচে বৃষ্টিপাত ছাড়াও মাসের প্রথমার্ধে রংপুর বিভাগের উপর দিয়ে হালকা ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। এ সময় (১০ ফেব্রæয়ারি) দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল তেঁতুলিয়ায় ৮.৭ ডিগ্রি সে.। গেল মাসে গড় সর্বোচ্চ এবং সর্বনি¤œ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অপেক্ষা যথাক্রমে ১ ডিগ্রি সে. এবং ০.৯ ডিগ্রি সে. বেশী ছিল। পশ্চিমা লঘুচাপের সাথে পূবালী বাতাসের সংযোগে গত ১০ ফেব্রæয়ারি রাজশাহী, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগের দুয়েক স্থানে হালকা বৃষ্টিপাত, ২৩ ফেব্রæয়ারি সিলেট বিভাগের দুয়েক স্থানে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি এবং ২৫ ও ২৬ তারিখে রাজশাহী, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দুয়েক জায়গায় আগাম কালবৈশাখী ঝড় ও বজ্রঝড় সহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হয়। এ সময় (২৫ ফেব্রæয়ারি রাত ১০ টায়) ময়মনসিংেহে ঝড়ো বাতাসের সর্ব্বোচ্চ গতিবেগ রেকর্ড করা হয় ঘণ্টায় ৯২ কিলোমিটার। বৃষ্টিপাতের দিন সংখ্যা, তাপমাত্রা, কুয়াশা, শৈত্যপ্রবাহ, বজ্রঝড়, কৃষি আবহাওয়া এবং দেশের নদ-নদীর অবস্থা গত ফেব্রæয়ারি মাসের পূর্বাভাসের সাথে সংগতিপূর্ণ ছিল বলে জানায় আবহাওয়া বিভাগ।
হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা
সর্বশেষ আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, আজ (সোমবার) দেশের বিভিন্ন স্থানে হালকা বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে ফাল্গুন মাস তৃতীয় সপ্তাহ অতিক্রম না করতেই দিনের তাপমাত্রা তেঁতে উঠেছে। গতকাল (রোববার) সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যশোরে ৩৬.৬ ডিগ্রি সে. এবং সর্বনি¤œ রাজশাহীতে ১৭.৩ ডিগ্রি সে.। এ সময় ঢাকায় সর্বোচ্চ ও সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল ৩৪.৫ এবং ২৩.২ ডিগ্রি সে.। চট্টগ্রামে ৩১ ও ২২.৬ ডিগ্রি সে.।
আবহাওয়া পরিস্থিতি সম্পর্কে জানা গেছে, পশ্চিমা লঘুচাপের একটি বর্ধিতাংশ হিমালয়ের পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ ও এর সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। খুলনা, রাজশাহী, ঢাকা এবং সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। শেষ রাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের নদ-নদী অববাহিকার কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারী ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় আবহাওয়ার সামান্য পরিবর্তন হতে পারে। এর পরের ৫ দিনে বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে।



 

Show all comments
  • Golam Faruk ৫ মার্চ, ২০১৮, ১:২০ এএম says : 0
    এখন থেকেই দুর্যোগ এর জন্য প্রস্তুতি দরকার।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ