Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিএনপির মানববন্ধন-অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা

খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি

| প্রকাশের সময় : ৫ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। আগামীকাল ৬ মার্চ মঙ্গলবার ঢাকা মহানগরসহ দেশব্যাপী বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত মানববন্ধন এবং আগামী ৮ মার্চ ঢাকা মহানগরসহ দেশব্যাপী বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে দলটি। গতকাল (রোববার) সকালে নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কর্মসূচির কথা জানান সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর নৌকায় ভোট চাওয়ার সমালোচনা করে রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সরকারের মন্ত্রী থেকে শুরু করে আওয়ামী নেতারা নির্বাচনকে সামনে রেখে সকল নিয়ম-নীতি, নির্বাচনী বিধি-বিধান উপেক্ষা করে রাষ্ট্রীয় খরচে ইতোমধ্যে কোমর বেঁধে নির্বাচনী প্রচারাভিযানে নেমে পড়েছেন।
খুলনায় এক সভায় বক্তৃতাকালে জনগণের নিকট নৌকা মার্কায় ভোট চেয়েছেন। নির্বাচনী আইন ভঙ্গ করে প্রধানমন্ত্রীর এই একতরফা নির্বাচনী প্রচারের বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করলেও সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে নির্বাচন কমিশন সচিব এ বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বললেন, তফশীল ঘোষণার আগে এ নিয়ে কমিশনের কিছু করার নেই। করার থাকবে কেন? কিছু করার থাকলে তো কমিশনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পরিণতি হবে সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার মতো। চাকরি হারানোর ভয়ে নির্বাচন কমিশন প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী আচরণ বিধি ভঙ্গের ব্যাপারে নিশ্চুপই থাকতেই হবে। প্রতাপশালী প্রধানমন্ত্রীর কোন আইন মানার দরকার নেই। দেশের সব আইন তাঁর করতলগত। সরকারের উর্দ্ধতন ব্যক্তিবর্গসহ তাদের ঘনিষ্ঠজনরা মহাসাগর চুরির দুর্নীতি করলেও তারা দেশপ্রেমিক ও মহামানবে পরিণত হন। বেসিক ব্যাংক যিনি ডুবিয়েছেন তিনি এখন সাগরে ছয়টি জাহাজ ভাসাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর নিজেদের সততার গল্প ঠাকুরমার ঝুলিকেও হার মানায়। প্রধানমন্ত্রী এমন রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করেছেন যেখানে তিনি সব আইনের উর্ধ্বে অবস্থান করেন। আত্মসম্মানহীন একজন নিপীড়কের হাতে যদি রাষ্ট্র থাকে সেখানে রাষ্ট্রের অন্য কর্মকর্তারা প্রাণভয়ে আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটায়। ডাহা মিথ্যা কথায় পারদর্শী আওয়ামী লীগ আইনের শাসনের শত্রæ। গণতন্ত্র হত্যাই হচ্ছে আওয়ামী লীগের জন্মদাগ।
সরকার ফাঁকা মাঠে গোল দিতে চায় মন্তব্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, একতরফা একচেটিয়া নির্বাচনের চক্রান্তের পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্যই বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে জাল জালিয়াতির নথির ওপর ভিত্তি করে সাজানো মামলায় সাজা দিয়ে কারারুদ্ধ করে নির্বাচনী ফাঁকা মাঠে গোল দিতে চায়। হিংসার সাধ মেটাতেই বেগম জিয়াকে কারারুদ্ধ করা হয়েছে। আইনকে আওয়ামীকরণ করে দেশনেত্রীকে নির্বাচন থেকে দুরে রাখার পাঁয়তারা করছে সরকার। তিনি বলেন, বেগম জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি নির্বাচনী মাঠে থাকলে তো শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ কঠিন অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। সেজন্যই বেগম জিয়াকে আটকাতে এই অবৈধ সরকার নানামুখী কারসাজিতে লিপ্ত রয়েছে। বেগম খালেদা জিয়াকে ছাড়া বাংলাদেশে কোন নির্বাচন হতে দেয়া হবে না জানিয়ে রুহুল কবির রিজভী বলেন, জনতার মিছিল চারিদিক থেকে নিঃশব্দ পায়ে এগিয়ে আসছে। জনগণকে ধোঁকা দেয়ার বিদ্যা আওয়ামী লীগ যেভাবে রপ্ত করেছে সেই বিদ্যা মানুষ ধরে ফেলেছে। শেখ হাসিনার উচ্চাভিলাষের কাছে কেউ নতজানু হবে না। আওয়ামী একতরফা নির্বাচনের বিজয় মুকুট জনগণ ধুলোয় লুটিয়ে দেবে।
সরকার নির্বাচনী মাঠ অসমতল রাখার জন্য বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও নির্যাতন করছে অভিযোগ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, দেশব্যাপী বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতাসহ হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে কারাগারে পুরে রেখেছে, গ্রেফতারের পর রিমান্ডের নামে চালানো হচ্চে অমানুষিক নির্যাতন। আজিজুল বারী হেলাল, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন এবং রাজিব আহসানকে রিমান্ডে আনা হয়েছে এবং তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে। এক দফা রিমান্ড শেষ হওয়ার সাথে সাথে অন্য একটি মিথ্যা মামলায় আবারো রিমান্ড আবেদন এবং আদালতে তা মঞ্জুরের ঘটনা প্রমাণ করে বিচার-প্রশাসন সবকিছুই সরকারের পকেটে। বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে কাশিমপুর-৪ হাই সিকিউরিটি জেলের একটি সংকীর্ণ নির্জন কক্ষে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। মেঝে থেকে ছাদের উচ্চতা মাত্র তিন ফিট। এরই ভেতরে একটি ছোট্ট অংশ টয়লেট ও গোসলের জন্য ব্যবহার করতে হয়। হাই সিকিউরিটি কারাগারটি তৈরী করা হয়েছে বিপজ্জনক জঙ্গী বা সন্ত্রাসীদের জন্য। অথচ সেখানেই বিএনপি’র সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও নেতাদের রাখা হচ্ছে। এক ভয়ঙ্কর অহসনীয় পরিবেশের মধ্যে আলালকে থাকতে দেয়া হয়েছে। তার সেলে কোন আলো বাতাস ঢুকতে পারে না। এক হাড়হিম করা ভুতুড়ে পরিবেশ যেখানে না আছে পানি, না আছে বিদ্যূৎ। অথচ কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় জেলে উচ্চ শ্রেণীর ডিভিশন কক্ষগুলিতে ব্যাংকের টাকা লুটপাটকারী ডিজিএম-এজিএমদের জামাই আদরে রাখা হয়েছে। শেখ হাসিনার আমলে বিরোধী রাজনীতিবিদরা এভাবেই সরকারী নিষ্ঠুর আচরণের শিকার হচ্ছেন কারাগারের বাইরে ভেতরে সর্বত্র। তিনি আললের ওপর সরকারের নির্দেশে কারাকর্তৃপক্ষের পাশবিক আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। এ সময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা এম এ মালেক, আবদুস সালাম আজাদ, মুনির হোসেন, আবুল হোসেন ও আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ