Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাফর ইকবালের ওপর হামলা ধর্মান্ধদের কাজ : প্রধানমন্ত্রী

মানুষ খুন করে কেউ বেহেশতে যেতে পারে না

প্রকাশের সময় : ৫ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম | আপডেট : ৫:৫৮ পিএম, ৫ মার্চ, ২০১৮

স্টাফ রিপোর্টার : সন্তানদের অজ্ঞতার অন্ধকার থেকে মুক্ত রাখতে এবং এ বিষয়ে তাদের সচেতন করে গড়ে তুলতে অভিভাবক-শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে একযোগে কাজ করার আহŸান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মানুষ খুন করে কেউ বেহেশতে যেতে পারে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, গতকাল একটা অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে গেছে। সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ড. জাফর ইকবালের ওপর হামলা করা হয়েছে। তাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আনা হয়েছে। তার অবস্থা এখন অনেকটা ভালো। কিন্তু যে হামলাটা হলো, যারা হামলা করলো, এরা কারা? হামলাকারী কারা এটা হামলার ধরণ থেকেই স্পষ্ট হয়ে গেছে। যারা এ ঘটনাগুলো ঘটায়, তারা ধর্মান্ধ হয়ে গেছে। তারা ভাবে যে তারা বেহেশতে যাবে, কিন্তু আসলে তারা দোজখে যাবে। কারণ, মানুষ খুন করে কেউ বেহেশতে যেতে পারে না। গতকাল রবিবার বিজ্ঞানী ও গবেষকদের অনুদান প্রদান উপলক্ষে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। 

শেখ হাসিনা বলেন, যারা এই ঘটনাগুলো ঘটায় তারাতো ধর্মান্ধ। অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল একটা অনুষ্ঠানে বসে ছিলেন, সেখানে তাকে ছুরি মারা হয়েছে। তিনি বলেন, তিনি সাথে সাথে এয়ার ফোর্সের হেলিকপ্টার পাঠিয়ে তাকে (অধ্যা. জাফর ইকবাল) ঢাকা সিএমএইচ এ নিয়ে আসেন উন্নত চিকিৎসার জন্য। জাফর ইকবালের অবস্থা এখন অনেকটাই স্টেবল, ভালো। সরকার প্রধান বলেন, যারা এই ঘটনাগুলি ঘটায় তারা মনে করে একটা মানুষ খুন করলেই বুঝি তারা বেহেশতে চলে যাবে। তারা কোনদিন বেহেশতে যাবে না। তারা দোজখের আগুনে পুড়বে এতে কোন সন্দেহ নেই। কারণ নিরীহ মানুষকে হত্যা করলে কেউ বেহেশতে যেতে পারে না। তিনি বলেন, তাহলে তারা এই অন্ধত্বে ভুগছে কেন? যদিও আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই দেশে কোনরকম সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ আমরা চলতে দেব না। মাদকের বিরুদ্ধেও আমরা অভিযান চালাচ্ছি। আমাদের শিক্ষক, অভিভাবক, মসজিদের ইমাম থেকে শুরু করে অন্যান্য ধর্মের প্রত্যেককে যেখানেই যাচ্ছি সেখানেই সকলের প্রতি আমি জঙ্গিবাদ বিরোধী আহŸান জানাচ্ছি।
ছেলে-মেয়েদের যেন বাবা-মায়ের সঙ্গে একটা ভালো সম্পর্ক হয়, বাবা-মাকে সন্তানরা মনের কথা খুলে বলতে পারে পরষ্পরের মধ্যে সে ধরনের একটা মানসিক যোগাযোগ থাকা প্রয়োজন বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ছেলে-মেয়েরা বড় হবার সময় একেক বয়সে তাদের একেক রকম মানসিক বৃদ্ধি ঘটে। সেই বিষয়টির প্রতিও বাবা-মাকে নজর দেয়ার, বাবা-মা’কে আরো সহনশীল হবার এবং ছেলে-মেয়েরা যেন বিপথে না যায় তার প্রতি লক্ষ্য রাখার জন্যও তিনি বাবা-মা, অভিভাবক, শিক্ষকদের প্রতি আহŸান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের এত মেধাবী ছেলে-মেয়ে তারা যেন কেউ বিপথে না যায় সেটাই আমরা চাই। কারণ দেশকে আমাদের সেভাবে গড়ে তুলতে হবে। আমরা আর পিছিয়ে যাব না। সামনের দিকে এগোবো এবং বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলবো।
বাংলাদেশের বিপুল সমুদ্র সম্পদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে বিজ্ঞানী ও গবেষকদের প্রতি আহŸান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে বিপুল সমুদ্র সম্পদ রয়েছে। বøু-ইকোনমির এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে। এ জন্য বিজ্ঞানী ও গবেষকদের নতুন নতুন গবেষণা এবং উদ্ভাবনে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, সমুদ্র সম্পদ রক্ষায় পদক্ষেপ নিয়েছি। যা আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজে লাগবে। চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমুদ্র বিজ্ঞান বিষয়ে পাঠদান করা হচ্ছে। 
কক্সবাজারে সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিউট প্রতিষ্ঠার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সমুদ্রপাড়ে একটি সি অ্যাকুরিয়াম গড়ে তুলবো। এটি গবেষণায় যেমন প্রয়োজন, তেমনি পর্যটক আকর্ষণেও ভূমিকা রাখবে। গবেষণার জন্য সরকারের জাহাজ ক্রয়সহ বিভিন্ন উদ্যোগের তথ্যও তুলে ধরেন তিনি।
গবেষণায় সরকারের নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের পাট তো ধ্বংস করেই দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সেখান থেকে পাটকে আমরা বহুমুখী করার চেষ্টা করছি। গবেষণা করে পাটের জিনোম উদ্ভাবন করা হয়েছে। ধানের গবেষণা করা হচ্ছে। বস্ত্রের উন্নয়নে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বিভিন্ন ইনস্টিটিউট গঠন করা হয়েছে, যারা এসব ক্ষেত্রের উন্নয়নে কাজ করছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের পরমাণু কমিশন রয়েছে, যা জাতির পিতা করে দিয়ে গিয়েছিলেন। বর্তমানে আমরা পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ছি। এজন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লোকবল দরকার। সেভাবে ট্রেনিংও দেয়া হবে। পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিরাপত্তার জন্য বিজ্ঞানী ও গবেষক দরকার। কয়েকটা ধাপে এর নিরাপত্তা থাকবে। আমরা সেভাবেই পদক্ষেপ নিয়েছি।
বাংলাদেশ স্যাটেলাইট যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সমুদ্রের তলদেশে (নেভীর সাবমেরিন) গিয়েছি, স্যাটেলাইটও উৎক্ষেপণ হবে। অচিরেই যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার অরল্যান্ডোতে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হবে ।
‘বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ অন সাইন্স এন্ড আইসিটি’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় আমরা গঠন করেছি ‘বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ ট্রাস্ট’। জাতীয় পর্যায়ে দক্ষ ও বিশেষ যোগ্যতাসম্পন্ন বিজ্ঞানী, প্রযুক্তিবিদ ও গবেষক তৈরিই এ ট্রাস্টের উদ্দেশ্য। তিনি বলেন, ফেলোশিপ ছাড়াও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে এমফিল, পিএইচডি ও পিএইচডি-উত্তর পর্যায়ে ছাত্রছাত্রী ও গবেষকগণের মধ্যে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ প্রদান করা হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০২১ সালের আগেই ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠার সকল উদ্যোগ সম্পন্ন করেছি। আগামী দিনে আমাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি। প্রযুক্তিনির্ভর, জ্ঞানভিত্তিক, দারিদ্র্যমুক্ত, মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ গড়ার উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়নে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থেকে কঠোর পরিশ্রম করি এবং সৎ পথে থাকি তবে, ইনশাল্লাহ জয় আমাদের অনিবার্য।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ডা. আ ফ ম রুহুল হক। অনুষ্ঠানে ১১৬ জনকে বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ, ২৩৫৮ জনকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ (এনএসটি) এবং ১৪১টি প্রকল্পকে গবেষণা অনুদান প্রদান করা হয়। টোকেন হিসেবে ২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের হাতে ফেলোশিপ ও অনুদানের চেক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।



 

Show all comments
  • Rajib Biswas ৫ মার্চ, ২০১৮, ৬:৩৩ এএম says : 0
    Akdom thik kotha bolesen
    Total Reply(0) Reply
  • Ashraf Hossain ৫ মার্চ, ২০১৮, ১২:৫৬ পিএম says : 0
    ঠিক বলেছেন।
    Total Reply(0) Reply
  • Sumon ৫ মার্চ, ২০১৮, ১:২৭ পিএম says : 0
    আল্লাহ - মানুষ হত্যা কারীর , তার পরিকল্পনারারী এবং তার নির্দেশ দাতার বিচার এ দুনিয়াতে তুমি দেখিয় দিও , আমিন
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ নূরে আলম ৫ মার্চ, ২০১৮, ৩:৪৮ পিএম says : 0
    যে কোনো লোকের উপর হামলা হলে তার বিচার হোক আমরা চাই কারন আইনের শাসনে আমরা বিশ্বাস করি আদালকে আমরা শদ্ধা করি। ...
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ