Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফিরে দেখা স্বাধীনতার মাস

| প্রকাশের সময় : ৪ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ফারুক হোসাইন
আজ ৪ মার্চ। ’৭১-এ মুক্তিপাগল বাঙালির দিনটি কেটেছে বিক্ষুব্ধ শোভাযাত্রা, গায়েবানা জানাজা, সভা ও স্বাধীনতার শপথ নেয়ার মধ্য দিয়ে। তবে এর আগে থেকেই প্রতিদিন একটু একটু করে বদলে যাচ্ছিল দৃশ্যপট। বেগবান হয়ে উঠছিল মুক্তি আন্দোলন। ঘর ছেড়ে পথে নেমেছিল নানা শ্রেণী-পেশার, নানা বয়সের মানুষ। অগ্নিঝরা মার্চের ১ থেকে ৪ তারিখের মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন তিন শতাধিক ছাত্র-জনতা। এতে ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে স্বাধীনতাকামী মানুষ। হত্যা নির্যাতন বন্ধে পাকিস্তানিদের হুঁশিয়ার করে দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ঐতিহাসিক ১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। ঢাকায় সাময়িকভাবে কার্ফ্যু তুলে নেয়া হলেও চট্টগ্রাম, খুলনা ও রংপুরে তা বলবৎ থাকে। ঢাকা বিমান বন্দরে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। খুলনায় হরতাল পালনকালে নিরস্ত্র জনতার ওপর সেনাবাহিনীর বিক্ষিপ্ত গুলিবর্ষণে ৬ জন নিহত হয় ও ২২ জন আহত হয়। চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর গুলিবর্ষণে ৩ ও ৪ মার্চে সর্বমোট ১২০ জন নিহত ও ৩৩৫ জন আহত হয়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দেশব্যাপী তাÐব ও হত্যার প্রতিবাদে ঢাকাসহ সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল ও নিহতদের গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
৪ মার্চ মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এক বিবৃতিতে লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে সাত কোটি বাঙালির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের দাবি জানান। বিবৃতিতে তিনি বলেন, কংগ্রেস, খেলাফত, মুসলিম লীগ, আওয়ামী লীগ ও ন্যাপের মাধ্যমে আন্দোলন করেছি। কিন্তু এই ৮৯ বছর বয়সে এবারকার মতো গণজাগরণ ও সরকারের অগণতান্ত্রিক ঘোষণার বিরুদ্ধে এমন সংঘবদ্ধ বিক্ষোভ আর দেখিনি।
এ রকম পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু তার বাসভবনে আওয়ামী লীগের এক মুলতবি সভায় ভবিষ্যৎ কর্মসূচি ব্যাখ্যা করে সংগ্রামের নতুন দিক নির্দেশনায় বলেন, আজ আওয়ামী লীগ নয় গোটা বাঙালি জাতিই অগ্নিপরীক্ষার সম্মুখীন। আমাদের সামনে আজ দুটো পথ খোলা আছে। একটি সর্বাত্মক ত্যাগ স্বীকারের জন্য নিজেদের মনোবল অটুট রেখে অবিচলভাবে পূর্ণ স্বাধীনতার পথে এগিয়ে যাওয়া অথবা ভুট্টো ইয়াহিয়ার কথামতো সবকিছু মেনে নেয়া। তিনি নেতৃবৃন্দের উদ্দেশে বলেন, আপনারা জানেন, আমি সারা জীবন ক্ষমতার মসনদ তুচ্ছ জ্ঞান করে দেশ ও জাতির কাছে আমার জীবন মর্টগেজ রেখেছি। বাংলার মানুষ গুলি খেয়ে বন্দুকের নলের কাছে বুক পেতে দিয়ে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার ফাঁসিকাষ্ঠ থেকে আমাকে মুক্ত করে এনেছে। আমার ৬ দফা কর্মসূচির প্রতি ম্যান্ডেট দিয়েছে। এখন শহীদের আত্মত্যাগের প্রতি অশ্রদ্ধা জানিয়ে পাকিস্তানিদের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করতে অবমাননাকর শর্তে কী করে ক্ষমতায় যাই। তাই বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের মধ্যে সারাদেশে ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের কাঠামো তৈরির নির্দেশ প্রদান করেন। বঙ্গবন্ধু হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, আর যদি এক ফোটা রক্ত ঝরে, বাংলার মানুষকে হত্যা করা হয়, তবে সব দায়দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে। তিনি বলেন, বাংলার মানুষকে হত্যা করে স্বাধিকার আন্দোলন ঠেকিয়ে রাখা যাবে না। এদিকে দেশব্যাপী লাগাতার মানুষ হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। দেশের শিল্পী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজের মানুষ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে শেখ মুজিবুর রহামানের ঘোষিত কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন। বিক্ষুব্ধ শিল্পীসমাজ রেডিও পাকিস্তান ঢাকা কেন্দ্রের নতুন নামকরণ করেন ‘ঢাকা বেতার কেন্দ্র।’ পাকিস্তান টেলিভিশনের নাম পাল্টে ‘ঢাকা টেলিভিশন’ নাম দিয়ে অনুষ্ঠান স¤প্রচারিত হতে থাকে। এদিন প্রবীণ সাহিত্যিক-রাজনীতিক আবুল মনসুর আহমদের আহবানে পাকিস্তান সরকারের দেয়া খেতাব ও তকমা বর্জন করেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, মুনীর চৌধুরী, শিক্ষাবিদ ইব্রাহীম খাঁ, কবি আহসান হাবীব, কথাশিল্পী জয়েনউদ্দিনসহ অনেকেই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: স্বাধীনতা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ