পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নাছিম উল আলম : বরিশাল সিটি করপোরেশনে কর্মকর্তাÑকর্মচারীদের লাগাতার কর্মবিরতি ১০দিন অতিক্রম করলেও সমস্যা সমাধানের কোন সূত্র মেলেনি। টানা এ অচলবস্থার মাঝে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করে ধর্মঘটি এবং নগর প্রশাসন যার যার অবস্থানের কথা জানালেও কোন সমাধান মেলেনি। মেয়র আহসান হাবীব কামাল গত ২৬ ফেব্রæয়ারী এক সংবাদ সম্মেলনে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে দু মাসের বেতন প্রদানসহ জুনের মধ্যে সমুদয় বকেয়া পরিশোধের কথাও জানিয়েছিলেন। বকেয়া বেতনÑভাতা পরিশোধসহ ভবিষ্য তহবিলের অর্থ অবিলম্বে ব্যাংক হিসেবে জমাদানের দাবীতে গত ২২ ফেব্রæয়ারী থেকে বরিশাল সিটি করপোরেশনের কর্মচারীরা প্রতিদিন ৫ ঘন্টার কর্মবিরতি শুরু করে। পরে ধর্মঘটে বেশীরভাগ কর্মকর্তাও যোগ দিয়েছেন। তবে সকাল ৯টা থেকে দুইটা পর্যন্ত ধর্মঘটের কথা বলা হলেও মূলত পুরো নগরভবনই এখন অচল। বেলা ২টার পরেও নগর ভবন ফাঁকাই থাকছে।
গত সেপ্টেম্বর থেকে বরিশাল সিটি করপোরেশনের নিয়মিত পাঁচশতাধিক কর্মকর্তাÑকর্মচারীর বেতনÑভাতা বকেয়া রয়েছে। এ ছাড়া দেড় সহ¯্রাধিক দৈনিক মজুরি ভিত্তিক কর্মচারীদের বেতনও বকেয়া রয়েছে তিন মাস। এর বাইরে নিয়মিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভবিষ্য তহবিলের অনুদানও ১১ মাস বকেয়া পড়ে আছে। বকেয়া বেতনÑভাতা ও ভবিষ্য তহবিলের অর্থ ব্যাংক হিসেবে জমাদানের দাবীতে ২২ ফেব্রুয়ারী থেকে নগর ভবনের কর্মকর্তাÑকর্মচারীরা প্রাথমিক আন্দোলন শুরু করলেও গত দশ দিন ধরে বরিশাল নগর ভবন অচল। ইতোমধ্যে কয়েকজন সিনিয়র কাউন্সিলরের সাথে আন্দোলনকারী কর্মকর্তাÑকর্মচারীদের নেতারা কয়েক দফা বৈঠক হলেও তা ফলপ্রসু হয়নি। আন্দোলনের শুরুতে নগর ভবনের দায়িত্বশীল মহল মার্চের প্রথম সপ্তাহে দু মাসের বকেয়া পরিশোধের কথা বললেও আন্দোলনকারীরা তখন তিন দিনের মধ্যে বকেয়া পরিশোধের দাবী করে। ফলে সব আলোচনা পন্ড হয়ে যায়। ইতোমধ্যে মার্চের প্রথম সপ্তাহ পেরিয়ে যেতে বসলেও কোন বকেয়া পরিশোধ করতে পারেননি নগর প্রশাসন। গত কয়েকদিন ধরে সিটি মেয়র ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ঢাকায় রয়েছেন।
ইতোপূর্বে সিটি মেয়র আন্দোলন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে নগরবাসীর স্বার্থে কাজে ফিরে আসার আবেদন রাখলেও আন্দোলনকারীরা কোন সমঝোতায় আসেননি।
অর্থ সংকটে জর্জরিত বরিশাল সিটি করপোরেশন মাথাভারি প্রশাসন নিয়ে চরম অচলবস্থার মধ্যে প্রশাসনিক ব্যয় মেটাতে পারছে না। দেড়শতাধিক কোটি টাকার দায়দেনা আর মাথাভারি প্রশাসন নিয়ে ২০১৩-এর অক্টোবরে দায়িত্ব গ্রহন করে বর্তমান মেয়র ও নগর প্রশাসন নগরবাসীর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারেনি। পাশাপাশি সাবেক মেয়রের রেখে যাওয়া ৩ মাসের বকেয়ার সাথে বর্তমান নগর প্রশাসনের সময়ে বকেয়া বেড়েছে আরো দুমাস। ভবিষ্য তহবিলের অর্থ জমা হয়নি নিয়মিতভাবে।
তবে এক্ষেত্রে মেয়রসহ নগর প্রশাসনের দাবী, প্রতিমাসে নিয়মিত ৫ শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতার পেছনে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ টাকার মত ব্যয়ের পাশাপাশি আরো দেড় সহ¯্রাধিক দৈনিক মজুরী ভিত্তিক কর্মচারী ও পরিচ্ছন্ন কর্মীর জন্যও প্রায় ১ কোটি ১৫ লাখ টাকার প্রয়োজন। কিন্তু নগরবাসীর করসহ সিটি করপোরেশনের আয় দিয়েই প্রশাসনিক ব্যয়ের ৫০ ভাগও বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে বকেয়া বাড়ছে।
উপরন্তু সরকারী তরফ থেকে উন্নয়ন ব্যয় সহ থোক বরাদ্ধও আশাব্যঞ্জক নয়। একইসাথে দেড় সহ¯্রাধিক দৈনিক মজুরী ভিত্তিক কর্মচারী ও পরিচ্ছন্ন কর্মীর পেছনে যে প্রায় ১ কোটি ১৫ লাখ টাকার মত ব্যয় হচ্ছে, তাদের দুই-তৃতীয়াংশই কোন কাজ না করে বেতন নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। মেয়র নিজেও বার-বারই বরিশাল সিটি করপোরেশনের বর্তমান আর্থিক দৈন্যতার জন্য ‘মাথাভারি প্রশাসন’কে দায়ী করেছেন। তবে তিনি অপ্রয়োজনীয় জনবল হ্রাসে কিছুই করেননি গত সাড়ে ৪ বছরেও। মেয়র মুখে এ বিষয়ে আর কিছু না বললেও শুধু বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরের নেতা হবার কারনেই তাকে গত সাড়ে ৪ বছর মুখ বুজে অনেক কিছুই সহ্য করতে হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই।
তবে আন্দোলনরত কর্মকর্তাÑকর্মচারীদের নেতা দিপক লাল মৃধার মতে, ‘করপোরেশনের রাজস্ব তহবিল থেকে নিয়মিত বেতনÑভাতা পরিশোধ সম্ভব হলেও মেয়র তার পছন্দের ঠিকাদারদের বিল প্রদানেই বেশী ব্যস্ত থাকেন বিধায় দীর্ঘদিনের বেতন বকেয়া রয়েছে’।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের বর্তমান অচলবস্থা দ্রæত নিরসন না হলে তা নগরবাসীর জন্য বড় বিপদ ডেকে আনতে পাড়ে। আগামী জুনের মধ্যেই এ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে মেয়াদের শেষ প্রান্তে এসে একটি মহল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনÑভাতা বকেয়ার বিষয়টি আসন্ন নির্বাচনে পুজি করার চেষ্টা করছে।
এ ব্যাপারে গতকাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে সেল ফোনে আলাপ করা হলে তিনি জানান, আন্দোলনকারীদের সব দাবী মেনে নেয়ার কোন সাধ্য নগর প্রশাসনের নেই। একটি জরুরী জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠানে এভাবে ধর্মঘট করা যায়না বলে জানিয়ে তিনি পুনরায় ধর্মঘটিদের কাজে যোগদানের অনুরোধ করেন। এতে নগর করসমুহ আদায় করে দ্রæত বকেয়া বেতনÑভাতা পরিশোধ করা সম্ভব হবে বলেও জানান তিনি। সর্বশেষ খবর পর্যন্ত বরিশাল সিটি করপোরেশনের বর্তমান অচলবস্থার কোন সুরাহা হয়নি। সংকট সমাধানের কোন দৃশ্যমান উদ্যোগও নেই। নগর ভবনের চলমান অচলবস্থায় নগরবাসীর উদ্বেগ-উৎকন্ঠাও ক্রমশ বাড়ছে। বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে তা নগরবাসীকে এক বছর আগের দূর্ভোগের পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে বলেও উদ্বিগ্ন নগরীর বিশিষ্টজনেরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।