Inqilab Logo

সোমবার, ০৮ জুলাই ২০২৪, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ০১ মুহাররম ১৪৪৬ হিজরী

প্রত্যেক বাড়িতে টিনের ঘর তৈরি করে দেয়া হবে

খুলনার জনসভায় প্রধানমন্ত্রী

আবু হেনা মুক্তি | প্রকাশের সময় : ৪ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১:৩৬ এএম, ৪ মার্চ, ২০১৮

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপির সমলোচনা করে বলেছেন, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় যাওয়ার লোভে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছেন। আওয়ামী লীগ উৎখাতের নামে তিনি গত নির্বাচনের আগে ৩ মাস অফিসে বসে বিরিয়ানী খেয়েছেন আর মানুষ পুড়িয়ে মারার হুকুম দিয়েছেন। তার নেতৃত্বে ৫শ’ জন মানুষকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। সাড়ে তিন হাজার মানুষ আগুনে পুড়ে আহত হয়েছে। বিএনপি ক্ষমতায় আসলে মানুষ হত্যা করে আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে দেশের উন্নয়ন হয়। বিএনপি-জামায়াত ধ্বংস করতে জানে, সৃষ্টি করতে জানে না। তিনি বলেন, আমরা কমিউনিটি ক্লিনিক করে দিয়েছিলাম তারা ক্ষমতায় এসে তা বন্ধ করে দেয়। খুলনার শেখ আবু নাসের হাসপাতালও তারা বন্ধ করে দেয়। আর আওয়ামী লীগ দেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যেতে চায়। বাংলাদেশের একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না, সবাইকে ঘরবাড়ি তৈরি করে দেয়া হবে। প্রত্যেক বাড়িতে কমপক্ষে একটি করে টিনের ঘর তৈরি করে দেয়া হবে।
গতকাল শনিবার দুপুরে খুলনা সার্কিট হাউস ময়দানের জনসভায় বক্তৃতাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। খুলনা জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হারুনুর রশীদের সভাপতিত্বে জনসভায় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ছাড়াও খুলনা, গোপালগঞ্জ, সাতক্ষীরা, যশোর, বাগেরহাটসহ বিভিন্ন জেলার নেতৃবৃন্দ ও সংসদ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসায় দেশের দারিদ্র্যতা কমেছে। প্রতিটি উপজেলায় ফায়ার স্টেশন নির্মাণ, বন্ধ কলকারখানা চালু, বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, রাস্তা-ঘাট, পুল-ব্রিজ নির্মাণ, মোংলা বন্দর পর্যন্ত রেললাইন প্রকল্প বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ৬৮ লাখ মা-বোন ভাতা পাচ্ছে। স্কুল শিক্ষার্থীদের বই কিনতে হয় না, বিনা পয়সায় জানুয়ারির ১ তারিখে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়া হয়।
কমিউনিটি ক্লিনিক চালু, খুলনায় বিশেষায়িত হাসপাতাল চালু, পল্লী সহায়ক ব্যাংক, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, যুবসমাজের জন্য ভোকেশনাল ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা, বিদেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা ও প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ঋণের মাধ্যমে বিদেশ যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সার-বীজ কৃষকদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে। ১ কোটি কৃষককে ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খুলে দিয়েছি। শিশুকে স্কুলে পাঠালে মায়ের নামে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে উপ-বৃত্তির টাকা পাঠানো হচ্ছে। মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট সহজলভ্য করা হয়েছে।
খুলনা বিভাগের প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের সকল সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তারা ১ দিনের বেতন দিয়ে ফান্ড তৈরি করে খুলনাকে ভিক্ষুক মুক্ত করেছে। যারা ভিক্ষা করত তাদেরকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ আর ভিক্ষা করবে না। তারা নিজেদের পায়ে দাঁড়াবে। আমরা দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।
বিএনপি সরকারের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা ক্ষমতায় এসে মংলা বন্দর বন্ধ করে দিয়েছিল, মিল-কলকারখানা বন্ধ করে দিয়েছিল। আমরা এগুলো চালু করেছি। খুলনাঞ্চলে বিএনপির আমলে নিহত মঞ্জুরুল ইমামসহ বিভিন্ন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদ কঠোর হস্তে দমন করেছি।
দেশের উন্নয়নের জন্য নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার জন্য জনসভার নারী পুরুষদের ওয়াদা করিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের মধ্যে উন্নত দেশ। আমরা বিজয়ী জাতি। বিজয়ী জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে বিশ্বসভায় চলতে আমরা উন্নয়ন কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। তারই অংশ হিসেবে খুলনার ১০০ উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মার্চ মাস আমাদের ঐতিহাসিক মাস। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের দিন। ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন। ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আমাদের বাঙালি জাতির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারপর আমাদের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। আমরা বিজয়ী হই। বিজয়ী জাতি হিসেবে আজ বাংলাদেশ বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। আমাদের সরকার দেশের উন্নয়নে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। আপনারা জানেন, পদ্মাসেতু থেকে যশোর, খুলনা, বাগেরহাট হয়ে মোংলা বন্দর পর্যন্ত রেলসেবা চালুর উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছি আমরা।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া দুর্নীতি করেছে, আদালতের রায়ে সে কারাগারে, আমাদের কিছুই করার নেই। অপরাধী যেই হোক তাকে শাস্তি পেতে হবে। দুর্নীতি করলে সাজা পেতেই হবে।
খুলনার উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে তিনি আরো বলেন, খুলনার মানুষের জন্য আমার নির্বাচনী সকল ওয়াদা পূরণ করেছি। এছাড়া ভোলার গ্যাস খুলনা ও বরিশালে বিতরণ করা হবে। ২০২১ সালের মধ্যে খুলনা বিভাগসহ সারাদেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের ছেলে মেয়েরা লেখাপড়া শিখে একটি সুশিক্ষিত জাতি গড়ে তুলবে। এরই জন্য আমরা শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে ১ জানুয়ারি মধ্যেই প্রত্যেক শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছিয়ে দিয়েছি। তাদেরকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছি, ১০ লাখ লোককে বিদেশ পাঠিয়েছি, জনশক্তি রফতানি করেছি এবং দেশে দেড় কোটি লোককে চাকরি দিয়েছি। বেসরকারি খাত উন্মুক্ত করেছি। আমার যখন ক্ষমতায় এসেছি তখন বিদ্যুৎ ছিল ১৬শ’ মেগাওয়াট। দিনের পর দিন মানুষ বিদ্যুৎ পায়নি। লোডশেডিং অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল দেশবাসী। আমার ক্ষমতায় আসার পর ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছি। আমরা পরমাণুবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র আমরা তৈরি করে দিচ্ছি, যেখানে গ্রীড নাই সেখানে সোলার প্যানেল দিয়ে বিদ্যুৎ সাপ্লাই করছি। প্রত্যেকটি ঘরে ঘরে আলো জ্বালাতে চাই। ২০২১ সালের মধ্যে সব ঘরে আলো জ্বালাবো।
এর আগে গতকাল শনিবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে খুলনার খালিশপুরের ঈদগাহ ময়দানে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশের (আইইবি) জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর ডাকে দেশ স্বাধীন হয়েছিল। তার ৭ মার্চের ভাষণের মাধ্যমে বাঙালি জাতিকে দেশ স্বাধীনের জন্য উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। স্বাধীনতার পর নতুন দেশ দাঁড়িয়েছিল একটি ধ্বংস্তূপের ওপর। জাতির জনক মাত্র সাড়ে তিন বছর সময়ের মধ্যে দেশের হার্ডিং ব্রিজসহ বড় বড় ব্রিজ নির্মাণ, রাস্তা ঘাট উন্নত ও ঘর বাড়ি নির্মাণ এবং অসহায় পরিবারগুলোকে আর্থিক সহায়তা করেছিলেন। আহত মুক্তিযোদ্ধা ও নির্যাতিত মা বোনদের চিকিৎসা এবং পুনর্বাসন করেছিলেন। ভারতকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, স্বাধীনতার সময় তারা কাধে কাধ মিলিয়ে আমাদের দেশকে স্বাধীন করে দিয়েছিল। গেরিলা যোদ্ধাদেরকে ট্রেনিং দিয়ে আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল ভারত।
কৃষক-মজদুর নয়, শিক্ষিত শ্রেণিই দুর্নীতি করে বলে এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর একটি মন্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির জনকের নির্দেশিত পথ মেনেই আমরা চলছি। আমাদের সরকার দুর্নীতি, সন্ত্রাস, মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। মানুষ যেন আইনের শাসনের সুযোগ-সুবিধা পায়, সেজন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছি।
বিএনপি-জামায়াত সরকারের দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা ক্ষমতায় থাকাকালে আইনের শাসনের অভাবে পাঁচ পাঁচবার সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে স্থান পেয়েছিল বাংলাদেশ। আজ দুর্নীতি উৎখাত করে দুই ধাপ এগিয়েছি আমরা। বিশ্বসভায় উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছি।
সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতো বড় বাজেট আমরা নিয়েছি, বাজেটে এতো উন্নয়ন প্রকল্প আর কোনো সরকার নিতে পারেনি। গ্রামপর্যায়ে আমরা উন্নয়নের পরিকল্পনা নিয়েছি। যেন তৃণমূল থেকে উন্নয়নটা উঠে আসে। আমরা জনগণের সেবক, এ বিষয়টি মাথায় রেখে উন্নয়নের কাজ করছি। সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমের ফল জনগণ ভোগ করছে।
খুলনায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মিলনমেলা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভাস্থল গতকাল দুপুর ১টার আগেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। উৎসব আমেজে সকাল থেকেই প্রধানমন্ত্রীর এ জনসভা অভিমুখে হাজার হাজার নারী-পুরুষের স্রোত নামতে থাকে। মহানগরী ছাড়াও বিভাগের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা ও গ্রামাঞ্চল থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ যোগ দেন জনসভায়। জনসভাকে কেন্দ্র করে খুলনা শহর পরিণত হয় মিছিলের নগরীতে। যেন খুলনায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মিলনমেলা। দেখে মনে হয়েছিল খুলনার সব পথ এসে মিশেছে সার্কিট হাউজ মাঠে। দলীয় নেতাকর্মীদের স্লোগানে প্রকম্পিত হয় জনসভার আশপাশ।
রূপসা পাড়ের লাখো মানুষের প্রাণের উচ্ছাসের কোনো কমতি ছিল নেই। জনসভায় অংশ নিতে আসা অনেকের হাতে ছিল নৌকা প্রতীক। দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও এসেছিল মিছিল। এছাড়া খুলনা, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, নড়াইল, যশোর ও সাতক্ষীরা থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী বাস-ট্রাকযোগে জনসভায় আসে। নেতাকর্মীরা ব্যানার ফেস্টুনসহ বিভিন্ন রং-ঢং এ জনসভায় যোগ দেন। খুলনা প্রচন্ড খরতাপেও নেতাকর্মীরা শৃঙ্খলার সাথে জনসভাকে জনসমুদ্রে রূপদেয়। এদিকে মহানগরীর রাস্তা ঘাট ও প্রবেশদ্বারগুলোতে শত শত তোরণ নির্মিত হয়।



 

Show all comments
  • SHAUKAUT ৪ মার্চ, ২০১৮, ৩:০০ এএম says : 0
    desher sharthe ei awamilig shorkarke khomotay rakhte jobe nahoy amra pichiee jabo dhormo o mot zar zar kintu deshti shobar tai desher unnoyon dorkar.dhonnobad from venezuela.
    Total Reply(0) Reply
  • সাব্বির ৪ মার্চ, ২০১৮, ৫:০৫ এএম says : 0
    আমরা ওয়াদা শুনতে চাই না বাস্তবায়ন দেখতে চাই।
    Total Reply(0) Reply
  • Nannu chowhan ৪ মার্চ, ২০১৮, ১০:১৫ এএম says : 0
    Banglar manush shoboi jane ke ki korbe age sushto totttnirbachon dia dekhon ebong eaitai desher jonno o jonogoner jonno uttom,dhonnobad
    Total Reply(0) Reply
  • কামাল ৪ মার্চ, ২০১৮, ৪:১১ পিএম says : 0
    দয়া করে একটা সুষ্ঠ নির্বাচন দিন, তাহলেই হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ